বৃহস্পতিবার সিউলের জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফ এক বিবৃতি প্রকাশ করে জানান, উত্তর কোরিয়া পূর্ব সাগরে একটি অজ্ঞাত ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। জাপান সাগরে এই পরীক্ষা হয়।
ইঙ্গিতটা আগেই দিয়েছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের (Washington) চাপানো নিষেধাজ্ঞা যে উত্তর কোরিয়া (North Korea) মানবে না, তা ঘোষণা করে দিয়েছিল পিয়ংইয়ং। সেই ইঙ্গিতের বাস্তবায়ন ঘটিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে একটি অজ্ঞাত প্রজেক্টাইল (unidentified projectile) উৎক্ষেপণ করল উত্তর কোরিয়া। এই নিয়ে চলতি মাসে ষষ্ঠবার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করল কিম জং উনের দেশ।
নেতা কিম জং উন এবং তৎকালীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে হাই-প্রোফাইল আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পরে, শেষবার উত্তর কোরিয়া এক মাসে এতগুলি অস্ত্রের পরীক্ষা করেছিল ২০১৯ সালে। তারপর থেকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর বৃহস্পতিবার সিউলের জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফ এক বিবৃতি প্রকাশ করে জানান, উত্তর কোরিয়া পূর্ব সাগরে একটি অজ্ঞাত ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। জাপান সাগরে এই পরীক্ষা হয়।
এর আগে, পিয়ংইয়ং মঙ্গলবার দুটি সন্দেহভাজন ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করে। এছাড়াও উত্তর কোরিয়ার পক্ষ থেকে ১৪ ও ১৭ জানুয়ারি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করে। তার আগে ৫ ও ১১ই জানুয়ারি হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করে। উত্তর কোরিয়ার এই ভূমিকা বিশ্ব জুড়ে নিন্দার ঝড় তুলেছে। এই ঘটনার নিন্দা করেছে রাষ্ট্রসঙ্ঘও। পিয়ংইয়ং ২০১৭ সাল থেকে আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বা পরমাণু পরীক্ষা করেনি।
গত সপ্তাহেই আমেরিকার বাইডেন প্রশাসন নতুন করে উত্তর কোরিয়ার উপরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এমনকী, যাতে উত্তর কোরিয়ার উপরে আরও কিছু অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞা চাপানো যায় তার জন্যও রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে তারা দরবার করবে বলেও জানিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। আর এতেই ক্ষিপ্ত উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন। উত্তর কোরিয়ার সংবাদসংস্থা কেসিএনএ জানিয়েছে, সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট কিম জং উন শাসকদল ওয়ার্কিং পার্টির পলিটব্যুরোর একটি বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে হাজির সকল সদস্য আমেরিকার সঙ্গে সমঝোতার পথে দেশ কতটা লাভবান হয়েছে সেই বিষয়টিকে নতুন করে মূল্যায়ণের পক্ষে মত দেন। বৈঠকে আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা নিয়ে তীব্র রোষও ব্যক্ত করা হয়। এই পলিটব্যুরোই প্রেসিডেন্ট কিম জং আন-এর নেতৃত্বে উত্তর কোরিয়ার মিলিটারি পলিসি-কে তৈরি করে। সুতরাং এই বৈঠকে হওয়া আলোচনা অতি গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
কেসিএনএ-আরও জানিয়েছে যে, বৈঠকে উপস্থিত সকল সদস্যই উত্তর কোরিয়ায় পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডারের সম্প্রসারণ এবং নতুন করে পরীক্ষা-নিরিক্ষার চালুর পক্ষেই মত দিয়েছে। কত দ্রুত এই পরমাণু পরীক্ষা চালু করা যায় তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে বৈঠকে। কেসিএনএ-এর রিপোর্টে আপাতত প্রমাদ গুনছে আন্তর্জাতিক মহল। একে চিন-তাইওয়ান ইস্যু নিয়ে জটিলতা বাড়ছে। তার সঙ্গে জুড়েছে ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কা। সেখানে উত্তর কোরিয়ার পদক্ষেপ নতুন করে আরও আন্তর্জাতিক সমস্যা তৈরি করবে বলেই মনে করা হচ্ছে।