বিপিন রাওয়াত সহ সেনার চার উচ্চপদস্থ অফিসারকে নিয়ে ভেঙে পড়ে ভারতীয় সেনার কপ্টার। সূত্রের খবর সিডিএস বিপিন রাওয়াতের স্টাফ এবং পরিবারের সদস্যরাও এই এমআই-সিরিজ হেলিকপ্টারটিতে ছিলেন।
ভারতের চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ (CDS) জেনারেল বিপিন রাওয়াত (Bipin Rawat) সহ সেনার (Indian Army) চার উচ্চপদস্থ অফিসারকে নিয়ে ভেঙে পড়ে ভারতীয় সেনার কপ্টার (Helicopter Crash)। সূত্রের খবর সিডিএস বিপিন রাওয়াতের স্টাফ এবং পরিবারের সদস্যরাও এই এমআই-সিরিজ হেলিকপ্টারটিতে ছিলেন। তামিলনাড়ুর কোয়েম্বাটোর এবং সুলুরের মধ্যে এক জায়গায় কপ্টারটি ভেঙে পড়ে।
সেনা সূত্রে জানান হয় জেনারেল বিপিন রাওয়াতের এদিন ডিফেন্স সার্ভিসেস স্টাফ কলেজে ফ্যাকাল্টি ও ছাত্রদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেওয়ার কথা ছিল। সেই উদ্দেশ্যেই তিনি রওনা দিয়েছিলেন। কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই তাঁর মৃত্যু হয়।
৮ই ডিসেম্বর, ২০২১
ভারতীয় বিমান বাহিনীর এমআই -১৭ হেলিকপ্টারটি ১৪ জনকে নিয়ে যাচ্ছিল। যারমধ্যে ৯ জন যাত্রী ছিলেন। আর পাঁচ জন ক্রু সদস্য ছিলেন। দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ তামিলনাড়ুর কুনুরে ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে সেনা চপারটি। সেই চপারে ছিলেন সস্ত্রীক সেনা সর্বাধিনায়ক বিপিন রাওয়াত সহ মোট ১৪ জন। ভারতীয় বিমান বাহিনীর (Indian Air Force) পক্ষ থেকে জানানো হয় কপ্টার দুর্ঘটনায় সিডিএস বিপিন রাওয়াতসহ ১৩ জন যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। বিপিন রাওয়াতের সঙ্গে ভারতীয় বায়ু সেনার বিমানে ছিলেন তাঁর স্ত্রীও। তিনিও মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন বায়ু সেনা। নীলগিরির জঙ্গলে আচমকাই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে বায়ু সেনার এমআই -১৭ হেলিপক্টারটি।
বায়ু সেনার পক্ষ থেকে জানানো হয়, চপার দুর্ঘটনায় একমাত্র জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে এয়ারফোর্স গ্রুপ ক্যাপ্টেনকে। গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় তাঁর চিকিৎসা চলছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় বার্তা দিয়ে বায়ুসেনা বলেছে, গভীর দুঃখের সঙ্গে জানান হচ্ছে জেনারেল বিপিন রাওয়াত ও তাঁর স্ত্রী মধুলিকা রাওয়াতের মৃত্যু হয়েছে চপার দুর্ঘটনায়। সঙ্গে আরও ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। চপারে মোট ১৪ জন যাত্রী ছিল।
হেলিকপ্টারটি নীলগিরি পাহাড়ের সুলুর বিমান ঘাঁটি থেকে ওয়েলিংটনের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল। দুপুর ১১টা ৪৫ মিনিটে টেকঅফ করেছিল। উড়ানের ১০ মিনিটের মধ্যেই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। দুপুর ২টো নাগাদ বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকে দুর্ঘটনার কথা জানানো হয়।
৯ ডিসেম্বর, ২০২১
বিপিন রাওয়াতের কপ্টার ভেঙে দুর্ঘটনার তদন্তে নয়া মোড় মেলে। দুর্ঘটনার পরের দিন বৃহস্পতিবার তদন্তকারীরা বিধ্বস্ত ভারতীয় বায়ুসেনার Mi-17V5 হেলিকপ্টার থেকে ব্ল্যাক বক্স (black box) উদ্ধার করেন। ফ্লাইট রেকর্ডার নামে পরিচিত ব্ল্যাক বক্সটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনার আগে চূড়ান্ত মিনিটের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিতে পারে বলে মনে করেন তদন্তকারীরা। সরকারি সূত্র জানায়, তদন্তকারীরা দুর্ঘটনাস্থলের ৩০০ মিটার থেকে এক কিলোমিটার পর্যন্ত অনুসন্ধান করেন। এরই মাঝে উদ্ধার হয় ভেঙে পড়া কপ্টারটির ব্ল্যাক বক্স।
১০ই ডিসেম্বর, ২০২১
পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় নয়াদিল্লির ব্রার স্কোয়ার শ্মশানে সম্পন্ন হয় ভারতের প্রথম চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ, জেনারেল বিপিন রাওয়াতের শেষকৃত্য। হিন্দু ধর্ম মতে জেনারেল রাওয়াত ও তাঁর স্ত্রী মধুলিকা রাওয়াতের শেষ কাজ করেন তাঁদের দুই কন্যা কৃতিকা এবং তারিণী। দেশের প্রথম সেনা সর্বাধিনায়ক বিপিন রাওয়াত ও তাঁর স্ত্রী মধুলিকাকে একই চিতায় পাশাপাশি রাখা হয়েছিল। প্রোটোকল অনুসারে জেনারেল বিপিন রাওয়াতকে ১৭টি বন্দুকের স্যালুট দেওয়া হয়। উপস্থিত ছিলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং, বেশ কয়েকটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, তিন বাহিনীর উচ্চপদস্থ অফিসার এবং প্রাক্তন সেনা আধিকারিকরা।
এদিন বিভিন্ন উচ্চপদস্থ আধিকারিক-সহ ৮০০ জনের বেশি সশস্ত্র বাহিনীর কর্মী উপস্থিত হয়েছিলেন ব্রার স্কোয়ারে। উপস্থিত ছিলেন তিন বাহিনীরই প্রধান - সেনা প্রধান জেনারেল এমএম নারাভানে, নৌসেনা প্রধান অ্যাডমিরাল জেনারেল আর হরি কুমার এবং বায়ুসেনা প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল বিবেক রাম চৌধুরি, ছিলেন ডিআরডিও প্রধান ডক্টর জি সতীশ রেড্ডিও। শেষ শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত হল বেশ কয়েকজন প্রাক্তন সেনা প্রধান, প্রাক্তন বায়ুসেনা, নৌসেনা প্রধানরা। শেষ শ্রদ্ধা জানান দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীরা। শেষ শ্রদ্ধা জানান কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধীও।
১১ই ডিসেম্বর, ২০২১
হিন্দু প্রথা মেনেই বাবা ও মায়ের চিতাভস্ম হরিদ্বারের গঙ্গায় বিসর্জন দেন তামিলনাড়ু চপার দুর্ঘটনায় নিহত বিপিন রাওয়াত ও তাঁর স্ত্রী মধুলিকার দুই কন্যা। শুক্রবার দিল্লির ব্রার স্কোয়ার শ্মশানে রাওয়াত দম্পতির দুই মেয়ে কৃতিকা ও তরনী বাবা ও মায়ের শেষকৃত্য সম্পন্ন করেন। পরিবারের সূত্রে আগেই জানানো হয়েছিল রাওয়াত দম্পতির চিতাভস্ম হরিদ্বারে নিয়ে গিয়ে প্রথা মেনে গঙ্গার জলে ভাসিয়ে দেওয়া হবে।
আগেই চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়াত ও তাঁর স্ত্রী মধুলিকার চিতা ভস্ম ও অস্থি ব্রার স্কোয়ার শ্মশান থেকে সংগ্রহ করা হয়। তারপরই রাওয়াত পরিবার হরিদ্বারের উদ্দেশ্য যাত্রা শুরু করে। সেখানেই প্রথা মেনে পুজোর আয়োজন করা হয়েছিল। তারপরই রাওয়াত দম্পতির দুই কন্যা তাদের বাবা ও মায়ের অস্থি গঙ্গায় ভাসিয়ে দেন। বাবা ও মাকে শেষ বিদায় জানালেন তাঁরা।
কেন দুর্ঘটনা
তামিলনাড়ুর কুন্নুরে বায়ুসেনার বিমান এমআই ১৭ বড়সড় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। কিন্তু কী কারণে এই দুর্ঘটনা তারই ব্যাখ্যা দেন বায়ুসেনার প্রাক্তন কর্মী বিভাস রায়চৌধুরী। তিনি জানান এটি এমআই ১৭-এর সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তির হেলিকপ্টার। বিভাস রায়চৌধুরী জানান, আবহাওয়ার কারণেই এই দুর্ঘটনা। পাহাড়ি এলাকায় যদি আবহাওয়ার খারাপ থাকে তাহলে এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তিনি আরও বলেন এমআই-১৭এর দক্ষ চালকরা এই হেলিকপ্টার তখনই চালাতে পারে যখন কোনও এলাকার দৃশ্যমানতা ৫০০ মিটার থাকে। কিন্তু ৫০০ মিটারের কম দৃশ্যমানতা থাকলে হেলিকপ্টার চালানো খুবই সমস্যার।
তিনি আরও বলেন নীলগিরি থেকে কোয়েম্বটুর - আকাশ পথে দূরত্ব খুবই কম। নীলগিরির নিচেই কোয়েম্বাটুর। কোয়েম্বটুর থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে রয়েছে সুলুর। সেখানে হেলিকপ্টার ফিল্ড হেলিকপ্টার নামা ওঠার জায়গা। সেখান থেকেই ছেড়েছিল বিপিন রাওয়াতের হেলিকপ্টার। গন্তব্য ছিল উটির একটু নিচে ওয়েলিন্টন। সেখানে আর্মির ট্রেনিং ক্যাম্প ছিল। পাহাড়ি রাস্তাই ছিল হেলিকপ্টারটির যাত্রাপথ।
আরও জানা যায় যাত্রাপথেই বিভ্রাট বাধে। পাহাড়ি রাস্তায় মেঘ বা কুয়াশা চলে আসাতেই দৃশ্যমানতা কমে যায়। কিন্তু পাইলট একটু ঝুঁকি নিয়েই কপ্টার চালাতে গিয়েছিলেন বলে মনে করছেন তিনি। তিনি বলেন, এই রাস্তাটি বায়ু সেনা কর্মীদের অত্যান্ত পরিচিত। তারা প্রায়ই এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করেন। কিন্তু কোনও কারণে আবহাওয়া খারাপ থাকায় হিসেবে গরমিল হয়ে যায় চালকের। তাতেই এই ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা ঘটে গেছে বলে মনে করছেন প্রাক্তন বায়ু সেনা কর্মী।