২০২৪ সাল বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কলঙ্কিত অধ্যায় হয়ে থাকবে। কোটা বিরোধী আন্দোলন যেভাবে ভারত বিদ্বেষ ও সংখ্যালঘু হিন্দুদের জবাই করার ধারাবাহিকতায় বদলে গেল, তাতে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে মুখ দেখাতে পারবে তো? রইল বাংলাদেশ অশান্তির টাইমলাইন
সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল দাবিতে উত্তাল হয় ঢাকা! সরকারের বিরুদ্ধে পথে নামে শিক্ষার্থীরা। এই দাবি নিয়ে সারাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা প্রতিনিধি বৈঠক হয়। তাঁদের দাবি, কোটা বিরোধী ইস্যু নিয়ে সংসদে আইন পাস না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। বিক্ষোভ দেখানোর সময় পুলিশের সঙ্গেও ঝামেলা বাধে ছাত্রছাত্রীদের।
কোটা বিরোধী আন্দোলন রূপ নেয় শেখ হাসিনা সরকার ফেলে দেওয়ার আন্দোলনে। রাজনীতির বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল আসে শহিদ মিনার এলাকায়। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রয়েছে দেশে সাধারণ মানুষ। সেখানেই হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান ওঠে।
বাংলাদেশের সবথেকে বেশি সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ৫ আগস্ট ক্ষমতা চ্যুত হয়ে তড়িঘড়ি বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন। ক্ষমতা হারানোর পর ভারতে আসেন হাসিনা। তাঁর C-130J হারকিউলিস ল্যান্ড করেছিল ভারতের হিন্দন বিমানঘাঁটিতে। সূত্রের খবর সেখানে প্রায় দুই দিন নিরাপদ আশ্রয়ে রাখা হয়েছিল। তারপরই সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।
গণআন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাঁচই অগাস্টের ওই ঘটনার তিনদিন পর শপথ গ্রহণের মাধ্যমে রাষ্ট্র ক্ষমতা গ্রহণ করে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার।
সম্প্রতি বাংলাদেশে বাংলাদেশি টাকার দাম, মাথা পিছু আয় , বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডার - সবই কমছিল। সেই সঙ্গে দ্রুত হারে বাড়ছিল মুদ্রাস্ফীতি আর বেকারত্ব। তাতেই বাংলাদেশের অর্থনীতির টালমাটাল অবস্থা তৈরি হতে পারে বলেও আশঙ্কা
একের পর উচ্চপদস্থ কর্তাদের পদত্যাগের হিড়িক
শেখ হাসিনার পতনের পর সরকারি, আধা-সরকারি, এমনকী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের পদত্যাগের হিড়িক দেখা যায়। কেউ কেউ স্বেচ্ছায় পদ ছাড়েন, আবার অনেক প্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ, অপমানসহ নানান চাপের মুখে কর্তা ব্যক্তিরা পদত্যাগে বাধ্য হন।
বাংলাদেশে তীব্র জাতীয় সঙ্গীত বদলানোর দাবি
বাংলাদেশ এবং ভারত দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীতই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা। এতদিন ওপার বাংলার আমার সোনার বাংলা গানটি জাতীয় সঙ্গীত আছে। কিন্তু এখন হাসিনার সরকারের পতনের পর তীব্র হচ্ছে সেদেশের জাতীয় সঙ্গীত বদলে ফেলার।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর অকথ্য অত্যাচার
উত্তপ্ত বাংলাদেশ। আক্রান্ত হিন্দুরা। নির্বিচারে চলছে ধরপাকড়, অত্যাচার। জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে হিন্দু ও সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, এমনটাই অভিযোগ। গ্রেফতার করা হয়েছে সাধু চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে। তার প্রতিবাদ যেমন হচ্ছে, তেমনই হিন্দুদের উপরে লাগাতার হামলার চিত্রও প্রকাশ্যে আসছে। বাংলাদেশে হিন্দু মন্দিরে সাম্প্রতিক হামলার জন্য ভারত তীব্র নিন্দা করেছে। সংখ্যালঘু হিন্দুদের বিভিন্ন জায়গায় টার্গেট করা হয়েছে। নয়াদিল্লি বারবার বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথে মাটিতে পাতা ভারতীয় পতাকা। সেই পতাকায় পা দিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করছে শিক্ষার্থীরা। ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে এই ছবি। ছবিটি ঘিরে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের জাতীয় পতাকার এভাবে অপমান, অবমাননার প্রতিবাদে গর্জে উঠেছে সকলে।
হিন্দু সম্প্রদায়ের অধিকার ও নিরাপত্তার জন্য ২৫ অক্টোবর ২০২৪ সালে চট্টগ্রামে সনাতন জাগরণ মঞ্চ কর্তৃক একটি সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এই সমাবেশে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার উপরে গেরুয়া পতাকা উত্তোলনের অভিযোগ ওঠে, যা জাতীয় পতাকার অবমাননা বলে বিবেচিত হয়। পুলিশের মতে, প্রতিবাদের সময় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার ওপর গেরুয়া পতাকা উত্তোলন করা রাষ্ট্রদ্রোহ। মামলা দায়ের এই ঘটনার পর চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দায়ের করা হয়। তাকে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করা হয়।