কোনও কোনও রাজ্যে বাজি ফাটানো পুরো নিষিদ্ধ
কোথাও বা কোনও বাধাই নেই
কেউ আবার ফাটাতে দিচ্ছে তবে বিধিনিষেধের আওতায়
কোভিড পরিস্থিতিতে বাজি ফাটানো নিয়ে কোন রাজ্য কী বলেছে
দুর্গাপূজায় ভয় ছিল ভিড়ের। মোটের উপর দিয়ে সেই যাত্রা রক্ষা পেলেও সামনে রয়েছে দীপাবলি, কালী পূজা এবং ছট পূজা - উৎসবের পর উৎসব। কোভিড মহামারির পরিপ্রেক্ষিতে ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল বা এনজিটি সোমবার অর্থাৎ ৯ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর অবধি বাজি-পটকা বিক্রি ও ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। বেশ কয়েকটি রাজ্য অবশ্য এই বিষয়ে আগে থেকেই এই বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। দেখে নেওযা যাক এই বিষয়ে কোন রাজ্য কী বলেছে -
রাজস্থান:
বাজি বিক্রি ও ফাটানোয় সর্বপ্রথম নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল কংগ্রেস শাসিত রাজস্থান। গত রবিবারই (১ নভেম্বর) রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট এই বিষয়ে নির্দেশিকা দিয়েছেন। শুধু এই উত্সবের মরসুমেই নয়, বিবাহ এবং অন্য যে কোনও অনুষ্ঠানেই তারা বাজি নিষিদ্ধ করেছে। রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী কোভিড পরিস্থিতিতে সব ধরণের দূষণকারী জিনিসই না ব্যবহার করার জন্য নাগরিকদের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন। এমনকী ধোঁয়া পরীক্ষায় অযোগ্য প্রমাণিত যানবাহনের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ওডিশা:
রাজস্থানের পর গত মঙ্গলবার (৩ নভেম্বর) ওড়িশা সরকার-ও বায়ু দূষণ রোধে দীপাবলির সময়ে রাজ্যে বাজি বিক্রি ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। এই নিষেধাজ্ঞা ১০ থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। কেউ এই আইন ভাঙলে তাকে বিপর্যয় মোকাবিলা আইন, ২০০৫ এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক আইনের বিধি অনুযায়ী শাস্তি দেওয়া হবে।
দিল্লি:
এমনিতেই পঞ্জাবের কৃষকদের খড় পোড়া ধোঁয়ায় জাতীয় রাজধানি এবং সংলগ্ন ফরিদাবাদ, নয়ডা, গুড়গাঁও এবং গাজিয়াবাদের বায়ু দূষণ বিপজ্জনক জায়গায় চলে গিয়েছে। এই অব অবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই দিল্লি সরকার ৭-৩০ নভেম্বরের সমস্ত রকম আতশবাজি বিক্রি ও ব্যবহার নিষেদ্ধ করেছে। দিল্লির পরিবেশমন্ত্রী গোপাল রাই সোমবার (৯ নভেম্বর) বলেছেন, কেউ পটকা ফাটালে তাকে বায়ু (দূষণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ) আইনের আওতায় দন্ডিত করা হবে। তাতে দেড় থেকে ছয় বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
পশ্চিমবঙ্গ:
পশ্চিমবঙ্গে সবই হয় আদালতের নির্দেশে। এই ক্ষেত্রেও গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) কলকাতা হাইকোর্টের আদেশ অনুসারে, কালী পূজা, ছট ও কার্তিক পূজায় বাজি ব্যবহার ও বিক্রয় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছেন দুর্গাপূজার সময় ভিড় রোধে যে নির্দেশিকাগুলি কার্যকর করা হয়েছিল, কালি পূজাতেও তা কঠোরভাবে মানতে হবে।
কর্ণাটক:
দেশের বাজি বাজারের ১৫ শতাংশই কর্ণাটকের। বিজেপি-শাসিত কিন্তু তারপরেও কর্ণাটকের বিএস ইয়েদুরাপ্পা সরকার গত শুক্রবার (৫ নভেম্বর) ঘোষণা করেছে চলতি বছর দীপাবলিতে বাজি-পটকা ফাটানো যাবে না। সাংবাদিকদের কাছে একই কথা জানিয়েছেন।
ছত্তিশগড়:
ছত্তিশগড় সরকার অবশ্য বাজি ব্যবহারে বাকি রাজ্যগুলির মতো ততটা কঠোর নয়। 'সবুজ' বলে পরিচিত আতশবাজি শুধু দীপাবলি নয়, বড়দিন এবং নববর্ষের সময়ও ফাটানো যাবে। তবে তা ফাটাতে হবে রাজ্যের যেসব জায়গার বায়ুর গুণমান ভালো সেইসব জায়গায়। উৎসবের দিনগুলিতে এমনি বাজিও ফাটানো যাবে, প্রতিদিন দুই ঘন্টা করে -
দীপাবলি - রাত ৮ টা থেকে ১০ টা
ছট পূজা - সকাল ৬ টা থেকে ৮ টা
গুরুপূরব - রাত ৮ টা থেকে ১০ টা
নিউ ইয়ার ও ক্রিসমাস - রাত ১১:৫৫ থেকে রাত ১২.৩০
চণ্ডিগড়:
কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল চণ্ডিগড়েও উত্সবের মরসুমে বাজিপটকা বিক্রি ও ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
মধ্যপ্রদেশ:
মধ্যপ্রদেশে বাজি পটকার নিষেধাজ্ঞাটি ভারি অদ্ভূত। মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান ঘোষণা করেছেন রাজ্যে এমনিতে কোনও বাজি বিক্রি বা ব্যবহার নিষিদ্ধ নয়। তবে চিনা পটকা এবম হিন্দু দেবদেবীদের ছবিযুক্ত বাজি বিক্রি করা বা ফাটানোর অনুমতি দেওয়া হবে না।
মুম্বই:
কোভিড বিধ্বস্ত মহারাষ্ট্রের সরকার রাজ্যে বাজি পটকা না ফাটানোর বিষয়ে কোনও নির্দেশিকা জারি না করলেও রবিবার (৮ নভেম্বর) বৃহন্মুম্মই পুর কর্পোরেশন মুম্বই শহরের সরকারি বা বেসরকারি কোনও জায়গাতেই পটকা ফাটানো যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। আইন লঙ্ঘনকারীদের কড়া শাস্তি পেতে হবে।
হরিয়ানা:
প্রাথমিকভাবে, ৬ নভেম্বর বিজেপি-শাসিত হরিয়ানা বাজি বিক্রি সম্পূর্ণ নিষেদ্ধ ঘোষণা করেছিল। তবে ৮ নভেম্বর, সেই নির্দেশ পাল্টে যায়। মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর দীপাবলির রাতে দু'ঘন্টার জন্য পটকা বিক্রি ও ফাটানোর অনুমতি দিয়েছেন।
সিকিম:
উত্তর পূর্বের ছোট্ট রাজ্য সিকিমেও বাজি বিক্রি ও ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষেদ্ধ করা হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলা আইন, ২০০৫ এর আওতায় এই নির্দেশ জারি করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত তা বলবৎ থাকবে।