২৬/১১র হামলার সবথেকে বড় শিক্ষা হল ভবিষ্যতে এই ধরনের হামলা থেকে বাঁচার জন্য শুধু প্রস্তুত হওয়া নয়, বরং আমাদের আশেপাশে বাসা বেঁধে থাকা সন্ত্রসবাদ ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংসকরার কৌশল অবলম্বন করা।
ডঃ শেশাদ্রি চারি, ১৪ বছর আগে এই দিনে অর্থাৎ ২৬/১১তে বাণিজ্যিক নগরী মুম্বইতে সন্ত্রাসবাদী হামলা ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধের থেকে কম ছিল না। চার দিন ধরে বিভিন্ন স্থানে হামলা চলতে থাকে। ভয়ঙ্কর সেই জঙ্গি হামলায় একদিকে যেমন কেঁপে উঠেছিল গোটা দেশ, অন্যদিকে হামলায় মৃত্যু হয়েছিল ৩০০ জনে। আহতের সংখ্যাও ছিল প্রচুর।
মুম্বই হামলার এর বছর পরে ২০০৯ সালে এইএস সেনেটর হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সম্পর্কিত ইউনাইটেড কমিটি হামলা নিয়ে একটি শুনানি করে জানিয়েছিল পরিকল্পিতভাবে ভারতের হামলা করা হয়েছিল। হামলার ব্যপকতা তীব্রতা ওর গুরুত্ব সম্পর্কেও আলোচনা হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছিল হামলাকারীরা সন্ত্রাসবাদীদের থেকেও ভয়ঙ্কর ছিল। তারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি ট্রেনিং প্রাপ্ত কমান্ডো ইউনিট থেকে বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ পেয়ে তবেই এই দেশে এসেছিল। এদের উদ্দেশ্যই চিল ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা।
বছরের পর বছর ধরে অপ্রচলিত হুমকি উপলব্ধি দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এজাতীয় সমন্বিত হুমকির তুলনায় আমাদের অভ্যন্তরীন নিরাপত্তার প্রয়োজন অনেক বেশি। 'ভারত আফগানিস্তান ওভারল্যাপিং সশস্ত্র সংঘাত ও সন্ত্রাসবাদী অভুযান পাকিস্তান একটি বিশিষ্ট ও সমস্যাযুক্ত ভূমিকা পালন করে চলেছে...' মার্কিন কমিটিপ কার্যপ্রণালী উদ্বেগের সঙ্গে উল্লেখ করে চলেছে।
তবুও এটা পরিহাসের বিষয় যে স্টেট ডিপার্টমেন্ট ইসলামাবাদের দুর্বল রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে অস্ত্র দিয়েই চলেছে। যেগুলি দেশের শক্তিশালী সেনাবাহিনী, নন-স্টেট অ্যাক্টর ও আইএসআই-এর কাছ থেকে কম আর কোন ইনসুলেশন নেই।
মুম্বই জঙ্গি হামলার পর থেকে ১৪ বছর একটি জাতীয় নিরাপত্তা নীতি তৈরি করা হচ্ছে। এটা খুবই আশ্চর্যজনক যে কংগ্রস এই হামলার ১৪ বছর পরে এখনও পর্যন্ত কোনও মন্তব্য করেনি। সন্ত্রাসবাদী হামলার সময় রাজ্য ও কেন্দ্র শাসক দল হিসেবে এই দলটি গোয়েন্দা তথ্য হাতে পেত। কিন্তু তারপরেও এজাতীয় হামলা প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয়েছিল।
এমনকি এই আক্রমণের ব্যপকতা ও ফলাফলের তদন্ত করা হলেও কংগ্রেসের কিছু যোগ্য ব্যক্তি আক্রমণের জন্য বিজেপি ও আরএসএসকে দায়ি করে অত্যান্ত বিভ্রান্তিকর ও ঘৃণ্য মন্তব্য প্রচার করেছিল। তাতে পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী প্রতিষ্ঠাকে কোনও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
কংগ্রেস পার্টি এখন যা করতে পারে তা হল এই উপাদানগুলিকে দল থেকে সরিয়ে দেওয়া ও দায়িত্বজ্ঞানহীন ও সংবেদনশীল মন্তব্যের জন্য দেশের কাছে ক্ষমা চাওয়া।
যদিও গান্ধী পরিবারের একজন সদস্য দেশজু়ড়ে পদযাত্রা করছে। সেই যাত্রা থেকেই হামলার ভয়াবহতার কথা স্মরণ করা আর পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদী হামলা চালিয়ে যাওয়ার জন্য নিন্দা করা ও জাতীয় নিরাপত্তা কর্মসূচিতে সরকারের সঙ্গে ঐক্যমত স্থাপন করা।
২৬/১১র হামলার সবথেকে বড় শিক্ষা হল ভবিষ্যতে এই ধরনের হামলা থেকে বাঁচার জন্য শুধু প্রস্তুত হওয়া নয়, বরং আমাদের আশেপাশে বাসা বেঁধে থাকা সন্ত্রসবাদ ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংসকরার কৌশল অবলম্বন করা।
কেন্দ্রীয় সরকারের উচিৎ একটি জাতীয় নিরাপত্তা নীতি তৈরির চেষ্টা করা যাতে সমন্বিত নিরাপত্তা স্থাপত্যের মাধ্যমে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সমন্বিত হুকমি মোকাবিলা করা যায়।
লেখক ফোরাম ফর ইন্টিগ্রেটেড ন্যাশানাল সিকিউরিটি -র মহাসচিব ও ইংরেজি সাপ্তাহিক অর্গানাইজারের প্রাক্তন সম্পাদক।