প্রাক্তন আফগান তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রী নাকি জার্মানিতে সাইকেলে করে পিৎজা ডেলিভারি করছেন! তাঁর আবার অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জোড়া ডিগ্রিও রয়েছে।
এক বছর আগেও তিনি ছিলেন আফগানিস্তানের তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রী। আর এখন তিনি নাকি জার্মানির লিপজিগ শহরে পিৎজা ডেলিভারি করছেন! সম্প্রতি এক স্থানীয় সাংবাদিক জার্মানির ক্যামেরা বন্দি করেছেন প্রাক্তন আফগান মন্ত্রী সৈয়দ আহমদ শাহ সাদাত-কে। তাঁর সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। আল জাজিরা আরাবিয়াও সাদাতের সাইকেল চালিয়ে পিৎজা সরবরাহ করার ছবি টুইট করেছে।
ওই জার্মান সাংবাদিক টুইট করে জানিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে এক ব্যক্তির দেখা হয়েছিল, যিনি দাবি করেছিলেন যে তিনি ২ বছর আফগান যোগাযোগ মন্ত্রী ছিলেন। সাংবাদিক তাকে জিজ্ঞেস করেন, তিনি লিপজিগে কী করছেন? ওই ব্যক্তি জানিয়েছিলেন তিনি লিয়েফেরান্ডো সংস্থার হয়ে এসেন শহরে যাচ্ছেন খাবার ডেলিভারি করতে। লিয়েফেরান্ডো জার্মানির এক খাবার বিতরণকারী সংস্থা। ওই সাংবাদিকের কোলা ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়।
এরপর স্কাই নিউজ আরাবিয়া, সৈয়দ আহমদ শাহ সাদাত-কে খুঁজে বের করে। তিনি জানিয়েছেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ছবিগুলো তারই। স্কাই নিউজ-এর প্রতিবেদন অনুসারে, সাদাত জানিয়েছেন, দেশ ছাড়ার সময় তিনি যে সঞ্চিত অর্থ সঙ্গে করে এনেছিলেন, তা ফুরিয়ে গিয়েছিল। এরপরই তিনি লিভ্রান্ডো সংস্থার হয়ে খাদ্য সরবরাহের কাজ শুরু করেছিলেন।
২০১৮ সালে আশরাফ ঘানির নেতৃত্বাধীন আফগান সরকারে ক্যাবিনেট মন্ত্রী হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন সৈয়দ আহমদ শাহ সাদাত। দু'বছর তিনি আফগানিস্তানের তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ২০২০ সালে ঘানির সঙ্গেই মতবিরোধের কারণে তিনি পদত্যাগ করেন এবং গত ডিসেম্বরে মাসে জার্মানিতে পাড়ি দিয়েছিলেন। আশ্রয় নেন লিপজিগ শহরে।
সাদাত এখন পিৎজা ডেলিভারি করলেও, কমিউনিকেশন এবং ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং - দুটি বিভাগে তাঁর দুটি মাস্টার্স ডিগ্রি আছে। তাও এই ডিগ্রি দুটি লাভ করেছিলেন বিখ্যাত অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে। ২৩ বছর তিনি যোগাযোগ ক্ষেত্রে কাজ করেছেন। ১৩ টি দেশে ২০ টিরও বেশি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। যার মধ্যে ছিল সৌদি আরবের 'আরামকো' এবং 'সৌদি টেলিকম কোম্পানি'ও। আর যোগাযোগ ক্ষেত্রে তাঁর এই অভিজ্ঞতা তিনি কাজে লাগিয়েছিলেন দেশের উন্নয়নেও। ২০০৫ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানের যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের কারিগরি উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছিলেন তিনি।
একসময় নিরাপত্তা কর্মী পরিবৃত সাদাত, এখন সাইকেলে পিৎজা সরবরাহ করছেন - তাঁর জীবনের এই আমূল পরিবর্তনের কাহিনি এমন সময়ে সামনে এল, যখন আফগানিস্তানে চূড়ান্ত রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। গত ১৫ অগাস্ট, তালিবান যোদ্ধারা রাজধানী কাবুল দখল করে। প্রেসিডেন্ট ঘানি, পরের দিনই ইস্থপা দিয়ে দেশ ত্যাগ করেন। এখন তিনি সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে আছেন। এই বিষয়ে সাদাত স্কাই নিউজকে জানিয়েছেন, অসামরিক সরকারের এত দ্রুত পতন হবে, এমনটা তিনি কখনই আশা করেননি।