অপহরণ থেকে খুন, জানুন পাকিস্তান-বাংলাদেশে হিন্দুদের সঙ্গে হওয়া অত্যাচারের কাহিনি

  • পাকিস্তান থেকে বিতাড়িত হিন্দুরা 
  • নিরন্তর অত্যাচারে অসহনীয় অবস্থা
  • সিএএ নিয়ে এরা সকলেই আশাবাদী
  • আর ভিসার উপরে বসবাস নয় এবার মিলবে নাগরিকত্ব
     

পাকিস্তানে বসবাসকারী হিন্দুদের সংখ্যাটা এই মুহূর্তে অন্তত ৩০ লক্ষেরও বেশি। যা সে দেশের জনসংখ্যার ১.৬ শতাংশ বলা যেতে পারে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই সংখ্যাটি ১৭ মিলিয়ন বা ১কোটি ৭০ লক্ষ। আফগানিস্তানে এই সংখ্যাটা ১ হাজারের সামান্য কিছু বেশি। কিন্তু এই তিন দেশেই দ্রুত কমছে হিন্দু ধর্মালম্বীদের সংখ্যা। হয় এদের ধর্মান্তরিত করা হচ্ছে অথবা নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে। এমনকী, এই তিন দেশেই হিন্দু মেয়েদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে করা হচ্ছে ধর্ষণ এবং হত্যাকাণ্ডের মতো ঘৃণ্য কাণ্ড। হিন্দুদের সংখ্যা যাতে না বাড়তে পারে, সেই কারণে আবার হিন্দু মেয়েদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে প্রথমে গণ-ধর্ষণ করা হয় এবং তারপর তাদের মুসলিম ধর্মালম্বীদের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। আফগানিস্তানের ক্ষেত্রে হিন্দু মেয়েদের ভাগ্য অতটা সুখকর হয় না। এখানে অপহৃত হিন্দু মেয়েদের ভাগ্যে থাকে নিদারুণ পৈশাচিক অত্যাচার, লাগাতার ধর্ষণ এবং একের এক তালিবান পুরুষদের শয্যাসঙ্গিনী হওয়া। পরিশেষে হয় পাথরের বাড়ি বা বন্দুকের গুলিতে প্রাণ বিসর্জন। বাংলাদেশের চট্টগ্রামেও কয়েক বছর আগে এক সম্ভ্রান্ত বনেদি হিন্দু ব্যবসায়ী পরিবারের মেয়ে-কে অপহরণ করা হয়েছিল। সেই পরিবারের যথেষ্ট প্রভাব থাকলেও বাড়ির মেয়েকে উদ্ধারে লেগে গিয়েছিল মাস খানেকেরও বেশি সময়। অভিযোগ, খোদ পুলিশ এসে ওই মেয়ের কথা ভুলে যাওয়ার জন্য চাপ দিত। আপাতত সেই মেয়ে কলকাতা শহরে বসবাস করছে। 

আরও পড়ুন- দু-দু'বার হতে হতেও হয়নি ভারত-পাক যুদ্ধ, নিয়ন্ত্রণরেখাই ভাবাচ্ছে সেনাপ্রধানকে

Latest Videos

দিল্লির বুকে ভিন দেশ থেকে আসা হিন্দু উদ্বাস্তুদের মূলত তিনটি বড় ক্যাম্প রয়েছে। এই ক্যাম্পগুলিতে সব মিলিয়ে অন্তত সাতশ-রও বেশি কিছু পরিবার রয়েছে। লোকসংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি। এছাড়াও নয়াদিল্লির এখানে-ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে আরও কিছু কিছু ছোট ক্যাম্প। বহু হিন্দু উদ্বাস্তু নয়াদিল্লিতে তাঁদের বিভিন্ন আত্মীয়র কাছেও আশ্রয় নিয়েছেন। রাজস্থানের জয়পুর, জোধপুর-এও রয়েছে হিন্দু উদ্বাস্তুদের বেশকিছু বড় ক্যাম্প। ছোটখাটো এমন ক্যাম্প রয়েছে জয়সলমীর, বিকানির-এও। গুজরাটের কচ্ছ, গান্ধীনগর, আহমেদাবাদ এবং রাজকোটেও এমন কিছু ক্যাম্প রয়েছে। সমস্ত এই হিন্দু উদ্বাস্তু ক্যাম্পে থাকা মানুষের মোট সংখ্যাটা গুণলে তা একত্রিশ হাজারের সামান্য কিছু বেশি হয়। এই মানুষগুলি ইতিমধ্যেই নিজের ভিটে-মাটি ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। কারণ হিন্দু হিসাবে এঁদের আর কোনও দেশে যাওয়ার রাস্তা নেই। পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তানে এক সময়ে বসবাসকারী এই হিন্দুরা যেভাবে প্রতিনিয়ত জীবনে সংখ্যাগরিষ্ঠদের দ্বারা অত্যাচারের শিকার হয়েছে তাতে এঁরা আর কোনওভাবেই নিজের ভিটে-মাটিতে ফিরতে রাজি নন। তাই ভারতের বুকে দিনের পর দিন ভিসা-র মেয়াদকাল বাড়িয়েও কোনও মতে তাবুতে জীবন কাটিয়ে দেওয়াটাই শ্রেয় বলে মনে করছেন। 

মালা দাস। দিল্লির হিন্দু উদ্বাস্তু ক্যাম্পের এক অন্যতম বাসিন্দা। এখন অনেকটা-ই আত্মবিশ্বাসী। বিশেষ করে ভারতে চলে আসার পর নিজেকে এখন অনেকটাই ভাগ্যবান বলে মনে করেন তিনি। ২০১১ সালে পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশের হায়দরাবাদ থেকে এসে নয়াদিল্লির এক হিন্দু উদ্বাস্তু ক্যাম্পে আশ্রয় হয়েছিল মালা-র। তাঁর মতে, যখন ভারতে এসেছিলেন তখন পড়াশোনা জানতেন না। লিখতে-পড়তে পারতেন না। কারণ, পাকিস্তানে হিন্দু মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার ব্যপারে প্রবল বাধার সামনে পড়তে হত। এমনকী স্কুলের রাস্তা থেকেও হিন্দু মেয়েদের অপহরণ করে নিয়ে যেত পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনজাতির পুরুষরা। অত্যাচারের আতঙ্কে আর নাকি পড়াশোনা-ই শেখা হয়নি মালার। সেই মালা এখন নিজের ভবিষ্যত নিয়ে সচেতন। ছোটখাটো কাজ করে পরিবারের জন্য আয় করছে। তাঁর মতে, ভারতের নাগরিকত্ব পেয়ে গেলে কাজ-কর্ম এবং অন্যান্য সরকারি সুবিধা আরও বেশি করে মিলবে। এতে পরিবারের জন্য আয় করার সুযোগটা তাঁর কাছে আরও বৃদ্ধি পাবে। 

মালার মতোই পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে দিল্লির হিন্দু উদ্বাস্তু ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন ভগবান দাস। সত্তোরোর্ধ্ব এই প্রবীণের মতে, পাকিস্তানে তাঁদের নাকি সেকেন্ড ক্লাস সিটিজেন হিসাবে মনে করা হত। হিন্দু ছেলে-মেয়েদের শিক্ষা থেকে দূরে রাখা হত। ভারতে থাকতে পেরে এখন অনেকটাই খুশি ভগবান। উদ্বাস্তু হিন্দু ছেলে-মেয়েরা এখন নয়াদিল্লিতে ক্যাম্পে থেকেও যেভাবে পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছে তাতে তাঁর খুশির মাত্রা আরও বেড়ে গিয়েছে। 

আরও পড়ুন- ব্রিটিশ ভারতের দিল্লিতে জন্ম মুশারফের, মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত প্রাক্তন এই পাক প্রসিডেন্টের সঙ্গে কেমন ছিল ভারতের সম্পর্ক

রাজওয়ান্তি। বছর সতেরো এই মেয়ের দাবি, পাকিস্তানে স্কুলে তাদের কোরান পড়তে বাধ্য করা হত। এমনকী, সেদেশে স্কুলের ক্লাসঘরে হিন্দু ছেলে-মেয়েদের  সারাক্ষণই নাকি টিজ করে যেত সংখ্যাগরিষ্ঠ জনজাতির ছেলে-মেয়েরা। 

আরও পড়ুন- সামনে এল ১০ হাজারের বেশি নাম, এরাই ছিল পাকিস্তানের সহযোগী

কয়েক বছর আগে যখন বছর একুশের ঈশ্বরলাল দিল্লির বুকে পা রেখেছিলেন তখন তাঁর মন আনন্দে ভরে উঠেছিল।  সে সময় তাঁর বয়স ছিল ১৮। ওই বয়সেই ঈশ্বর বুঝে গিয়েছিল ধর্মের আসল অর্থ কী। কারণ, যে ভাবে পাকিস্তানে তার এবং তার পরিবারের হিন্দুত্ব নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনজাতির কটাক্ষ ও অপমানের শিকার হতে হত তা মানসিকভাবে হতাশ হয়ে পড়েছিল ঈশ্বর। দিল্লি-র বুকে থাকা উদ্বাস্তু ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়ার পর ঈশ্বর বুঝতে পেরেছে ধর্মীয় স্বাধীনতার মানে কী। 

হিন্দু উদ্বাস্তু মালা-র মতে, নয়াদিল্লির ক্যাম্পে তিনি ও তাঁর পরিবার এখন নিজের ধর্মের বিভিন্ন আচার ও উৎসব পালন করতে পারেন। এর জন্য কেউ এসে বাধাও দেয় না। কিন্তু, পাকিস্তানে হিন্দু-দের ধর্মীয় আচার-বিধি পালনের কোনও সুযোগই দেওয়া হত না। উৎসব পালন তো দূরস্থান। অথচ, যবে থেকে নয়াদিল্লির উদ্বাস্তু ক্যাম্পে আশ্রয় মিলেছে তবে থেকে দিওয়ালি থেকে শুরু করে নানা ধর্মীয় আচার তিনি পালন করছেন। ধর্ম পালনের স্বাধীনতা কোনও মানুষ-ই না চায়। এমনও মত ব্যক্ত করেছেন মালা। 

মালা-ঈশ্বরলাল বা রাজওয়ান্তি- দিল্লি থেকে রাজস্থান বা গুজরাটের বুকে থাকা হিন্দু উদ্বাস্তু ক্যাম্পগুলিতে এমন-ই বহু মুখের ভীড়। এক নিদারুণ অসহয়তা, বর্বোরোচিত অত্যাচারের দগদগে ঘা নিয়ে এরা একটা সময় পা রেখেছিল ভারতের ভূ-খণ্ডে। ভিসা ও পাসপোর্ট নিয়ে আশ্রয় চেয়েছিল ভারত সরকারের কাছে। চেয়েছিল সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকার অধিকার। নাগরিকত্ব আইন এই সব হিন্দুদের বুকে বল জোগাচ্ছে বলেই মনে করছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। নাগরিকত্ব আইনের সংশোধনী-তে এই সব হিন্দু উদ্বাস্তুরা শুধু নাগরিকত্ব এমনটা নয়, পাবে এক উজ্জ্বল জীবন, মানবতার সঠিক দিশা। ফলে, নাগরিকত্ব আইন নিয়ে স্বভাবতই আশার আলো জোগাচ্ছে মালা-ঈশ্বরলাল এবং রাজওয়ান্তি-সহ আরও হাজার হাজার হিন্দু উদ্বাস্তুদের মনে।   

Share this article
click me!

Latest Videos

‘Chinmoy Krishna-কে আমি মুক্ত করবোই’ নির্ভীক Bangladeshi আইনজীবী Rabindra Ghosh-এর চরম প্রতিশ্রুতি
‘এক প্রভু জেলে আছেন লক্ষ্য প্রভু তৈরি হয়ে গিয়েছেন’ Suvendu Adhikari-র তীব্র হুঙ্কার
আরে ওরা কি করবে, সেদিন আমি ওদের সামনে আরতি করে বুঝিয়ে দিয়েছি : শুভেন্দু | Suvendu Adhikari
বড়দিনের সন্ধ্যায় কলকাতার পার্ক স্ট্রিটে জনজোয়ার | Park Street Christmas | Kolkata News
Suvendu Adhikari Live : কোলাঘাটের মঞ্চে বিস্ফোরক ভাষণ শুভেন্দু অধিকারীর, সরাসরি | Bangla News