অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করেন গৌরব গগৈ। যদিও অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করার কথা ছিল রাহুল গান্ধীর। যাইহোক দিনের শেষে বলতে উঠে বিরোধীদের চড়া সুরে আক্রমণ করেন উত্তর পূর্বের সাংসদ কিরেন রিজিজু।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব বিতর্কে মঙ্গলবার দিনভর উত্তপ্ত ছিল সংসদ। এদিন অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করেন গৌরব গগৈ। যদিও অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করার কথা ছিল রাহুল গান্ধীর। যাইহোক দিনের শেষে বলতে উঠে বিরোধীদের চড়া সুরে আক্রমণ করেন উত্তর পূর্বের সাংসদ কিরেন রিজিজু। তিনি বলেন অনাস্থা প্রস্তাবের জন্য কংগ্রেসকে আগামী দিনে আফশোস করতে হবে।
১. কিরেন রিজিজু এদিন মোদী সরকারের সাফল্য তুলে ধরেন। তিনি অলিম্পিকের হিসেব দেন। বলেন ২০২০ সালে ভারত সর্বোচ্চ মেডেল পেয়েছে। আগে এমন ইতিহাস তৈরি হয়নি। তিনি আরও বলেন, তিনি যখন খেলাধূলা করতে তখন যদি মোদী প্রধানমন্ত্রী থাকতেন তাহলে তিনিও মেডেল পেতেন। পাশাপাশি কংগ্রেসের সমালোচনা করে কিরেন রিজিজু বলেন, ভুলভাবে আর ভুল সময়ে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছে। আগামী দিনে এই নিয়ে কংগ্রেসকে আফশোস করতে হবে।
২. কিরেন রিজিজু মণিপুরের এই হিংসার জন্য পরোক্ষে পূর্বতন ইউপিএ সরকারকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, কংগ্রেসের মণিপুর নিয়ে কিছু বসা সাজে না। 'ইউপিএ সরকারের আমলে আমরা বারবার প্রধানমন্ত্রী (মনমোহন সিং)কে বলেছিলাম মণিপুর নিয়ে মনোযোগ দিতে। '
৩. সংসদে অনাস্থ প্রস্তাবও পেশ করে উত্তর পূর্বের সাংসদ গৌরব গগৈ। তিনি বলেন মণিপুর নিয়ে মোদীর নীরবতা ভাঙার জন্য বিরোধীরা বাধ্য হয়ে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছে। মণিপুরে হিংসার ৪০ দিন পরে প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে মুখ খুললেও সংসদের বাইরে মাত্র ৩০ সেকেন্ডের জন্য বলে ছিলেন। যা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আশা করা যায় না।
৪. রাহুল গান্ধী সোমবারই সংসদে প্রত্যাবর্তন হয়েছে। অনেকেই মনে করেছিলে অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করে জ্বালাময়ী বক্তৃতা দেবেন রাহুল। কিন্তু তা হয়নি। রাহুলের পরিবর্তে গৌরব গগৈ অনাস্থা প্রস্তাব আনে। যা নিয়ে বিজেপি সংসদরা হৈহট্টোগোল করে। সূত্রের খবর আগামিকাল , বুধবার না হলে বৃহস্পতিবার অনাস্থা প্রস্তাব বিতর্কে অংশ নিতে পারেন রাহুল। এদিন মোদী ও অমিত শাহ না থাকায় রাহুলকে বক্তা হিসেবে পেশ করতে রাজি ছিল না কংগ্রেস। সূত্রের খবর মোদীর আগেই সংসদে ভাষণ দিতে পারেন রাহুল।
৪. বুধবার অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার দ্বিতীয় দিন। ১০ অগাস্ট অর্থাৎ বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বক্তব্য রাখতে পারেন। কেন্দ্রের হয়ে অমিত শাহ, নির্মলা সীতারামন, স্মৃতি ইরানি এবং জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। বিজেপির ১০ জন মন্ত্রীর অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে বিতর্কে।
৫. সরকার যুক্তি দেখিয়েছে যে ১৯৯৩ এবং ১৯৯৭ সালে মণিপুরে বড় ধরনের হিংসার ঘটনা ঘটেছিল, একটি ক্ষেত্রে সংসদে কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি। অন্যক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী একটি বিবৃতি দিয়েছিলেন।
বিরোধী দল দাবি করে যে মে মাসে জাতিগত সহিংসতা শুরু হওয়ার পর থেকে ১৭০-এর বেশি লোকের মৃত্যু, আহত এবং হাজার হাজার লোকের ভিটেমাটি হারিয়ে শরণার্থী শিবিরে রয়েছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে, প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। এটি অত্যান্ত জরুরি বিষয়।
৬. মণিপুর ইস্যুতে বিরোধী জোট ইন্ডিয়া এদিনও ঐক্যবদ্ধ ছিল সংসদে। তৃণমূলের সৌগত রায় সরাসরি বলেন, মণিপুর যখন জ্বলছে প্রধানমন্ত্রী বিদেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীকে হিংসা বন্ধের আর্জি নিয়ে মণিপু সফরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সৌগত।
৭. এনসিপির সুপ্রিয়া সুলে কেন্দ্রের তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বন্দে ভারত ট্রেনের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতি নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন।
৮. নিশিকান্ত দুবে শাসক দলের হয়ে বলতে উঠে স্পষ্ট করেই জানিয়ে দেন এটা বিরোধীদের নির্বাচনী কৌশল। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃতি করে তিনি বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে এটা কোনও অনাস্থ ভোট নয়, এটি বিরোধীদের আস্থা ভোট। বিরোধীরা পরিষ্কার করে দেখে নিতে চায় কে তাদের সমর্থন করছে। আর কে তাদের বিরোধিতা করছে।' এখানেই শেষ নয়, বিজেপির নিশিকান্ত দুবে এদিন সনিয়া গান্ধীকেও আক্রমণ করেন। তিনি রাহুল গান্ধী প্রসঙ্গ তুলে বলেন, 'ছেলেকে সেট করতে হবে। তার জামাইয়ের যত্ন করতে হবে। সেই জন্যই বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করছেন তিনি।'
৯. বাংলার সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের নাম রয়েছে বিজেপির বক্তাদের তালিকায়। অনাস্থা প্রস্তাবের বিপক্ষে তিনিও বলতে পারেন। সেখানে উঠতে পারে বাংলার মহিলা নির্যাতন ও পঞ্চায়েত ভোটে হিংসার কথা।
১০. ৯ অগাস্ট বেলা ১১টা পর্যন্ত মুলতবি করে দেওয়া হয়েছে লোকসভা ও রাজ্যসভার অধিবেশন।