মদ চলবে, গোমাংস নয় - প্রশাসক হয়ে এসেই বিজেপি নেতার আজব সংস্কার, অশান্ত লাক্ষ্মাদ্বীপ

লাক্ষ্মাদ্বীপের প্রশাসক প্রফুল প্যাটেল

সম্প্রতি একগুচ্ছ সংস্কার আনার প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি

যা নিয়ে অশান্ত কেন্দ্রশাসিত দ্বীপরাজ্যটি

সংস্কারের নামে ঠিক কী করছেন বিজেপি নেতা

Asianet News Bangla | Published : May 25, 2021 5:30 PM IST

'শিব ঠাকুরের আপন দেশে, আইন-কানুন সর্বনেশে'। এমনই অবস্থা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাক্ষ্মাদ্বীপের। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে এই দ্বীপের প্রশাসক হিসাবে নিযুক্ত করা হয়েছিল গুজরাতের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা প্রফুল প্যাটেলকে। আর তারপর থেকে একের পর এক বিতর্কে জড়িয়েছেন নতুন প্রশাসক। এবার এক কয়েক দফা বিষয় নিয়ে নতুন সংস্কার আনতে চলেছেন তিনি। স্থানীয়রা যাকে বলেছে 'জনবিরোধী'। ক্রমে অশান্ত হয়ে উঠছে এই ছিমছাম দ্বীপরাজ্য। স্থানীয় প্রশাসনের ডানা ছাঁটা থেকে দ্বীপরাজ্যে মদ চালু করা, বা গো-মাংস নিষিদ্ধ করা - সংস্কারের নামে ঠিক কী করতে চাইছেন প্রফুল প্যাটেল, আর কেনই বা তাই নিয়ে এত বিতর্ক? আসুন দেখা যাক।

ভারতের অন্যান্য অনেক রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের তুলনায় লাক্ষ্মাদ্বীপের অপরাধের হার খুবই কম। অথচ, লাক্ষ্মাদ্বীপের প্রশাসক প্রফুল প্যাটেল এই দ্বীপে 'অসামাজিক কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০২১' বা 'গুন্ডা আইন' কার্যকর করার প্রস্তাব দিয়েছেন। স্থানীয়দের আশঙ্কা, এই আইন আসলে বিনা বিচারেই গ্রেফতারির পথ সুগম করবে।

এতদিন শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিষেবা, কৃষি, পশুপালন ও মৎসপালন-এর মতো বিষয়গুলি সম্পর্কে এর আগে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ছিল নির্বাচিত জেলা পঞ্চায়েতগুলির। কিন্তু, নতুন প্রস্তাবে স্থানীয় এই প্রশাসনিক ক্ষমতাগুলির নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রীয় প্রশাসকের করায়ত্ব হচ্ছে। শুধু তাই নয়, নতুন প্রস্তাবে পঞ্চায়েতের বিধিমালাতেও পরিবর্তন আসবে। বলা হয়েছে, দুই এর বেশি সন্তান আছে, এমন কোনও ব্যক্তি পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না।

লাক্ষ্মাদ্বীপ মুসলিম অধ্যূষিত। মুসলিম জনসংখ্যার বাহুল্যের কারণে এই দ্বীপ অ্যালকোহলহীন। অর্থাৎ, গুজরাত রাজ্যের মতোই এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে মদ বিক্রি করা এবং পান করা নিষিদ্ধ। অথচ গুজরাতের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রফুল প্যাটেল, প্রশাসক হয়ে এসে এই দ্বীপের মদ বিক্রির বার খোলার বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছেন। কারণ হিসাবে তিনি বলেছেন, পর্যটনে উৎসাহ দিতে চান। আবার এর পাশাপাশিই তিনি গো-মাংস নিষিদ্ধও করেছেন। অঙ্গনওয়াড়ি শিশুদের খাবারের তালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন আমিষ খাবার।

শুধু তাই নয়, এই দ্বীপের অধিকাংশ বাসিন্দাই পর্যটন ও মাছ ধরার উপর নির্ভর করেন। অথচ, নয়ী প্রস্তাব কার্যকর হলে পর্যটন ক্ষেত্রের বহু সরকারি কর্মচারীই বিনা কারণে কর্মহীন হয়ে পড়বেন। উপকূলীয় নিয়ন্ত্রণ অঞ্চল আইন আনা হয়েছে, যার বলে জেলেদের ঝাঁপ ভেঙে দেওয়া হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেইসঙ্গে পার্শ্ববর্তী রাজ্য কেরলের সঙ্গে এই দ্বীপের দীর্ঘস্থায়ী বাণিজ্য সম্পর্কের অবসান ঘটিয়ে প্রফুল প্যাটেল দ্বীপের সমস্ত পণ্যসম্ভারকে ম্যাঙ্গালোরে পাঠানোর ব্যবস্থা করছেন।

এই নিয়ে, লাক্ষ্মাদ্বীপ এবং কেরলের বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক দল তো বটেই, পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়াতেও বহু মানুষ প্রফুল প্যাটেলের সমালোচনা করেছেন। লাক্ষ্মাদ্বীপের সাংসদ তথা এনসিপি নেতা মহম্মদ ফয়জল, কেরল কংগ্রেসের টিএন প্রতাপন, সিপিএম-এর এলমরাম করিম এবং মুসলিম লিগের ইটি মহম্মদ বশির কেন্দ্রকে চিঠি লিখে প্রফুল প্যাটেলকে প্রশাকের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন। প্রফুল প্যাটেলের বিরুদ্ধে 'স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থা' চালানোর অভিযোগ উঠছে। এতে করে লাক্ষ্মাদ্বীপের জনগণের মধ্যে উদ্বেগ এবং তার ফলে ব্যাপক বিক্ষোভ তৈরি হয়েছে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে অবস্থা হাতের বাইরে চলে যেতে পারে।

 

Share this article
click me!