অমৃতপাল সিং কে, ‘ওয়ারিস দে পঞ্জাব’ কী চায়, ভারত সরকার কেন বিরোধিতা করছে, জেনে নিন খালিস্তানিদের প্রকৃত দাবি

খালিস্তানপন্থীরা একটি আলাদা দেশ চান, ভারতের অন্দরে কোন কোন রাজ্য নিয়ে সেই দেশ চান তাঁরা? ভারত সরকারের সঙ্গে কেন একমত হয়েছে কানাডা সরকার। জেনে নিন খালিস্তান ও অমৃতপাল সিং-এর বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য।

Sahely Sen | Published : Mar 20, 2023 6:43 AM IST

পঞ্জাবের শিখ ধর্মাবলম্বী মানুষদের নিয়ে পৃথক খালিস্তানি রাষ্ট্র গড়ে তোলার দাবি জানান খালিস্তান সমর্থকরা। সম্পূর্ণ পঞ্জাব, হরিয়ানা, হিমাচল প্রদেশ এবং রাজস্থান, উত্তরাখণ্ড ও উত্তর প্রদেশের কিছু কিছু অংশ নিয়ে এই আলাদা দেশ গড়ে তোলার দাবি উঠেছে। তবে, মূলত পঞ্জাবের সাধারণ মানুষের দাবি জানানোর জন্যই গড়ে উঠেছিল ‘ওয়ারিস পঞ্জাব দে’, এই দলটি গড়েছিলেন তৎকালীন অভিনেতা থেকে রাজনীতিক হয়ে ওঠা দীপ সিধু। তাঁর দলের সক্রিয় ‘কর্মী’ ছিলেন বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা জার্নেল সিংহ ভিন্দ্রানওয়ালের ভক্ত অমৃতপাল সিং।

অমৃতসরের জাল্লুপুর খেরা গ্রামে ১৯৯৩ সালে অমৃতপাল সিং সান্ধু-এর জন্ম হয়। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করার পর ২০১২ সালে দুবাইতে নিজের কাকার গাড়ির ব্যবসায় কাজ করতে চলে যান অমৃতপাল সিং। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দীপ সিধু একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান, যেটিকে অমৃতপাল সিং ‘সরকার দ্বারা খুন’ বলে দাবি করেছিলেন। দীপের মৃত্যুর পর ‘ওয়ারিস পঞ্জাব দে’ সংগঠন অমৃতপালকে নিজেদের নেতা হিসেবে গ্রহণ করে এবং ভারতে ডেকে নেয়। বিগত ৬-৭ মাস ধরে তিনি পঞ্জাব পুলিশ এবং ভারত সরকারের নজরে আসেন যখন থেকে তিনি নিজেকে ‘শিখ ধর্মগুরু’ বলে দাবি এবং ঘোষণা করে দিয়েছিলেন। শুধু তাইই নয়, তিনি ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়েছিলেন যে, তাঁকেও ‘ইন্দিরা গান্ধী’-র মতো অবস্থা করা হবে। (ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে গুলি করে খুন করেছিলেন তাঁরই দেহরক্ষী ২ শিখ ধর্মাবলম্বী)।

শিখদের অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য মানুষের কাছে বক্তব্য রাখতে শুরু করেন অমৃতপাল সিং, তাঁর বক্তব্য হল, ভারতে শিখদের বিরুদ্ধে বৈষম্য করা হচ্ছে। কিন্তু, সেই দাবি আদায়ের উদ্দেশ্যে তাঁর দলের সমর্থকদের হাতে তরোয়াল, বন্দুক, লাঠিসোটা সহ বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র দেখা গেছে। এঁরা নিজেদের শিখ বলে দাবি করলেও বহু গুরুদুয়ারে আক্রমণ চালিয়েছেন। শুধু ভারতে নয়, বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় খালিস্তানি সমর্থকরা আক্রমণ চালিয়েছেন যেখানে তাঁরা বহু সন্ত্রাসবাদী, ড্রাগ পাচারকারী ও আঞ্চলিক গুণ্ডাদের সাহায্য নিয়েছেন। ১৯৮৫ সালে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিমানও বিস্ফোরণে উড়িয়ে দিয়েছিলেন এই খালিস্তানিরা, যেখানে তিনশোরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছিলেন, খালিস্তানিদের দাবি ছিল যে, এই বিস্ফোরণটা তাদের গুরু জার্নেল সিংহ ভিন্দ্রানওয়ালের ‘খুনের বদলা’।

অমৃতপাল দীপ সিধুর সমর্থকদের ‘খালসা’-এ যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান, পঞ্জাবে রীতিমতো ঘটা করে দীক্ষা দিয়ে মানুষকে বিচ্ছিনতাবাদী ‘খালসা’ গ্রুপের অংশীভূত করা হয়, এই রীতির নাম ‘অমৃত নেওয়া’। ভারতের গোয়েন্দাদের দাবি, এই খালিস্তান সমর্থকদের সাহায্য করছে পাকিস্তানও। পঞ্জাব সীমানায় একাধিকবার ড্রোনের মাধ্যমে আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক পদার্থ সরবরাহ করা হচ্ছে পাকিস্তান থেকে। পাঠানো হচ্ছে মাদক দ্রব্যও। যদিও অমৃতপাল সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছিলেন যে, তিনি শিখ তরুণ ও শিশুদের ড্রাগ থেকে দূরে রাখতে চান, কিন্তু, গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন যে, তিনি পঞ্জাবের রিহ্যাব সেন্টারে থাকা নেশাগ্রস্ত তরুণ যুবদেরকেই মানব বোমা হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করছিলেন এবং তাদের সেই মতো প্রশিক্ষণও দিচ্ছিলেন।

ভারত সরকারের পক্ষ থেকে পৃথক খালিস্তান রাষ্ট্র এবং খালিস্তানি আন্দোলনের তীব্র বিরোধিতা করা হচ্ছে। নরেন্দ্র মোদীর সরকার কানাডায় যাওয়া ভারতীয়দের বিশেষভাবে সতর্ক করেছে, যেহেতু সেখানে খালিস্তানিদের প্রতিবাদ এবং আক্রমণ অত্যন্ত জোরদার হয়েছে। ভারতের বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি স্পষ্ট জানিয়েছেন যে, খালিস্তান সমর্থকদের এই দাবি মোটেই সমর্থনযোগ্য নয়, কারণ, ভারত এবং সারা বিশ্ব জুড়ে তাঁরা কী প্রচণ্ড পরিমাণ হিংস্র আক্রমণ চালিয়েছে, তা বিশ্বের মানুষ দেখেছেন, এরা একটি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন। কানাডার বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্রও ভারতের এই বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে তিনিও খালিস্তানিদের তিনিও ‘চরমপন্থী’ এবং ‘সন্ত্রাসবাদী’ বলে ব্যাখ্যা করেছেন। গতকাল লন্ডনে ভারতের দূতাবাস থেকে ভারতের জাতীয় পতাকাও নামিয়ে দিয়েছেন এই দলের সমর্থকরা। ভারতের বিভিন্ন উচ্চ পদে, যেমন সেনাবাহিনী, শিল্পক্ষেত্র, সরকারি মহল, রাজনৈতিক শিবির, সব জায়গাতেই শিখ ধর্মাবলম্বী মানুষরা সফলতার সঙ্গে বিরাজ করছেন। কিন্তু, খালিস্তান সমর্থকদের দাবি, তাঁদের দাবি করা অঞ্চলে (পৃথক খালিস্তান দেশ) কোনওভাবেই তাঁরা রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকারের দখলদারি চান না।

এই খালিস্তানপন্থীরা পঞ্জাবে ব্যাপকভাবে অশান্তি এবং আতঙ্ক সৃষ্টি করার পর এদের দলের ৭৮ জন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। সোমবার অমৃতপাল সিং-এর কাকা ও গাড়ির চালক আত্মসমর্পণ করেন। কিন্তু, অমৃতপাল এখনও ‘বেপাত্তা’। পুলিশ দাবি করছে যে, তিনি পুলিশের চোখের সামনে দিয়েই বাইকে করে পালিয়ে গেছেন। অন্যদিকে, ‘ওয়ারিস পঞ্জাব দে’ সংগঠনের সদস্যরা দাবি করছেন যে, অমৃতপালকে পুলিশই ‘গায়েব’ করে দিয়েছে। সবার অজান্তে তাঁকে লুকিয়ে কোনও জায়গায় আটকে রাখা হয়েছে এবং কোনও সাজানো সংঘর্ষ বা অন্য কোনও উপায়ে তাঁকে ‘খুন’ করে দেওয়া হতে পারে।

আরও পড়ুন-

পঞ্জাবের নেশাখোর যুবকদের দিয়েই মানববোমা বানানোর ছক কষছেন খালিস্তানি নেতা অমৃতপাল সিং? চাঞ্চল্যকর দাবি পুলিশের
দু'দিনের সফরে ভারতে এলেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা, স্বাগত জানালেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখর
Coronavirus News: হু হু করে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ, সংকটজনক রোগীদের জন্য কী ব্যবস্থা নিতে হবে, স্পষ্ট করল স্বাস্থ্যমন্ত্রক

Share this article
click me!