ত্রিপুরার মসনদের 'ফাইনাল লড়াই'-এ নেমে পড়ল তৃণমূল, সোমবার আগরতলায় মহামিছিল, জোর লড়াই-এর ডাক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের

সোমবার রাজনৈতিক হাইভোল্টেজে আগরতলা। তৃণমূল কংগ্রেসের মহামিছিলকে কেন্দ্রকে করে ত্রিপুরার রাজধানীতে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা। জায়গায় জায়গায় ব্যারিকেড। এরমধ্যেই ত্রিপুরা সরকারের বিরুদ্ধে অনৈতিক দমন পীড়নের অভিযোগ আনলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।

 

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে ঐতিহাসিক জয়ের পরই ত্রিপুরার মসনদকে পাখির চোখ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়রা। বাংলা ভাষী এই রাজ্যে একটা সময় দীর্ঘ বাম শাসন ছিল। কিন্তু, ৫ বছর আগে বাম শাসনের বিরুদ্ধে এক অভূতপূর্ব জয় নিয়ে ক্ষমতায় আসে বিজেপি। মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় চান বাংলাভাষী ত্রিপুরাতেও উড়ুক তৃণমূল কংগ্রেসের জয়কেতন। আর সেই লক্ষে গত এক বছরের বেশি সময় ধরে ত্রিপুরার বুকে লাগাতার শক্তিবৃদ্ধি করে গিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। এবার সামনে ফাইনাল ফাইট। তার আগে নির্বাচনের আবহ তৈরি করে ফেলল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। সোমবার আগরতলার বুকে সাংগঠনিক শক্তি প্রদর্শনে নামছে তৃণমূল কংগ্রেস। যার মূল হোতা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে থাকছেন কাকলি ঘোষদস্তিদার, সুস্মিতাদেবরা।

এশিয়ানেট নিউজ বাংলার সঙ্গে একান্ত কথোপকথনে আগরতলা থেকে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, 'ত্রিপুরাতে গত ৫ বছরে আইন-শৃঙ্খলার আরও অবনতি হয়েছে। বেড়ে গিয়েছে অপরাধের সংখ্যা। নারী নিরাপত্তার বেহাল দশা এই রাজ্যে। লাগাতার বেড়েছে ধর্ষণ, গণধর্ষণের মতো ঘটনা। যে আশা নিয়ে ত্রিপুরাবাসী অকর্মণ্য বামশাসনকে সরিয়ে দিয়ে বিজেপি-কে ক্ষমতায় নিয়ে এসেছিল তারা আজ প্রতারিত। না কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে, না মানুষের রোজগারে কোনও বৃদ্ধি হয়েছে। শিক্ষা থেকে শিল্প সবখানেই ত্রিপুরাবাসী বিজেপি পরিচালিত সরকারের হাতে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। শুধুমাত্র গেরুয়াবাহিনীর প্রচারাভিযান বৃদ্ধি পাওয়া ছাড়া ত্রিপুরায় সাধারণ মানুষের কোনও উপকার হয়নি।'

Latest Videos

রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় আরও জানান, ত্রিপুরার নির্বাচনের তাঁরা যে প্রতিশ্রুতি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে যাচ্ছেন তাতে নিশ্চিতভাবে আইন-শৃঙ্খলার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে সরকারের সঙ্গে সাধারণ মানুষের আস্থার সেঁতু তৈরি এবং আবশ্যিকভাবে শিল্প এবং কর্মসংস্থানের উন্নতি এবং বৃদ্ধিতে আপৎকালীনভাবে কাজ করাতে তারা জোর দিচ্ছেন। মহামিছিলের মূল থিমও এটাই। ত্রিপুরায় ক্ষমতায় এলে তৃণমূল কংগ্রেস এই প্রতিশ্রুতি রক্ষাকেই সর্বাগ্রে অগ্রাধিকার দেবে বলেও দাবি করেন রাজীব। 

আগরতলার গান্ধীঘাট থেকে এই মহামিছিল শুরু হয়ে যাবে রবীন্দ্রভবন পর্যন্ত। সেখানে মিছিল শেষে রয়েছে এক বিশাল জনসভা। রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, মিছিলের পথ দেড় কিলোমিটার হলেও এর মূল আওয়াজই হচ্ছে ত্রিপুরার বুকে এক নবজন্মের আহ্বান। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ত্রিপুরার বুকে বিজেপি বিরোধী শক্তিকে সংগঠিত করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। হাজারো সরকারি দমন পীড়ন-ও তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীদের মানসিকতাকে ভেঙে দিতে পারেনি বলেও দাবি করেন রাজীব। তিনি জানান, একের পর এক মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীদের। এমনকি, পশ্চিমবঙ্গ থেকে ত্রিপুরায় যাওয়া তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধেও নানা সময়ে নানাভাবে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা রুজু করেছে পুলিশ। যে সব সাংবাদিক এবং সংবাদমাধ্যম ত্রিপুরায় তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মসূচি এবং আওয়াজকে খবর আকারে প্রকাশ করতে গিয়েছে তাদের উপরেও নেমে এসেছে সরকারি দমন-পীড়নের খাড়া। ১৪ নভেম্বর এই আইন-শৃঙ্খলাহীন এক সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহারকারী শক্তির বিরুদ্ধে জোর লড়াই-এর ডাক বলেই মনে করছেন মহামিছিলের নেতৃত্বে থাকা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। 

১৪ নভেম্বরের মহামিছিল ত্রিপুরার নির্বাচনের প্রাক্কালে তৃণমূল কংগ্রেসের শক্তি প্রদর্শনের একটা ছোট্ট নমূনা বলেই দাবি করেছেন রাজীব। ত্রিপুরায় তৃণমূল কংগ্রেসের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা জানিয়েছেন, 'আগামী দিনে আরও বৃহৎ আকারে মিছিল এবং সমাবেশ হবে। ত্রিপুরার প্রতিটি ঘরে ঘরে যাবেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা।' ইতিমধ্যেই ৮ নভেম্বর থেকে ত্রিপুরা জুড়ে তৃণমূল কংগ্রেস জনসংযোগ যাত্রাও শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন রাজীব বন্দ্যোাপাধ্যায়।

৫ বছর আগে দীর্ঘদিনের বাম শাসনকে সরিয়ে বিজেপি যখন ক্ষমতায় এসেছিল তাতে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল সেখানকার আদিবাসী সমাজ। কিন্তু, সেই আদাবিসী সমাজও বিজেপি-র বিরুদ্ধে বিগত দিনে বঞ্চনা এবং উন্নয়নের কলা দেখিয়ে প্রতারণার অভিযোগ এনেছিল। রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ্যমন্ত্রীত্বে আদিবাসী সমাজ এক বিশাল উন্নয়নের মুখ দেখেছে। জঙ্গলমহল থেকে রাজ্যের বিভিন্নপ্রান্তের আদিবাসীরা এখন সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের ফায়দা সমানভাবে তুলছেন। সুতরাং, ত্রিপুরায় তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে অবশ্যই আদিবাসী সমাজের উন্নয়নে জোর দেবে। এক্ষেত্রে পশ্চিবঙ্গের বিভিন্ন মাস্টার প্রকল্পের মতো এমন প্রকল্পের সূচনাও ত্রিপুরার বুকে করা যেতে পারে বলে মনে করছেন তিনি। 

মহামিছিলের প্রস্তুতির শেষে লগ্নে একাধিক স্থানে শাসকদল বিজেপি-র বিভিন্নভাবে দমন-পীড়নের নীতি নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন রাজীব। তিনি জানিয়েছেন, ত্রিপুরার বিভিন্ন স্থান থেকে আগাম বাস ভাড়া করা হয়েছিল দলীয় কর্মী ও সমর্থকদের মহামিছিলে আনার জন্য। কিন্তু, আচমকাই সেই সব বাস মালিকরা বুকিং বাতিল করে দিয়েছেন। একাধিক স্থানে পুলিশি ব্যারিকেডও নাকি তৈরি করা হয়েছে মহামিছিলে যোগ দিতে যাওয়া মানুষজনকে আটকাতে। রাজীব জানিয়েছেন, এই সব দমনপীড়ন করে মানুষকে আটকে রাখা যাবে না। বিজেপি বিরোধী শক্তি এই নির্বাচনে সংগঠিতভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষেই আছেন বলে দাবি করেন তিনি।

আরও পড়ুন-  
'মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থাকতে বাংলাভাগ হবে না', আবারও আশ্বস্ত করলেন তৃণমূল নেতা 
সোমবার ছিল অভিষেকের ৩৬তম জন্মদিন, পথে নেমে কর্মী সমর্থকদের সঙ্গে জন্মদিন পালন 
ডেঙ্গির সচেতনতা প্রচারে ফিরহাদ হাকিম, বেলচা হাতে সাফ করলেন আবর্জনা 

Share this article
click me!

Latest Videos

লজ্জা মমতার! জঙ্গিদের স্বর্গরাজ্য এই বাংলা!| Suvendu Adhikari #shorts #shortsvideo #suvenduadhikari
PM Modi Live : কুয়েতে Gulf Spic-এর ভারতীয় কর্মীদের সঙ্গে আড্ডা মোদীর, দেখুন সরাসরি
পুলিশের তৎপরতায় বানচাল ডাকাতির প্ল্যান! গ্রেফতার ২ অপরাধী, চাঞ্চল্য Birbhum-এ
Suvendu Adhikari: 'কত বড় জিহাদি, রামনবমীর মিছিলে ঢিল মেরে দেখাও', হুঙ্কার শুভেন্দুর
খাদান নিয়ে Dev কে বিশ্রী আক্রমণ রাজের, দেবের পাশে দাঁড়িয়ে পাল্টা দিলেন Aritra Dutta Banik