কথায় বলে 'কোন মানুষের ডিগ্রি কেবল একটি কাগজ মাত্র, তা কখনোই তার প্রকৃত শিক্ষার পরিচয় নয়'। যদিও এখনকার সমাজে দাঁড়িয়ে সেই ধারণা আমরা কতটা মেনে চলি সেই নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় কোনো মানুষ অন্তঃসারশূন্য হলেও তার কাছে গালভরা ডিগ্রি থাকলে তিনি সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠেন, এদিকে কোনও একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে সব রকম জ্ঞান অর্জনকারী কোনও ব্যাক্তিও সব সময় সকলের কাছে পাত্তা পান না, ওই ডিগ্রির অভাবে। অর্থাৎ মানুষ ক্রমশ অন্তরবস্তু কে গুরুত্ব দেওয়া কমাচ্ছে। এই জায়গা থেকে দাঁড়িয়েই বোসপুকুর শীতলা মন্দির এবার নির্বাচন করেছেন তাদের থিম।
আরও পড়ুন- বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবের তোড়জোড় এখন জোড়কদমে, এমনই পরিকল্পনায় ৬৬ পল্লী
এ বছর তাদের থিম গড়ে উঠছে এই নির্দিষ্ট বিষয়টিকে কেন্দ্র করেই। এবছর তাদের থিমের ট্যাগলাইন "খুঁজে দেখো মনের আলো"। মুলত শিশুদের পড়াশুনোর দিক থেকেই এই বিষয়ের ওপর আলোকপাত করা হবে। প্রত্যেকটি শিশুর মনেরই ভাবনাচিন্তার একটি নির্দিষ্ট অভিমুখ থাকে, থাকে মৌলিক স্বতন্ত্রতা। সেই স্বতন্ত্রতাকে চেপে দিয়ে তাদের ওপরে জোর করে কিছু চাপিয়ে দিলে তারা তা সহজে মেনে নিতে পারবে না, এর ফলে তারা মানসিক অবসাদের স্বীকারও হতে পারে। প্রত্যেক মা বাবা কে বুঝতে হবে পুঁথিগত বিদ্যা কখনোই অন্তর্জগৎ কে আলোকিত করে তুলতে পারেনা। এই খুঁটিনাটি বিষয় গুলিই ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হবে মণ্ডপে। বোসপুকুর শীতলা মন্দিরের মণ্ডপ সজ্জার সঙ্গে যুক্ত দেবাশীষ গুছাইত জানিয়েছেন তাদের মণ্ডপটি সাজিয়ে তোলা হবে শিশুদের পড়াশুনার নানারকম এবং বিভিন্ন আকারের সরঞ্জাম দিয়ে।
আরও পড়ুন- বিদ্যাসাগর স্মরণে এবার পুজোয় সেজে উঠছে মুকুন্দপুর সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি
মণ্ডপ সজ্জার জন্য ব্যবহৃত একটি বিশাল পেন আলাদা করে দর্শনার্থীদের নজর কাড়বে। প্রায় ৬ মাস ধরে কারখানায় শুরু হয়েছিল মণ্ডপ তৈরির উপকরণ তৈরির কাজ। শিল্পী পরিমল পালের তত্ত্বাবধানে ধ্যানমগ্ন কায়দায় প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে, এবং এর সঙ্গে প্রতিমায় সাবেকিয়ানার ছোঁয়াও বর্তমান থাকবে। পুজোর জেনারেল সেক্রেটারি সুদীপ বর্মন জানিয়েছেন খুব সম্ভবত দ্বিতীয়াতেই হতে চলেছে পুজোর উদ্বোধন। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং পুজোর উদ্বোধন করবেন, তাই মহালয়ার আগেই মণ্ডপসজ্জা সম্পর্কিত যাবতীয় কাজ শেষ করে ফেলতে চাইছেন তারা। তিনি আরো জানিয়েছেন এবারে তাদের পুজোর বাজেট প্রায় ২৫ লাখ টাকা। যার মাধ্যমে প্রতিমা এবং মণ্ডপ তৈরি বাদ দিয়েও পুজোর দিনগুলিতে এলাকার দুঃস্থ বাচ্চাদের এবং ওই এলাকায় কর্মরত পুলিশদের খাওয়ানোর ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।
এবারের পুজোয় অন্য সমস্ত বিখ্যাত পুজোগুলির সঙ্গে দেখতে ভুলবেন না বোসপুকুর দুর্গোৎসব পুজো কমিটি পরিচালিত এই অভিনব থিমের দুর্গোৎসবটি।