অতিমারির মধ্যে আইএমএফ ও বিশ্ব ব্যাঙ্কের বৈঠক, অর্থনীতিতে কি আলো দেখাবে?

  • করোনা মহামারির কারণে ভেঙে পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতি
  • বৈঠকে বসেতে চলেছে আইএমএফ আর বিশ্বব্য়াঙ্ক 
  • বিশ্বের আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় জোর
  • পাশে দাঁড়ানো হতে পারে দরিদ্র দেশগুলির 
     

Tapan Malik | Published : Oct 13, 2020 10:22 AM IST

বিশ্ব ইতিহাসের সবথেকে খারাপ সময়ের মধ্যেই সোমবার বৈঠকে বসছেন বিশ্ব অর্থনীতির অভিভাবকরা। জি-২০ভুক্ত দেশগুলিকে বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোর মেয়াদ শেষ হতে যাওয়া ঋণ পরিশোধ স্থগিতের আহ্বান জানিয়ে আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাঙ্ক তাদের বার্ষিক বৈঠকের আয়োজন করেছে।
আইএমএফ গত জুনে প্রকাশিত ২০২০ সালের বিশ্ব অর্থনীতি বৃদ্ধির পূর্বাভাসে গত মাসে সামান্য ঊর্ধ্বমুখী পরিবর্তনের কথা বললেও বিশ্ব অর্থনীতির পুনরুদ্ধার হতে সময় লাগবে এবং তা অসম হবে বলে আগেই সতর্ক করে দিয়েছিল
বিশ্বের এই ঋণদাতা সংস্থাটি সংকট মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে বিশ্বের প্রায় সবগুলি দেশের সরকারকে উৎসাহ দিয়ে আসছে, যদিও সংস্থাটি সতর্ক করছে যে জিডিপির শতাংশ হিসেবে ঋণ প্রথমবারের মতো প্রায় ১০০ শতাংশ বাড়বে।
আইএমএফের কর্মকর্তারা চলতি মাসের প্রথম দিকে শর্ত পূরণ করতে হিমশিম খাওয়া দেশগুলির জন্য ঋণ পুনর্গঠনের সংস্কার প্রস্তাব করে। সংস্থাটির ফার্স্ট ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর জিওফ্রে ওকামতোর মতে, এবারের বৈঠকের প্রধান প্রতিপাদ্য হবে ঋণের স্বল্পতা।
ডেট সার্ভিস সাসপেনশন ইনিশিয়েটিভের অধীনে গত এপ্রিল মাসে জি-২০ভুক্ত দেশগুলি দরিদ্র দেশগুলির কয়েকশো বিলিয়ন ডলার ঋণ মুকুফে সম্মত হয়। বিশ্বব্যাংকের মতে, এটা যে কেবল যথেষ্ট নয়; তাই নয় কারন বিরাট পতন ঠেকাতে উন্নত দেশগুলিকে আরো সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।
আইএমএফ দরিদ্র দেশগুলিতে অর্থের জোগান বাড়াতে ধনী দেশগুলির থেকে স্পেশাল ড্রইং রাইটস বা সঞ্চিত সম্পদ কীভাবে হস্তান্তর করা যায়, তার উপায় বের করার জন্য কাজ করছে। এসডিআরে ৫০০ বিলিয়ন ডলারের সমাণ তহবিল সৃষ্টির একটি প্রস্তাব গত এপ্রিলে সংস্থাটিকে সবচেয়ে বেশি অর্থ দেওয়া দেশ আমেরিকা অর্থ দেওয়া বন্ধ করে দেয়, যা ওই পরিকল্পনাটিকে কার্যকর করতে সমস্যায় ফেলে। 
আইএমএফের ভার্চুয়াল বৈঠকে আগামী বুধ ও বৃহস্পতিবার যথাক্রমে ফেডারেল রিজার্ভ পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যান রিচার্ড ক্ল্যারিডা এবং রান্ডাল কোয়ারলেসের বক্তৃতা দেওয়ার কথা। শুক্রবার আমেরিকার বিভিন্ন অর্থনৈতিক সূচক নিয়ে আলাকপাত করা হবে বলে জানা যায়।

এদিকে বাণিজ্য তথ্য মারফত জানা যাচ্ছে, চীনের রফতানি পুনরুদ্ধার অব্যাহত থাকার পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি তথ্য অনুযায়ী দেশে দাম বৃদ্ধিতে সামান্য পরিবর্তন দেখা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সপ্তাহজুড়ে ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া ও শ্রীলংকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতিসংক্রান্ত বৈঠক বসার কথাও রয়েছে। রিজার্ভ ব্যাংক অস্ট্রেলিয়ার গভর্নর আগামী বৃহস্পতিবার যে ভাষণ দেবেন, তার থেকে দেশটি আদৌ বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে কিনা, তার সংকেত পাওয়া যাবে এবং একই দিনে প্রকাশিত তথ্য থেকে দেশটির সেপ্টেম্বরের কর্মসংস্থানের ছবিটাও স্পষ্ট হবে।
চলতি সপ্তাহে ব্রিটেনের বাজারের তথ্যও প্রকাশ পাবে। এক্ষেত্রে যে কোনো ধরণের নিভে যাওয়া ছবি ব্যাংক অব ইংল্যাল্ড থেকে আরও বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়টিকে অনিবার্য করে তুলবে। একইভাবে সুইডেনে কাজ হারানোর প্রবণতা কমছে কিনা, তার তথ্যও প্রকাশ করবে। পূর্ব ইউরোপে পোল্যান্ড, চেক রিপাবলিক, রোমানিয়া ও সার্বিয়া মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশ করবে। পুরো ইউরোপ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলির কর্মকর্তারা আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের বৈঠকে অংশগ্রহণের পাশাপাশি অনেকে ভার্চুয়ালিও উপস্থিত থাকার কথা।
এদিকে সোমবার প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী দীর্ঘদিন ধরে চলা তুরস্কের চলতি হিসাব ঘাটতির প্রতিফলন ঘটেছে। অন্যদিকে বুধবার প্রকাশিত হতে যাওয়া ঘানার মূল্যস্ফীতি তথ্যে দাম বাড়া বা কমার ছবিটা ফুটে উঠবে। নাইজেরিয়া ও উগান্ডার মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতিও চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত তথ্যে জানা যাবে।
বিশ্বের এই দুটি সংস্থার চলতি সপ্তাহের বৈঠকে মেক্সিকো, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, চিলিসহ লাতিন আমেরিকার প্রকৃত অর্থনৈতিক ছবিটা যেমন দেখা যাবে পাশাপাশি সংকট মেটাতে কার্যকর কিছু পরামর্শও উঠে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তবে মনে রাখা দরকার, দুটি প্রতিষ্ঠানের নাম বা ধরন দেখে কাছাকাছি মনে হলেও আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। বিশ্বব্যাংক মূলত একটি উন্নয়ন সংস্থা। অন্যদিকে আইএমএফ একটি সমবায়মূলক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান যেটি মূলত বিভিন্ন দেশের দেনাপাওনার আন্তর্জাতিক হিসাবরক্ষক হিসেবে কাজ করে। বিশ্বব্যাংকের সদস্য হতে হলে কোনো দেশকে আগে আইএমএফ-এর সদস্য হতে হয়। তবে দুটোরই উদ্দেশ্য ভিন্ন, গঠন আলাদা, আর পুঁজির উৎসও অন্য।

Share this article
click me!