প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে ১২৪৮ এর আপ মেইন লাইনের সিগন্যাল দেওয়া হয়েছিল। টেকঅফ করা হয়েছিল। কিন্তু ট্রেনটি একটি লুপ লাইনে প্রবেশ করে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় ওড়িশার বালেশ্বরের তিনটি ট্রেনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। রেল কর্তাদের কথায় গত বিশ বছরে এমন দুর্ঘটনা দেখেনি ভারত। কিন্তু এই দুর্ঘটনার আসল কারণ কী? বিস্তারিত রিপোর্টের জন্য কমিটি গঠন করেছে রেলমন্ত্রক । কিন্তু দুর্ঘটনার দ্বিতীয় দিনেই প্রকাশিত হয়েছে প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট। যেখানে মূলত সিগনাল ব্যবস্থাকেই দায়ী করা হয়েছে। প্রাথিমিক তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, করমণ্ডল এক্সপ্রেস মূল লাইনের পরিবর্তে লুপ লাইনে প্রবেশ করেছিল। আগে থেকেই সেখানে দাঁড়িয়েছিল একটি পণ্যবাহী ট্রেন বা মালগাড়ি। করমণ্ডল এক্সপ্রেস ও যশবন্তপুর এক্সপ্রেস- দুটি যাত্রীবাহী ট্রেনের সংঘর্ষে এখনও পর্যন্ত কমপত্রে ২৮০ জন নিহত হয়েছে। ৯০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছে।
প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে ১২৪৮ এর আপ মেইন লাইনের সিগন্যাল দেওয়া হয়েছিল। টেকঅফ করা হয়েছিল। কিন্তু ট্রেনটি একটি লুপ লাইনে প্রবেশ করে। আপ লুপ লাইনে আগে থেকেই মালগাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল। সেটিকে ধাক্কা মেরে লাইনচ্যুত হয়। এই দুর্ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যেই ১২৮৬ ডাউন অর্থাৎ যশবন্তপুর এক্সপ্রেস মেইন লাইনে চলে আসে। করমণ্ডলের দুটি লাইনচ্যুত বগিকে ধাক্কা মেরে সেটির পাঁচটি বগি লাইনচ্যুত হয়।
ভারতীয় রেলওযে লুপ লাইনগুলি তৈরি করে যেকোনও স্টেশন সংলগ্ন এলাকা। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে বেশি সংখ্যক ট্রেন ও ইঞ্জিন যাতায়াত করে। সাধারণ এই লাইনগুলির দৈর্ঘ্য হয় ৭৫০ মিটার। রিপোর্টে অনুমান করা হয়েছে করমণ্ড এক্সপ্রেস যাওয়ার জন্য মালগাড়িটিকে লুপ লাইনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছিল। দূরপাল্লার এক্সপ্রেস ট্রেন হওয়ায় করমণ্ডলকে মেইন লাইন দিয়ে যাওয়ার জন্য সিগনার দেওয়া হয়। কিন্তু ট্র্যাকগুলি করমণ্ডল এক্সপ্রেসকে লুপ লাইনের দিকে নিয়ে গিয়েছিল। যেখানে আগে থেকেই দাঁড়িয়ে ছিল মালগাড়ি।
রিপোর্টে বলা হয়ে মালগা়ড়ির সঙ্গে ধাক্কায় করমণ্ডল এক্সপ্রেসের কয়েকটি কারমা লাইনচ্যুত হয়। কারমাগুলি যে ট্র্যাকে পড়েছিল সেখান দিয়েই যায় যশবন্তপুর এক্সপ্রেস। তাতেই দুর্ঘটনা মারাত্মক আকার নেয়। রিপোর্টে বলা হয়েছে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের গতি ছিল ঘণ্টায় ১২৮ কিলোমিটার। আর যশবন্তপুর এক্সপ্রেসের গতি ছিল ১১৬ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা। প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট রেলওয়ে বোর্ডের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে।
ওড়িশার বালেশ্বরে ভয়ঙ্কর ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত্যের সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে। রেস সূত্রের খবর এখনও পর্যন্ত কমপক্ষে ২৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহতের সংখ্যা শতাধিক। তিনটি ট্রেনের সংঘর্ষে এই ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা ঘটে। যাইহোক দুর্ঘটনার পর থেকেই গোটা ঘটনার দায়ভার মাথায় নিয়ে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব পদত্যাগ করুন -এমনটাই দাবি তুলেছে বিরোধীরা। শনিবার সন্ধ্যায় বিরোধীদের দাবি উড়িয়ে দিয়ে রেল মন্ত্রী জানিয়ে দিলেন 'এখন রাজনীতির সময় নয়, পুনরুদ্ধারের কাজে মননিবেশ করার সময়।' যার অর্থ আপাতত তিনি পদত্যাগ করবেন না।