গোটা বিশ্বে যেভাবে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে তাতে ক্রমেই চিন্তার ভাজ গাড় হচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কপালে। গোটা দুনিয়ায় ইতিমধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ৭১ লক্ষ পেরিয়ে গিয়েছে। মারা গিয়েছেন ৪ লক্ষ ৭ হাজারের বেশি মানুষ। হু-র ডিরেক্টর টেড্রস আধানম জানিয়েছেন, গত ১০ দিনের মধ্যে ৯ দিনই বিশ্বে দৈনিক গড়ে ১ লক্ষ করে লোক এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। আর গত রবিবার আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লক্ষ ৩৬ হাজারের বেশি। এক দিনের হিসাবে যা এখনও পর্যন্ত রেকর্ড। এরমধ্যেই এবার অ্যাসিম্পটম্যাটিকদের নিয়ে নতুন তত্ত্ব দিল 'হু'।
নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত যে রোগীদের শরীরে কোনো উপসর্গ নেই অর্থাৎ যাঁরা ‘অ্যাসিম্পটম্যাটিক’, তাঁদের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়ানোর ঘটনা বিরল বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। অথচ এর আগে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছিলেন, করোনাজনিত কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ নিয়ে সবচেয়ে উদ্বেগের কারণ অ্যাসিম্পটম্যাটিক বা উপসর্গহীন রোগীরা। কেননা, উপসর্গহীন আক্রান্তদের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়ালে তা বোঝা যাবে না। তাই সংক্রমণ মোকাবিলা করা তখন কঠিন হয়ে যাবে। কিন্তু সোমবার সংবাদিক সম্মেলনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তারা জানালেন অন্য কথা।
ইউরোপ ছাড়া বাকি বিশ্বের পরিস্থিতি উদ্বেগের, এবার করোনার মূল কেন্দ্র হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়া
মাত্র ৩ মাসেই মারণ ভাইরাসের সঙ্গে লড়াইয়ে জিত, এবার করোনা মুক্ত রাষ্ট্র হল নিউজিল্যান্ড
মহামারীর বিশ্বে আরও কাছাকাছি হাসিনা-জিনপিং, বাংলাদেশকে করোনা মুক্ত করতে চিকিৎসক দল পাঠাল চিন
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ানোর পর থেকেই বহু বিশেষজ্ঞ বলছিলেন, অনেক অল্পবয়সি বা সুস্থ ও সবল ব্যক্তির মধ্যে হয়তো কোভিডের সংক্রমণ ঘটবে। কিন্তু তাদের শরীরে কোনো উপসর্গই দেখা যাবে না। বা দেখে গেলেও তা হবে খুবই মৃদু।
করোনার সংক্রমণের শুরু থেকেই দেখা গিয়েছে, এক জন মানুষ থেকে অন্য মানুষের শরীরে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। এমনকি কোনো করোনা আক্রান্তের শরীরে উপসর্গ না থাকলেও তার থেকে অন্যের শরীরে সংক্রমণ ছড়ানোর প্রমাণ মিলেছে। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সোমবার জানায়, এ ভাবে সংক্রমণ ছড়াতেই পারে, কিন্তু এটাই সংক্রমণ ছড়ানোর প্রধান উপায় নয়। উল্টে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইমার্জিং ডিজিজ বিভাগের প্রধান মারিয়া ভন কেরখোভ দাবি করলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত যে রোগীদের শরীরে কোনো উপসর্গ নেই তাদের থেকে সংক্রমণ খুব বেশি ছড়াচ্ছে না।
মারিয়া ভন কেরখোভ বলেন, ‘আমাদের কাছে যে তথ্য ও পরিসংখ্যান রয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে যে সব রোগীর শরীরে উপসর্গ নেই তাদের থেকে অন্য কারও শরীরে সংক্রমণ ছড়ানোর হার খুব কম। বলতে গেলে খুবই বিরল।’ তাঁর পরামর্শ, সরকারের উচিত যেসব করোনা আক্রান্ত মানুষের শরীরে উপসর্গ রয়েছে তাদের খুঁজে বের করা, আইসোলেশনে রাখা এবং চিকিৎসার বন্দোবস্ত করা।
উপসর্গহীন করোনা রোগীদের বিষয়ে মারিয়া বলেন, ‘এ ব্যাপারে আরও গবেষণা আরও পরিসংখ্যান দরকার। কারণ, আমাদের কাছে বেশ কয়েকটি দেশের থেকে তথ্য এসেছে। যারা খুব ভাল করে কনট্যাক্ট ট্রেসিং করেছে। তারা দেখেছে, অ্যাসিম্পটম্যাটিক পেশেন্টদের থেকে অন্যজনের শরীরে খুব বেশি সংক্রমণ ছড়াচ্ছে না। এটা খুবই বিরল।’
ভারতে ইতিমধ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২ লক্ষ ৬৬ হাজারের গণ্ডী ছাড়িয়ে গিয়েছে। আক্রান্তদের বিরাট অংশই 'অ্যাসিম্পটম্যাটিক’ অর্থাৎ উপসর্গহীন বলে আগেই জানিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই খবর ভারতে আনলক ১ চলার সময় কিছুটা হলেও দেশবাসীকে স্বস্তি দেবে।