দাঙ্গায় অগ্নিগর্ভ ফ্রান্সে প্রকাশ্যে আসছে বর্ণবৈষম্য, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিকল্পের সন্ধানে প্রশাসন

হিংসার আগুনে উত্তপ্ত প্যারিস। পরিস্থিতি এতটাই খাবর যে মন্ত্রিসভার বৈঠক ডাকতে বাধ্য হয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ।

 

Saborni Mitra | Published : Jul 1, 2023 4:38 PM IST / Updated: Jul 01 2023, 10:09 PM IST

ফ্রান্সের কয়েকটি শহর জুড়ে জ্বলছে বিক্ষোভের আগুন। ক্রমশই পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। হিংসার সঙ্গে লুঠপাট চলছে অবাধে। প্যারিসের বিক্ষোভ ইতিমধ্যেই ছড়াতে শুরু করেছে ফ্রান্সের অন্যান্য ছোট-বড় শহরে। ঘটনার সূত্রপাত পুলিশের গুলিতে ১৭ বছর বয়সী নাহেলের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিকল্প খোঁজার চেষ্টা করছে ফরাসি প্রশাসন। মঙ্গলবার প্যারিসের রাস্তায় নান্টের একটি ট্রাফিকের সামনে পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয়।

ফ্রান্সের সরকার জানিয়েছে কিছুটা হলেই হিংসা কমছে। যদিও শুক্রবার রাত পর্যন্ত ১৩১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রশাসনের তরফ থেকে একটি বিবৃতি জারি করে জানান হয়েছে, বিক্ষোভকারীরা এখনও পর্যন্ত ১৩৫০

টি গাড়ি ও ২৩৪টি বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। পাবলিক প্লেসে আড়াই হাজারেও বেশি অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটেছে।

ফ্রান্সের বৃহত্তম শহর মার্সেয়ের মেয়র বেনোইট পায়ান দেশের সরকারের কাছে বিক্ষোভকারীদের দমনের জন্য সেনা পাঠানোর আর্জি জানিয়েছেন। ফ্রান্সের তৃতীয় বৃহত্তম শহর লিয়নে ইতিমধ্যেই হেলিকপ্টার ও সেনা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। গোটা দেশেই পুলিশ ইউনিটের সঙ্গে মোতায়েন করা হয়ে নিরাপত্তা বাহিনী। ইতিমধ্যে প্রায় ৪৫ হাজার সেনা অফিসার মোতায়েন করা হয়েছে। ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড ডারমানিন জানিয়েছেন বিক্ষোভের কারণে এখনও পর্যন্ত ২০০ জন পুলিশকর্মী আহত হয়েছে। তিনি আরও জানিয়েছেন দাঙ্গাকারীদের গড় বয়স ১৭। লুঠপাট আর হিংসার কারণে সবথেকে খারাপ অবস্থা লিয়েন আর মার্সেই শহরের। গ্রেনোবল আর সেন্ট এটিনের কিছু অংশ পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হচ্ছে।

হিংসার আগুনে উত্তপ্ত প্যারিস। পরিস্থিতি এতটাই খাবর যে মন্ত্রিসভার বৈঠক ডাকতে বাধ্য হয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ সম্মেলনও বাতিল করেছেন। পাশাপাশি দাঙ্গাকারীদের সংযত করতে তাদের অভিভাবকদের কাছেও আর্জি জানিয়েছেন। ফরাসি সরকার পর্যটকদের হিংসার কেন্দ্রগুলি থেকে দূরে থাকতে পরামর্শ দিয়েছে। রাতে হোটেল থেকে না বার হলেও পরামর্শ দিয়েছে।

১৭ বছরের কিশোরের মৃত্যুর ঘটনার ভিডিও ও ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। তাতেই বিক্ষোভের আগুন জ্বলে ওঠে ফ্রান্সে। অনেকেই এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। তিনি বলেছেন, হিংসা বন্ধ করে শান্তির পথ খোঁজা জরুরি। কথা বলার মাধ্যমেই সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজতে হবে।

অন্যদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাত ৯টার পর থেকে হিংসারস্থলগুলিতে বাস ও ট্রাম চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে ফরসি সরকার। দাহ্য তরল ও আতসবাজি বিক্রিও বন্ধ করেছে প্রশাসন। তবে ফরাসি সরকার জানিয়েছে এখনই জরুরি অবস্থা জারি করা হচ্ছে না। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিকল্প পথের সন্ধান করছে সরকার।

ফরাসি সংবাদ সংস্থা জানিয়েছেন নাহেলের শেষকৃত্য অনুষ্ঠান রীতিমত উত্তজনাপূর্ণ অবস্থায় শেষ হয়েছে নান্টরেতে। প্রচুর মানুষের সমাগম হয়েছিল। মৃত নাহেলের মা জানিয়েছেন ফরাসি সরকারের বিরুদ্ধে তার কোনও অভিযোগ বা ক্ষোভ নেই। ফরাসি পুলিশ প্রশাসনকেও তিনি দায়ী করছেন না। তবে তিনি দায়ি করেছেন, সেই পুলিশ কর্মীকে যে ব্যক্তিগত হিংসা চরিতার্থ করতে তাঁর ছেলেকে হত্যা করেছে। সেই পুলিশ কর্মীর বিরুদ্ধে তিনি স্বেচ্ছায় হত্যারও অভিযোগ এনেছে। নাহেল ফ্রান্সের নম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। তার মৃত্যু ফ্রান্সের জাতিগত সমস্যাকে প্রকাশ্যে আলন। অনেকেই নাহেলের মৃত্য়ুকে সংখ্যালঘু ও গরীবদের ওপর ফরাসি পুলিশের অত্যাচার হিসেবেই তুলে ধরছে। কারণ নাহেল উত্তর অফ্রিকান বংশোদ্ভত পরিবারের সদস্য ছিল। তাই তার মৃত্যুতে বর্ণবাদ আর জাতিগত বৈষম্যই প্রকাশ্যে আসছে।

Share this article
click me!