বর্তমান সঙ্কটের কারণে বাংলাদেশের জিডিপি ও অর্থনীতিতে পতনের সম্ভাবনা অবশ্যই আছে, তবে ৪ বছর আগেও এমন পরিস্থিতি ছিল না।
শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও পাকিস্তানের পর ভারতের আরেক প্রতিবেশী বাংলাদেশে এখন রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে রয়েছে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল পুরস্কার বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান করেছেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন। কিন্তু বাংলাদেশ ও ভারতের অর্থনীতিতে এর কী প্রভাব পড়বে জানেন কি? এই সঙ্কটের আগে বাংলাদেশের অর্থনীতি কীভাবে চাঙ্গা ছিল?
বাংলাদেশের জিডিপি প্রায় ১.৬ ট্রিলিয়ন ডলার। এটি বিশ্বের শীর্ষ-২৫ অর্থনীতির একটি। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আসে যখন দেশটি তৈরি পোশাক রপ্তানি শুরু করে। এর ভিত্তিতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নতুন দীপ্তি পায়।
৪ বছর আগে প্রতিটি চিত্র অসাধারণ ছিল
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বুঝতে হলে আমাদের কোভিড-পূর্ব সময়ে প্রায় ৪ বছর পিছিয়ে যেতে হবে। বর্তমান সঙ্কটের কারণে বাংলাদেশের জিডিপি ও অর্থনীতিতে পতনের সম্ভাবনা অবশ্যই আছে, তবে ৪ বছর আগেও এমন পরিস্থিতি ছিল না। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ .৯ শতাংশ। এটি ছিল বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির একটি।
২০২০ সালে কোভিড সংকট সত্ত্বেও, বাংলাদেশের জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ৩.৪ শতাংশ। বাংলাদেশ সরকার সম্প্রতি পেশ করা বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৬ .৭৫ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই বছরের জুনে, সরকার ২০২৪-২৫ এর জন্য ৭.৯৭ লাখ কোটি টাকা (বাংলাদেশের মুদ্রা) বাজেট পেশ করেছিল। এটি প্রায় ৬৮ বিলিয়ন ডলারের পরিমাণ।
বিশ্বব্যাংক তাদের এপ্রিলের প্রতিবেদনে বলেছিল, ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার হবে ৫.৭ শতাংশ। একইসঙ্গে আইএমএফও বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৫ . ৭ শতাংশ বলে অনুমান করেছে।
মাথাপিছু আয়ে ভারতের সমান
বাংলাদেশের অগ্রগতির গল্প শুধু জিডিপি প্রবৃদ্ধি দিয়ে শেষ হয় না। আসলে এখানকার সাধারণ মানুষও এর সুফল পেয়েছে। বাংলাদেশ, যেখান থেকে পাকিস্তান আলাদা হয়েছিল, 2015 সালে মাথাপিছু আয়ের দিক থেকে পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে।
এরপর ২০২০ সালে পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় প্রায় ভারতের সমান হয়ে যায়। যেখানে ভারতের অর্থনীতি আকারে বহুগুণ বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে, এটি প্রায় ৭৫৬ বিলিয়ন ডলার এবং এটি বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি।
এমনকি ২০২৪ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় প্রায় ২৬৫০ ডলার হতে চলেছে। যেখানে ভারতের মাথাপিছু আয় ২৭৩০ ডলার। কিছুদিন পর বাংলাদেশের ভোক্তা ভোগও ভারতের তুলনায় বাড়তে শুরু করবে। গত ৩ দশকে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ৪শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যেখানে সেখানে দারিদ্র্যের মাত্রা কমেছে। ২০০০ সালে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের মাত্রা ছিল ৪৮.৯শতাংশ, যা ২০১৬ সালের মধ্যে ২৪.৩ শতাংশ এ নেমে আসে।
পোশাক রপ্তানিতে 83শতাংশ শেয়ার রয়েছে
বাংলাদেশের অগ্রগতিতে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে পোশাক রপ্তানি। Zara, H&M, Levi’s… আপনি যেকোনো আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ব্র্যান্ডের নাম দেন। বাংলাদেশে তৈরি হয় না এমন কোনো ব্র্যান্ড কমই আছে। বাংলাদেশ বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। এখান থেকে প্রতি বছর প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। দেশের মোট রপ্তানির ৮৩শতাংশ আসে শুধু পোশাক ব্যবসা থেকে।
এটি একটি কারণ যে ভারতও তার তুলা রপ্তানির জন্য বাংলাদেশের উপর অনেক বেশি নির্ভর করে ভারত প্রতি বছর প্রায় ২.৪ বিলিয়ন ডলারের তুলা রপ্তানি করে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ভারতের মোট তুলা রপ্তানির মধ্যে বাংলাদেশে ছিল মাত্র ১৬.৮শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মধ্যে, বাংলাদেশের শেয়ার ৩৪.৯ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।
ভারত এই সুবিধা পেতে পারে
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দীর্ঘমেয়াদে ভারতের ক্ষতি করতে পারে কারণ সবচেয়ে বিশ্বস্ত প্রতিবেশীতেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে না। তবে তা অবিলম্বে ব্যবসায়িক পর্যায়ে ভারতকে উপকৃত করতে পারে। পোশাক শিল্পেও ভারতের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি রয়েছে। ভারত বিশ্বের ৬ষ্ঠ বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ।
এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থার কারণে আগামী ১৮ মাসে ভারতের পোশাক শিল্পের রপ্তানি ১০ থেকে ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ভারতের পোশাক রপ্তানি ২ থেকে ৩ বিলিয়ন ডলার বাড়তে পারে। ২০২৩-২৪ সালে এটি ছিল ১৪.৫ বিলিয়ন ডলার।