দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম ‘ওয়াটার মেট্রো’ চালু হচ্ছে ভারতের কেরল রাজ্যে, জেনে নিন এই বিলাসবহুল জলযানের প্রধান ১১টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট
ভারতের বড় বড় শহর এবং পর্যটনক্ষেত্রগুলিতে মেট্রো পরিষেবা আরও স্বচ্ছল করে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে কেন্দ্রের মোদী সরকার। সেই ভূমিকার একটি আকর্ষণীয় নিদর্শন হল কেরলের কোচিতে চালু হওয়া দেশের প্রথম 'ওয়াটার মেট্রো' পরিষেবা। কোচি মেট্রো রেল, কেরল সরকার ও একটি জার্মান কোম্পানির যৌথ প্রচেষ্টায় এই প্রকল্পটি চলতি মাসেই শুরু হতে চলেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাত ধরে। আগামী ২৫ এপ্রিল থেকে কেরলের জলপথে এই পরিষেবা পাওয়া যাবে। হাইকোর্ট জংশন থেকে ভাইপিন রুটের মধ্যে এই পরিষেবা চালু করবেন নরেন্দ্র মোদী। প্রায় ১ হাজার ১৩৬ কোটিরও বেশি টাকার এই প্রকল্প ভারত-জার্মান যৌথ উদ্যোগে সৃষ্ট। এটি শুধু ভারতেরই নয়, সারা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে চালু হওয়া প্রথম জলপথের-মেট্রো।
মোট ১৫টি রুটে শুরু হচ্ছে এই ওয়াটার মেট্রো। প্রায় ৭৮ কিলোমিটার দীর্ঘ যাত্রাপথে মোট ১০টি দ্বীপ পার করবে এই জলযান। বৈদ্যুতিকভাবে চালিত ৭৮টি দ্রুতগামী হাইব্রিড জলযান ব্যবহার করে তৈরি এই পরিষেবাটি মোট ৩৮টি ফেরিঘাটে উপলব্ধ থাকবে। কেরলের বিভিন্ন দ্বীপে বসবাসকারী প্রায় ১ লক্ষ মানুষের দৈনন্দিন যাতায়াত সহজ করে দেবে এই স্মার্ট জলযান।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করে তুলতে খরচ হয়েছে প্রায় ১ হাজার ১৩৬ কোটি টাকা। কোচি শহরের জন্য একটি সমন্বিত জল পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য জার্মান তহবিল KfW (Kreditanstault fur Weideraufbou)-এর সাথে এই ৮৫ মিলিয়ন ইউরো (৫৭৯ কোটি টাকা)-এর একটি দীর্ঘমেয়াদী ঋণ চুক্তি করেছিল ভারত সরকার।
ওয়াটার মেট্রোতে ভ্রমণ করার জন্য ন্যূনতম টিকিটের ভাড়া লাগবে ২০ টাকা এবং এর টিকিট কাটা যাবে অনলাইনেই। ‘কোচি ওয়ান’ নামের একটি মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অনলাইনেই টিকিট বুক করতে পারবেন যাত্রীরা।
প্রকল্পটি কোচি এবং এর আশেপাশের অভ্যন্তরীণ জলপথ ব্যবহার করছে। এই সমগ্র জলপথের প্রধান অংশ হল- জাতীয় জলপথ (NW3)- ৪০ শতাংশ, কোচি পোর্ট ট্রাস্টের জল ৩৩ শতাংশ, সেচের অধীনে থাকা পথ ২০ শতাংশ, অন্যান্য অভ্যন্তরীণ জল ৭ শতাংশ।
দিনের ব্যস্ততম সময়গুলিতে বিভিন্ন রুট জুড়ে ১০ মিনিট থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে এক একটি মেট্রো চলাচল করবে। সমস্ত পথ জুড়ে তদারকি করার জন্য বিশেষ কর্মী নিয়োজিত থাকবেন। রাতেও জলপথে সহায়তা দেওয়ার জন্য কর্মী নিযুক্ত করা থাকবে।
জলপথে মেট্রো প্রকল্পের সাথে জড়িত বিভিন্ন উপাদানগুলি হল: বোট টার্মিনাল এবং অ্যাক্সেস অবকাঠামো, নৌকা, নৌকো থামার জায়গা, চিহ্নিত রুট এবং টার্মিনাল বরাবর খনন, সিস্টেম- পর্যবেক্ষণ, AFC, PIS, VCS, CCTV, অপারেশন, এবং কন্ট্রোল সেন্টার।
আকার এবং ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে মোট তিন ধরনের বোট টার্মিনাল রয়েছে। সেগুলি হল, মেজর, ইন্টারমিডিয়েট এবং মাইনর টার্মিনাল।
প্রতিটি বোট টার্মিনালের জন্য প্রদত্ত বিভাগ এবং একটি করে অবৈতনিক বিভাগ রয়েছে। নন-পেয়িং বা অবৈতনিক বিভাগে টিকিট অফিস, টিকিট ভেন্ডিং মেশিন, স্টেশন কন্ট্রোল, ইত্যাদি রয়েছে। টিকিট কাটার জায়গায় বিশ্রামাগার সহ একটি অপেক্ষা করার জায়গা রয়েছে। প্রতিটি টার্মিনালে স্বয়ংক্রিয় ভাড়া সংগ্রহ এবং টার্নস্টাইল সিস্টেম উপলব্ধ রয়েছে।
শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী এবং বয়স্ক যাত্রীদের আরোহণ এবং অবতরণের সুবিধার্থে ভাসমান জেটিগুলিতে বিশেষ সুবিধা উপলব্ধ রয়েছে। ভাসমান জেটিঘাটগুলি জোয়ারের বৈচিত্র্যের সঙ্গে যাতে তাল মেলাতে পারে, তার জন্য বিশেষ প্রযুক্তি দ্বারা এগুলি নির্মিত হয়েছে। বর্ষাকালে যাত্রীদের আরাম নিশ্চিত করার জন্য ভাসমান জেটিগুলিগুলি শেড দ্বারা আচ্ছাদিত করা হয়েছে।
জলজ- মেট্রোর সবগুলোই পরিবেশবান্ধব নৌকা । যাত্রী সেবার জন্য মোট ৭৮টি মেট্রো রয়েছে। এগুলির মধ্যে ৫৩টি বোটে অন্তত ৫০ জন করে যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন। ২৩টি মেট্রো ১০০ জন যাত্রী বয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো করে ডিজাইন করা হয়েছে। বৈদ্যুতিক মোটর বোটগুলি ৫০ থেকে ১০০ জন যাত্রী বহন করে সর্বোচ্চ ২২ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিবেগে ভ্রমণ করতে পারবে। অর্থাৎ, প্রতি ঘণ্টায় যেতে পারবে প্রায় ১৫ কিমি পথ।
কোচি শহরের সঙ্গে সংলগ্ন দশটি দ্বীপকে যুক্ত করবে এই জলযান। বাতানুকূল বোটগুলিতে চেপে শহরের যানজট এড়িয়েই আরামে নিজেদের গন্তব্যে পৌঁছতে পারবেন সাধারণ মানুষ। কোচি মেট্রো এবং ওয়াটার মেট্রোর জন্য একটি কোচি ওয়ান কার্ড দিয়েই ওয়াটার মেট্রোয় চড়া যাবে।
আরও পড়ুন-
অসমের জেলে স্থানান্তরিত করা হল অমৃতপাল সিং-কে, আঁটোসাঁটো নিরাপত্তার সাথে রয়েছে সিসিটিভির নজরদারি
মাত্র ২৭ বছরের মধ্যেই ভয়ঙ্কর তাপপ্রবাহে মারা যাবেন ভারতের লক্ষ লক্ষ মানুষ, আশঙ্কা প্রকাশ করল কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়
Sudan News: রক্তাক্ত সুদানে পৌঁছে গেল নৌবাহিনীর ‘সুমেধা’, জেদ্দায় ভারতীয় বায়ুসেনার দুটি বিমান