তালিবানের মুখের ওপর সপাটে জবাব, গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তরে স্বর্ণপদক জয় করলেন আফগানিস্তানের তরুণী

আফগানিস্তানে অনেক আগেই নারীদের পড়াশোনার ওপর ইতি টেনে দিয়েছে তালিবান প্রশাসন। সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ভারতে এসে নিজেকে প্রমাণ করে দেখালেন রাজ়িয়া। 

Web Desk - ANB | Published : Mar 7, 2023 9:16 AM IST

গত ৩ বছর ধরে আফগানিস্তানে নিজের মা-বাবাকে দেখতে যেতে পারেননি ভারতে পাঠরত আফগান ছাত্রী। ২০২১ সালে শাসনক্ষমতা দখলের পর নারীদের পড়াশোনায় বেড়ি পরিয়েছে তালিবান সরকার। দেশের অগুন্তি নারীর ভবিষ্যৎ এখন অন্ধকারে। কিন্তু, ভারতের মাটিতে থেকে ভারত সরকারের সাহায্যে এক নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত তৈরি করলেন গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী। স্নাতকোত্তরে জিতে নিলেন স্বর্ণপদক।

অসাধ্য সাধন করে দেখিয়ে নিজের মাতৃভূমির উদ্দেশে রাজ়িয়া মুরাদি বলেন, “আমি আফগানিস্তানের নারীদের প্রতিনিধিত্ব করছি, যাঁরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। আমি তালিবানদের জানাতে চাই যে, সুযোগ পেলে নারীরাও যে কোনও ক্ষেত্রে পারদর্শী হতে পারে।” সোমবার দক্ষিণ গুজরাটের বীর নর্মদ বিশ্ববিদ্যালয় (ভিএনএসজিইউ)-এর সমাবর্তন অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন বিষয়ে এমএ-তে স্বর্ণপদক জিতে নিলেন এই আফগান তরুণী। ৮.৬০ ক্রমবর্ধমান গ্রেড পয়েন্টে সর্বোচ্চ স্কোর করেছেন রাজ়িয়া ।

তিনি ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে নিজের এমএ সম্পন্ন করেছেন এবং এখন জনপ্রশাসন বিষয়ে পিএইচডি করছেন। ভারতে আসার পর, কোভিড লকডাউনের কারণে তিনি অনলাইন মোডে পড়াশোনা শুরু করেছিলেন। প্রথম দুই সেমেস্টারে তাঁর বেশিরভাগ ক্লাস এবং পরীক্ষা অনলাইনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। “আমি নিয়মিত শিক্ষকদের বক্তৃতায় অংশ নিতাম এবং আমার পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতাম। আমি পরীক্ষার কয়েকদিন আগে পড়াগুলো রিভাইস করে নিতাম।" স্বর্ণপদক ছাড়াও সমাবর্তন অনুষ্ঠানে শারদা অম্বেলাল দেশাই পুরস্কার জিতেছেন রাজ়িয়া মুরাদি।

তালিবানদের কটাক্ষ করে তিনি বলেছেন যে, এটা লজ্জাজনক যে, তারা মেয়েদের এবং মহিলাদের আনুষ্ঠানিক শিক্ষাগ্রহণ থেকে নিষিদ্ধ করেছে। আরেকদিকে, VNSGU বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি নিজের অনুগ্রহ ফিরিয়ে দিতে প্রবল আগ্রহী এই শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, "আমাকে এই সুযোগ দেওয়ার জন্য আমি ভারত সরকার, ICCR, VNSGU এবং ভারতের জনগণের কাছে কৃতজ্ঞ।"

স্বর্ণপদক জিতেও আক্ষেপ রয়েছে রাজিয়ার মনে, “পদক পেয়ে আমি খুশি ঠিকই, কিন্তু তিন বছর ধরে আমার পরিবারের সাথে দেখা হচ্ছে না বলে আমি দুঃখিত। সুখবরটা আমি ফোনে জানাব এবং তারা খুশি হবে”। আফগানিস্তানের প্রায় ১৪ হাজার শিক্ষার্থী এখন ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশনস (ICCR) এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বৃত্তি সহায়তায় ভারতে পড়াশোনা করছেন। যোগ্যতা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তাঁরা উচ্চশিক্ষার জন্য ভারতে আসেন। তাদের দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে পুরুষ সহ প্রত্যেক শিক্ষার্থীকেই ভারতে থাকার অনুমতির মেয়াদ বাড়িয়েছে ভারত সরকার।

মুরাদি প্রথমে দুই বছরের এমএ প্রোগ্রামের জন্য ভারতে এসেছিলেন, কিন্তু তালিবানরা সেসময় তাঁর দেশ দখল করে নেওয়ায় আর আফগানিস্তানে ফিরে যেতে পারেননি। "আমার সাফল্যের মাধ্যমে, আমি আফগানিস্তানের মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে চাই। আমিও চাই যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করবে এবং দেখবে, যাতে আফগানিস্তানের নাগরিকরাও অন্যান্য দেশের মানুষদের মতোই স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করতে পারে।" মাতৃভূমির উদ্দেশে তিনি বলেন, "আমি ফিরে যেতে চাই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আফগানিস্তানে ফিরে যাব এবং আমার মাতৃভূমির জন্য কাজ করব।"

আরও পড়ুন-

৭ মার্চ তারিখটার সঙ্গে জড়িয়ে আছে বিষণ্ণতার স্মৃতি, একের পর এক মর্মান্তিক বিস্ফোরণে জর্জরিত হয়ে পড়েছিল ভারত
হরিদেবপুরে প্রকাশ্য রাস্তায় চিৎ হয়ে পড়ে রয়েছেন তরুণী, দোল উৎসবের শুরুতেই কলকাতায় ছন্দপতন
কুন্তলের অ্যাকাউন্ট থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা ঢুকেছিল ‘বান্ধবী’ সোমার অ্যাকাউন্টে, তারপরেও খোঁজ পাওয়া গেল যুবনেতার অগুন্তি ‘বান্ধবী’র

Share this article
click me!