কার্যত তান্ডব চালিয়েছে ঘূর্ণিঝড় তৌকতাই। তার মাঝে পড়ে প্রায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল তিনটি বার্জ। বার্জগুলিতে প্রায় ৫৯৯ জন ছিলেন। বোম্বে হাইয়ের কাছে তৈল খনি এলাকায় অবস্থান করছিল বার্জগুলি। সোমবার দুপুরেই বার্জগুলি থেকে বিপদ সংকেত পেয়ে উদ্ধারকার্যে যায় ভারতীয় নৌবাহিনী। শতাধিক মানুষকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। বুধবার ভারতীয় নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে জানান হয় এখনও পর্যন্ত ৯৭ জন নিখোঁজ রয়েছেন। ১৪ জনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে আরব সাগর থেকে।
বিভীষিকাময় সেই রাতের কথা সংবাদমাধ্যমের সামনে তুলে ধরেছেন বেঁচে ফিরে আসা এক শ্রমিক। তিনি জানিয়েছেন কীভাবে ১২ ঘন্টা ধরে মাঝ সমুদ্রে বাঁচার জন্য যুদ্ধ চালিয়ে গিয়েছেন তিনি। মনোজ গীতে নামের ওই শ্রমিক জানান সামনে তখন ১০ মিটার উঁচু ঢেউ। প্রচন্ড ঝোড়ো হাওয়া। বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন তাঁরা। তাঁদের বার্জটা ক্রমশ ডুবছিল। মৃত্যুকে যেন চোখের সামনে প্রত্যক্ষ করছিলেন তখন।
মনোজ বলেন বাড়ি ফেরার, বেঁচে ফেরার সব আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন তাঁরা। তখনই ভারতীয় নৌসেনার আইএনএস কোচি তাঁদের এক এক করে উদ্ধার করে। ওই বার্জে ২৭৩ জন ছিলেন। ১৮৪ জনকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়। মনোজ একা প্রায় ৭-৮ ঘন্টা সাঁতার কেটেছেন বাঁচার জন্য। তাঁর শুধু একটাই চিন্তা ছিল কীভাবে প্রাণে বাঁচা যায়।
১৯ বছরের গীতে কোলাপুরের বাসিন্দা। তিনি জানান, যখনই ওই বার্জটা ডুবতে শুরু করে, কোনও রকমে একটা লাইফ জ্যাকেট পরে জলে ঝাঁপ দেন তিনি। এপ্রিল মাসেই শ্রমিক হিসেবে বার্জে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। এই প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে তিনি নিজের মোবাইল ফোন, সব গুরুত্বপূর্ণ নথি হারিয়ে ফেলেন। তবে আর কখনও নিজের কাজের জায়গায় ফিরে যেতে রাজী নন মনোজ। প্রাণে বেঁচে ফিরে এসেছেন, আর ঝুঁকি নিতে চান না বলে সাংবাদিকদের জানিয়ে দেন মনোজ।
আবহাওয়া দফতর জানিয়েছ মুম্বইয়ের ওপর দিয়ে প্রায় ১১৪ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বয়েছে। প্রবল জলোচ্ছাসও হয় আরব সাগরে। আরব সাগরে আটকে পড়া দুটি বার্জ থেকে শতাধিক মানুষকে উদ্ধার করে ভারতীয় নৌবাহিনী। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে ভয়ঙ্কর এই ঘূর্ণী ঝড় মাঝরাতে শক্তি হারিয়েছে। কিন্তু তারপরেও প্রবল বৃষ্টি হয়েছে মহারাষ্ট্র, গুজরাতের উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে।