লিথিয়াম আবিষ্কার হলেও কি হাল ফিরবে জম্মু-কাশ্মীরের সালাল গ্রামের মানুষদের? চাকরি না পেয়ে হতাশ শিক্ষিত যুবকরা

গ্রামের প্রধানের বক্তব্য, সালাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মাণের সময় স্থানীয়রা চাকরি পেয়েছিল, কিন্তু প্রকল্পটি সম্পূর্ণ হয়ে গেলে এবং NHPC (ন্যাশনাল হাইড্রো পাওয়ার কর্পোরেশন) জায়গাটি ছেড়ে দেওয়ার ফলে তারা চাকরি হারায় এবং নতুন কিছু পায়নি। 

Web Desk - ANB | Published : Feb 18, 2023 7:30 AM IST

ফেব্রুয়ারী মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে, ভারতের জম্মু-কাশ্মীরের বৈষ্ণো দেবী মন্দির লাগোয়া পাহাড়ি এলাকায় চেনাব নদীর ধারে বিশ্বের বৃহত্তম এবং সবচেয়ে বিশুদ্ধ লিথিয়াম পাওয়া গিয়েছিল। জম্মু-কাশ্মীরের খনির সচিব অমিত শর্মা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন যে, সাধারণ মানের লিথিয়ামে প্রতি মিলিয়নে ২২০ পার্টস থাকে, ভারতের সালালে পাওয়া লিথিয়ামটিতে প্রতি মিলিয়নে রয়েছে ৫৫০ করে পার্টস। জম্মু ও কাশ্মীরে মোট ৫.৯ মিলিয়ন টন বা ৫৯ লক্ষ টন লিথিয়াম খোঁজ পেয়েছে ভূ-তাত্ত্বিক বিভাগ।

জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার টানা দুই বছরের কঠোর পরিশ্রমের শেষে এই আবিষ্কার এসেছে। এই দলের সাথে শ্রমিক হিসাবে কাজ করা একজন গ্রামবাসী জানিয়েছেন যে, দলটি কোভিড মহামারী চলাকালীনও কাজ করেছে এবং এই সময়ের মধ্যে এর একজন সদস্য মারাও গিয়েছেন তিন মাস আগে।

Latest Videos

সালালের সরপঞ্চ মহিন্দর সিং জানান যে, ১৯৮৪ সালের দিকে ওড়িশা সিমেন্ট কোম্পানি এই গ্রামে পাঁচটি পয়েন্ট খনন করেছিল। যদিও পরে তাদের কাছ থেকে কোনও আশার বার্তা শোনা যায়নি। তবে, স্থানীয়রা জানতেন যে তাঁদের গ্রাম খুব শক্ত পাথুরে ভূখণ্ড বিশেষ। “আমাদের পূর্বপুরুষরা মনে করতেন যে, এই পাথরে এক ধরণের লোহা রয়েছে এবং ভূমির ছোট ছোট টুকরোগুলিকে দেশের রিভলভার তৈরির জন্য বা বন্য প্রাণীদের দূরে রাখতে ছুরি হিসাবে ব্যবহার করতেন।”

সিং বলেছেন, পূর্বের অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে গ্রামবাসীদের কোনও উচ্চ প্রত্যাশা ছিল না। কিন্তু, জিএসআই যখন ১০ ফেব্রুয়ারি সালালে ৫.৯ মিলিয়ন মেট্রিক টন লিথিয়াম আবিষ্কারের বিষয়টি টুইট করেছিল, তখন আমরা আনন্দিত হয়েছিলাম। মহিন্দর সিং বলেছেন যে, “আমরা জানি যে এখানে লিথিয়াম খুবই বিশুদ্ধ। আমরা আরও বিশ্বাস করি যে, এর ভিতরে সোনার মতো অন্যান্য মূল্যবান ধাতুও থাকতে পারে।”

সালালের ডেপুটি সরপঞ্চ রাজেন্দর সিং বলেন, “এটি আমাদের সবার জন্য খুবই আনন্দের মুহূর্ত এবং আমরা গর্বিত। রেলওয়ে প্রকল্প এবং মাতা বৈষ্ণো দেবী মন্দিরের পরে, এই প্রকল্পটি স্থানীয়দের কর্মসংস্থানের প্রধান উৎস হতে চলেছে।" তবে একই সঙ্গে তিনি বলেন, খননকার্যের ফলে তাদের জীবনে কী ক্ষতি হবে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন গ্রামবাসীরা। সালালে প্রায় ৫ হাজার মানুষের বাস, যাঁরা সবসময় নিজেদের গ্রামের গুরুত্ব জানতেন। এখানে অবকাঠামো প্রকল্পের কারণে পুনর্বাসন হওয়াও তাঁদের কাছে নতুন নয়। গ্রাম থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে ধ্যানগড়ে ৬৯০ মেগাওয়াট সালাল বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং বকুলে এশিয়ার সর্বোচ্চ রেলওয়ে সেতু যা কাশ্মীর উপত্যকাকে ভারতের বাকি অংশের সাথে সংযুক্ত করবে, সেগুলি সালালের নামে নামাঙ্কিত হয়েছে। তার পরও উন্নয়ন হওয়া জনগণের থেকে দূরে রয়েছে এবং এখানে শিক্ষিত যুবকদের বেকারত্ব অনেক বেশি।

মহিন্দর সিং বলেছেন যে, সালাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মাণের সময় স্থানীয়রা চাকরি পেয়েছিল, কিন্তু প্রকল্পটি সম্পূর্ণ হয়ে গেলে এবং NHPC (ন্যাশনাল হাইড্রো পাওয়ার কর্পোরেশন) জায়গাটি ছেড়ে দেওয়ার ফলে তারা চাকরি হারায় এবং নতুন কিছু পায়নি। গ্রামবাসীরা নিজেদের প্রায় ৭০ শতাংশ কৃষি জমি হারিয়েছেন কৃত্রিম হ্রদে, যা রান-অব-দ্য-মিল সালাল জলবিদ্যুৎ প্রকল্পকে সফল করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। স্থানীয় সাংবাদিক বলবীর সিং আক্ষেপ করেন, "আমরা তখন থেকে বিদ্যুৎও ফিরে পাইনি।"

গ্রামবাসীদের এখন ছোট জমি আছে যেখান থেকে তারা গম, ভুট্টা এবং সবজি চাষ করেন পেট চালানোর জন্য। বলবীর সিং বলেন যে, গ্রামে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত বেশ কয়েকটি স্কুল রয়েছে এবং বেশিরভাগ যুবক শিক্ষিত এবং তারা এলাকায় কাজ করতে চায়, কিন্তু কোনও চাকরি নেই। দেবিন্দর সিং নামের একজন রাজনৈতিক কর্মী বলেছেন, "আমরা দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পেরে খুশি কিন্তু জাতির জন্য সময় এসেছে সেই লোকদের যত্ন নেওয়ার যাদের মাটিতে এই সাদা সোনা (লিথিয়াম) আবিষ্কৃত হয়েছে।

 

Share this article
click me!

Latest Videos

মহিলাদের সুরক্ষায় ‘অভয়া প্লাস’! রাজ্যপালের ২ বছর পূর্তিতে ৯টি প্রকল্পের সুভারম্ভ | CV Anand Bose
'ওদের টার্গেট মহিলা আর হিন্দু' তৃণমূল বিধায়কদের উপর হামলার কড়া প্রতিক্রিয়া শুভেন্দুর
'এই তৃণমূলকে উপরে ফেলব' মাদারিহাটে রাহুল লোহারের সমর্থনে প্রচারে গিয়ে হুঙ্কার শুভেন্দুর | Suvendu A
'চোর-চোর' তৃণমূলের পতাকা দেখেই জ্বলে উঠলেন শুভেন্দু! কি হল দেখুন | Suvendu Adhikari on TMC |
মহিলাদের নিরাপত্তায় বড় উদ্যোগ! ফ্রী ক্যারাটে প্রশিক্ষণ শিবির রাজ্যজুড়ে! | RG Kar