বাদাবনের ডাক্তারবাবু তিনি। সোঁদামাটির মানুষগুলোকে বলতে গেলে বিনি পয়সায় চিকিৎসা করেন। গলায় স্টেথো ঝুলিয়ে শুধু রোগ দেখাই নয়, সেইসঙ্গে হদদরিদ্র মানুষগুলোকে ওষুধও তুলে দেন। দীর্ঘদিন ধরে। তবে এতদিনে তাঁর কাজের স্বীকৃতি পাচ্ছেন বিরাটির ডাক্তার অরুণোদয় মণ্ডল। বাংলার চিকিৎসক হিসেবে এবার পদ্মশ্রী পাচ্ছেন তিনি।
প্রতি শনিবার তিনি বিরাটির বাড়ি থেকে রওনা হন সুন্দরবনের উদ্দেশে। বাড়ি থেকে বেরিয়ে স্টেশন। তারপর সেখান থেকে ট্রেন পাল্টে হাসনাবাদ লোকালে উঠে পড়া। সঙ্গে ঢাউস ব্য়াগ।ওই ব্য়াগেই রয়েছে প্রচুর ওষুধ। হাসনাবাদ স্টেশনে নেমে ভ্য়ান রিকশায় করে ফেরিঘাট। সেখান থেকে নৌকায় নদী পার হওয়া। তারপর বাসে দেড় ঘণ্টার পথ লেবুখালি। তারপর আবার নৌকায় রায়মঙ্গল নদী পার। দুলদুলির ঘাট থেকে অটোতে করে সাহেবখালি গ্রাম পঞ্চায়েতের দায়পাড়া। সেখানে তাঁর ডিসপেনসারির নামও ভারি চমৎকার, সুজন চিকিৎসা কেন্দ্র। সেই 'সুজন ডাক্তার'ই এবার পেতে চলেছেন পদ্মশ্রী।
এবার এই রাজ্য় থেকে এমন চিকিৎসকরাই পদ্মশ্রী পাচ্ছেন, যাঁরা সে অর্থে নেপথ্য়েই কাজ করে চলেছেন। ডাক্তার হিসেবে কর্পোরেট হাসপাতালের সঙ্গে তাঁরা যুক্ত নেই। একেবারে বিনা পয়সায় বা নামমাত্র টাকায় গরিব মানুষদের চিকিৎসা করে চলেছেন তাঁরা দিনের-পর-দিন। অরুণোদয়বাবুর মতোই এবার বোলপুরের এক চিকিৎসক পাচ্ছেন পদ্মশ্রী। তাঁকে লোকে 'এক টাকার ডাক্তার' বলেই চেনে। তিনি সুশোভন বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। গত পাঁচদশক ধরে তিনি একটাকায় রোগী দেখে চলেছেন নাগাড়ে, রাঢ বাংলার মাটিতে। যদি তাঁকে প্রশ্ন করেন, এই বাজারে তো একটাকায় কিছুই হয় না, তাহলে? উত্তরে তিনি বিনীতভাবে হেসে বলবেন, "এর বেশি আর চাওয়া যায় না ওই মানুষগুলোর কাছ থেকে।" এই একটাকার রহস্য়টাও তিনি পরিষ্কার করলেন। একদিন তিনি পথ চলতে চলতে দেখতে পেয়েছিলেন, কয়েকজন হতদরিদ্র মানুষ গামছা পেতে বলে মুড়ি খাচ্ছেন। দেখে বড় মায়া হয়েছিল তাঁর। তারপর আর নিজেকে সামলাতে পারেননি তিনি। তারপর থেকে ঝকঝকে কেরিয়ার আর চকচকে বেঁচে থাকাকে একপাশে সরিয়ে রেখে তিনি ১ টাকায় রোগী দেখতে শুরু করেন বোলপুরে। বোলপুর তাঁর জন্মভূমি। সম্প্রতি জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনে যখন সরকারি হাসপাতালের পরিষেবা স্তব্ধ ছিল, তখন বোলপুরের হরগৌরীতলায় তাঁর হলুদ রঙের দোতলা বাড়ি ছিল সবার জন্য় অবারিত দ্বার। সত্য়ি তো, ঈশ্বরের দরজা তো সবার জন্য়ই খোলা।
এবার অরুণোদয় মণ্ডল বা সুশোভন বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের মতো চিকিৎসকরা সম্মানিত হওয়ায় অনেকেই খুব খুশি।