১৯৯০ সালে সোমনাথ থেকে অযোধ্যা অভিমুথে রথযাত্রায় বেরিয়েছিলেন লালকৃষ্ণ আডবাণী। তবে মাঝপথেই সেই রথযাত্রা বন্ধ করতে হয়েছিল। তারপর ৩০ বছরের প্রতীক্ষা। অবশেষে নিজের স্বপ্ন সফল হতে দেখছেন বিজেপির প্রবীণ এই নেতা। ভূমিপুজোয় আমন্ত্রণ না পেয়েও রাম মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের আগের দিন স্মৃতি রোমন্থন করতে দেখা গেল প্রবীণ এই রাজনীতিকে। আডবাণী জানান, তিনি বিশ্বাস করেন, রামমন্দির ভারতকে এক শক্তিশালী, সমৃদ্ধশালী, সম্প্রীতিতে ভরা দেশ হিসাবে তুলে ধরবে যেখানে সবাই ন্যয়বিচার পাবে, কাউকে বাইরে রাখা হবে না যা সুশাসনের পরাকাষ্ঠা রামরাজ্য নিয়ে আসবে।
রাম জন্মভূমি আন্দোলনের অন্যতম কান্ডারি ছিলেন দেশের প্রাক্তন উপপ্রধানমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আডবাণী ও মুরলী মনোহন যোশী। কিন্তু রামন্দিরের ভূমি পুজোয় এই দুই প্রবীণ নেতাই আমন্ত্রণ পাননি। তবে ভূমিপুজোর আগের রাতে আডবাণী বিবৃতিতে বললেন, রামমন্দির শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবে। যেখানে কেউ ‘বহিষ্কৃত’ থাকবে না। সকলের জন্যই ন্যায় হবে। রামমন্দির নিয়ে মুখ খুলে সেই শিষ্টাচারের কথাই পরোক্ষে বললেন আডবাণী।
আরও পড়ুন: রাম মন্দিরের ভূমিপুজো উপলক্ষে সেজেছে সরযূর তীর, ৩ লক্ষ প্রদীপ জালিয়ে আজ হবে ছোট দীপাবলি
রাম মন্দির ট্রাস্টের তরফে যুক্তি দেওয়া হয়েছে ভূমি পুজোর জন্য ছাপানো কার্ড শুরু অযোধ্যার বাসিন্দাদেরই পাঠানো হয়েছে। কিন্তু ভদ্রতার খাতিরেও আডবাণীর কাছে কোনও আমন্ত্রণ, টেলিফোন গেল না কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। করোনা সঙ্কটের সময়ে এমনিতেই বয়সের কারণে আডবাণীর ভিড় এড়িয়ে চলা উচিত। কিন্তু আডবাণী শিবিরের মত, শিষ্টাচার ও সম্মানের খাতিরেই আডবাণীর কাছে আমন্ত্রণপত্র যাওয়া উচিত ছিল।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ভূমিপুজোর আগের দিনই আডবাণী রামের বর্ণনায় সেই শিষ্টাচারের প্রসঙ্গই টেনে এনেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘শ্রীরামের স্থান ভারতীয় সংস্কৃতি ও সভ্যতার কাঠামোয় সর্বোচ্চ। তিনি বিনয়, মর্যাদা ও শিষ্টাচারের মূর্ত রূপ।’’ প্রশ্ন উঠেছে, কাকে এই বার্তা দিতে চাইছেন বিজেপির আয়রণ ম্যান!
বুধবার রাম জন্মভূমি আন্দোলনের পাঁচ প্রধান চরিত্র, লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলীমনোহর জোশী, কল্যাণ সিংহ, উমা ভারতী ও বিনয় কাটিয়ার কেউই হয়ো ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের সময় থাকবেন না। যদিও উমা, কল্যাণ ও বিনয় আমন্ত্রিতের তালিকায় ছিলেন। উমা জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি অযোধ্যায় গেলেও সংক্রমণ এড়াতে এবং প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্যের কথা ভেবে মূল অনুষ্ঠানের সময় যাবেন না। কাটিয়ার অযোধ্যায় থাকলেও তাঁকে কোনও দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। আর কল্যাণ সিংহকে আয়োজকেরা বুঝিয়ে দিয়েছেন, বয়সের কথা ভেবে ভিড়ভাট্টার মধ্যে না যাওয়াই ভাল। তবে আডবাণীর মতই জোশীর কাছেও অযোধ্যার অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ পৌঁছয়নি। কোনও টেলিফোন বা ই-মেলও যায়নি।
৯২ বছরের আডবাণীর গলায় এরপরেও প্রতীক্ষার অবসানের কথা। স্বপ্ন পূর্ণ হতে চলার কথা। তাঁর কথায়, ‘‘জীবনের কিছু স্বপ্ন পূর্ণ হতে সময় লাগে। কিন্তু যখন তা চরিতার্থ হয়, তখন মনে হয় প্রতীক্ষা সার্থক হল।’’ যে স্বপ্ন সারাজবীন ধরে আডবাণী ও যোশীরা দেখেছেন তা এদিন টিভির পর্দায় দেখেই সার্থক করতে হবে বিজেপির দুই প্রবীণ নেতাকে।