একটা নয়, পরপর দুটো গ্রহাণু আছড়ে পড়েছিল পৃথিবীতে, লন্ডভন্ড করেছিল ৪০০ মিটার ব্যাসার্ধের পাথর

Published : Oct 06, 2024, 03:21 PM IST
একটা নয়, পরপর দুটো গ্রহাণু আছড়ে পড়েছিল পৃথিবীতে, লন্ডভন্ড করেছিল ৪০০ মিটার ব্যাসার্ধের পাথর

সংক্ষিপ্ত

আটলান্টিক মহাসাগরের নাদির 'গর্ত' গ্রহাণু আঘাতের ফলে সৃষ্টি হয়েছিল, মেক্সিকোর ইউকাটানে 'হত্যাকারী গ্রহাণু' আঘাতের সময়কালেই এই মহাদুর্যোগ ঘটেছিল   

পৃথিবীতে ডাইনোসরদের বিলুপ্তির জন্য দায়ী ছিল ৬৬ মিলিয়ন বছর আগে মেক্সিকোর ইউকাটান উপদ্বীপে আঘাত হানা একটি গ্রহাণু, এটাই এতদিন ধরে বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করে আসছিলেন। কিন্তু নতুন এক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, এই হত্যাকারী গ্রহাণু একা ছিল না, আরেকটি গ্রহাণুও প্রায় একই সময়ে পৃথিবীতে আঘাত হেনেছিল এবং ডাইনোসরদের বিলুপ্তিতে এরও ভূমিকা থাকতে পারে। 

আটলান্টিকের ছোট্ট খলনায়ক!

ল্যাটিন আমেরিকার দেশ মেক্সিকোর ইউকাটানে ৬৬ মিলিয়ন বছর আগে আঘাত হানা গ্রহাণুটিই পৃথিবী থেকে ডাইনোসরদের নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল বলে এতদিন ধরে ধারণা করা হত। কিন্তু নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, এই গ্রহাণুর সঙ্গে আরও একটি খলনায়কও একই সময়ে পৃথিবীতে আঘাত হেনেছিল। পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গিনির কাছে আটলান্টিক মহাসাগরে এই দ্বিতীয় গ্রহাণুটি আঘাত হেনেছিল বলে 'নেচার' জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে দাবি করা হয়েছে। গিনি উপকূলের কাছে অবস্থিত নাদির গর্তের উপর পরিচালিত গবেষণা থেকেই এই ঐতিহাসিক তথ্য উঠে এসেছে। 

২০২২ সালে আটলান্টিক মহাসাগরের তলদেশে বিশাল এক গর্তের সন্ধান পান এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন জিওলজিস্ট ড. উইসডিন নিকোলসন। তিনি এর নাম দেন নাদির গর্ত। সম্প্রতি এই গর্তের উপর পরিচালিত গবেষণা থেকেই এর রহস্য উন্মোচিত হয়েছে। ৮ কিলোমিটারেরও বেশি ব্যাসার্ধ নিয়ে আটলান্টিকের তলদেশে বিস্তৃত এই গর্ত। ডাইনোসরদের বিলুপ্তির জন্য দায়ী বলে মনে করা গ্রহাণুটির তুলনায় অনেক ছোট, মাত্র ৪০০ মিটার ব্যাসার্ধের একটি গ্রহাণুর আঘাতেই নাদির গর্তের সৃষ্টি হয়েছিল। ঘন্টায় ৭২,০০০ কিলোমিটার বেগে ধেয়ে আসা এই গ্রহাণুটি ৬৫-৬৭ মিলিয়ন বছর আগে আঘাত হেনেছিল বলে নিকোলসন তার গবেষণাপত্রে উল্লেখ করেছেন। 

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩০০ মিটার গভীরে অবস্থিত নাদির গর্তের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের জন্য অত্যাধুনিক থ্রিডি সিসমিক ইমেজিং প্রযুক্তি ব্যবহার করেছিলেন ড. উইসডিন নিকোলসন। এ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে ২০টিরও বেশি সমুদ্র গর্তের সন্ধান পাওয়া গেছে। তবে নাদির গর্তের মতো এত বিস্তারিত তথ্য অন্য কোনো গর্তের ক্ষেত্রেই পাওয়া যায়নি বলে নিকোলসন গর্বের সাথে উল্লেখ করেছেন। 

৮০০ মিটার উঁচু সুনামি

ঘন্টায় ৭২,০০০ কিলোমিটার বেগে ৪০০ মিটার ব্যাসার্ধের বিশাল এক পাথরখণ্ড যদি পৃথিবীতে আঘাত হানে, তাহলে কী ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। গ্রহাণুটি সমুদ্রে আঘাত করায় হয়তো সেই আঘাতের তীব্রতা কিছুটা কমে এসেছিল। কিন্তু আমাদের কল্পনার বাইরে গিয়ে এই গ্রহাণুর আঘাত আটলান্টিক মহাসাগরে ভয়াবহ প্রভাব ফেলেছিল বলে ড. উইসডিন নিকোলসন তার গবেষণাপত্রে উল্লেখ করেছেন। বিশাল গ্রহাণুটির আঘাতে আটলান্টিক মহাসাগরের তলদেশে তীব্র ভূমিকম্প হয়েছিল। নাদির গর্তের আশেপাশে হাজার হাজার বর্গমাইল এলাকা জুড়ে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ ও ভূমিধ্বসের সৃষ্টি হয়েছিল। শুধু তাই নয়, ৮০০ মিটারেরও বেশি উঁচু সুনামির ঢেউ আটলান্টিক মহাসাগরের বুকে তাণ্ডব চালিয়েছিল বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন। 

৬৬ মিলিয়ন বছর আগে মেক্সিকোর ইউকাটান উপদ্বীপে যে গ্রহাণুটি আঘাত হেনেছিল, তার ব্যাসার্ধ ছিল ৬-৯ মাইল। এই আঘাতের ফলে ১১২ মাইল প্রশস্ত এবং ১২ মাইল গভীর চিকসুলুব গর্তের সৃষ্টি হয়েছিল। ৬৬ মিলিয়ন বছর আগে ইউকাটান উপদ্বীপে গ্রহাণুটি আঘাত হেনেছিল বলেই আটলান্টিকে আঘাত হানা গ্রহাণুটিও ডাইনোসরদের বিলুপ্তির জন্য দায়ী হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভারত সহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাওয়া ডাইনোসরের জীবাশ্ম পরীক্ষা করেই ডাইনোসরদের বিলুপ্তির সময়কাল সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। শুধু ডাইনোসর নয়, ইউকাটানে গ্রহাণু আঘাতের ফলে আরও হাজার হাজার প্রজাতির প্রাণীর বিলুপ্তি ঘটেছিল।  

 

PREV
click me!

Recommended Stories

আওয়ামি লিগের যোগদান নিষিদ্ধ, বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচনের দিন ঘোষণা
গোপনীয়তা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ, পাকিস্তানের প্রাক্তন ISI প্রধানের জেল