এই বছর করোনার জেরে সমস্ত উৎসবই ফিকে পড়ে যাচ্ছে। বাদ যায়নি রথযাত্রাও। প্রথমে সুপ্রিম কোর্ট থেকে পুরীর জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। যদিও পরে সেই নির্দেশ বদল করে শীর্ষ আদালত জানিয়ে দেয় কোনো রকম ভক্ত সমাগম ছাড়াই হবে এই বছরের রথযাত্রা। রথযাত্রা যেমন বাঙালিদের কাছে এক বিশাল বড় উৎসব। তেমনি ওড়িয়াদের কাছেও রথযাত্রা এক বিশেষ স্থান রয়েছে। আর হবে নাই বা কেন, দেশের সবথেকে বড় রথযাত্রা উৎসব তো পুরীর জগন্নাথ মন্দির থেকেই হয়।
দ্বাদশ শতকে তৈরি পুরীর জগন্নাথ মন্দির থেকে জগন্নাথ দেব, বলরাম ও সুভদ্রা এই তিন দেব-দেবীর বার্ষিক মাসির বাড়ি যাওয়ার উৎসবই হল রথযাত্রা। তাদের মাসির নাম গুন্ডিচা দেবী। রথের দিন এই তিন দেবদেবীকে তাদের মাসির বাড়ি দেবী গুন্ডিচার মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হয়।
ছবিতে দেখুন: ভক্ত ছাড়াই এবার পথে নামলেন জগন্নাথ, রশি টানলেন করোনা নেগেটিভ সেবায়েতরা
ওড়িশার প্রাচীনতম রথযাত্রা উৎসব এই জগন্নাথ মন্দিরের রথযাত্রা এবং প্রায় ৩ কিলোমিটার পথ ধরে এই যাত্রা সম্পন্ন হয় । লক্ষ লক্ষ ভক্ত প্রতিবছর রথের দিন আসেন পুরীতে এই মহান দৃশ্যের সাক্ষী হতে। কিন্তু এই বছর করোনার জেরে সেসব একেবারেই বন্ধ। পুরী রথযাত্রা উৎসব শেষ হয় ৯ দিন পর যখন জগন্নাথদেব, বলরাম ও সুভদ্রা আবার পুরীর মন্দিরে ফিরে আসেন। সেই যাত্রাকে বলা হয় বাহুদা যাত্রা।
আরও পড়ুন: শাটডাউনের শ্রীক্ষেত্রে অবশেষে মাসির বাড়ির পথে জগন্নাথ দেব, রথ টানছেন সেবায়েতরা
রথের দিন পাহন্ডি দিয়ে শুরু হয় উৎসব। পাহন্ডি-র অর্থ হল তিন দেবদেবীর মূর্তিকে একটি শোভাযাত্রা করে নিয়ে গিয়ে রথে অধিষ্ঠিত করা হয়। জগন্নাথ দেবের রথের নাম নন্দী ঘোষ, বলরামের রথের নাম তালধ্বজ ও সুভদ্রার রথের নাম পদ্মধ্বজ। সেই শোভাযাত্রার সময় চারিদিকে এক মনোরম পরিবেশের সৃষ্টি হয়। ঘন্টা, কাহালি মাহুরি, পাখোয়াজ, মর্দাল ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্রের সম্মিলিত আওয়াজে তখন মুখরিত থাকে চারপাশ। দেবদেবীর মূর্তি রথে অধিষ্ঠিত করবার পর শুরু হয় রথযাত্রা। রথকে টেনে নিয়ে যান সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষ। এখানে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে যে কেউ রথের দড়ি স্পর্শ করে টেনে নিয়ে যেতে পারেন। এটাই পুরী রথযাত্রার মাহাত্ম্য।
রথের দিন মন্দির ছেড়ে গুন্ডিচা মন্দিরে মাসির বাড়িতে যান জগন্নাথ ৷ জানা যায় গুন্ডিচা ছিলেন রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের স্ত্রী ৷ ইন্দ্রদ্যুম্নই পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা ৷