দীর্ঘ দিন ধরে রীতি মেনে চিকিৎসকদের হিপোক্রেটিক ওথ নিতে হয়। এতদিন তা নিতে হতো ইন্টার্নশিপ শুরু হওয়ার আগে। এই বছর হঠাৎ করে সেই নিয়মে দেখা যায় পরিবর্তন। প্রথম বর্ষের হবু চিকিৎসকদের হিপোক্রেটিক ওথের বদলে পাঠ করানো হল চরক শপথ। আর তারপরই গোটা ঘটনা ঘিরে একেবারে শোরগোল পড়ে যায়। শুরু হয় বিতর্ক।
সোমবার কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে (Calcutta Medical College) প্রথম দিনের ক্লাসের শুরুতেই বিভ্রাট। শপথ গ্রহণকে কেন্দ্র করে শুরু হয় ঝামেলা। প্রসঙ্গত, দীর্ঘ দিন ধরে রীতি মেনে চিকিৎসকদের হিপোক্রেটিক ওথ (Hypocretic Oath) নিতে হয়। এতদিন তা নিতে হতো ইন্টার্নশিপ শুরু হওয়ার আগে। গ্রিক চিকিৎসক হিপোক্রেটসের নামাঙ্কিত শপথে (Hypocretic Oath) চিকিৎসকের ধর্ম পালনের কথা দেন ডাক্তারবাবুরা। কিন্তু এই বছর হঠাৎ করে সেই নিয়মে দেখা যায় পরিবর্তন। প্রথম বর্ষের হবু চিকিৎসকদের হিপোক্রেটিক ওথের বদলে পাঠ করানো হল চরক শপথ। আর তারপরই গোটা ঘটনা ঘিরে একেবারে শোরগোল পড়ে যায়। শুরু হয় বিতর্ক (Controversy)।
সোমবার এই ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখায় এআইডিএসও, মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টার। হিপোক্রেটিক ওথ-এর বদলে চরক শপথ (Charak Oath) নেওয়ার প্রাথমিক প্রস্তাব এসেছিল আগেই। এই প্রস্তাবকে ঘিরে তৈরি হয় নানান জল্পনা-কল্পনা। যদিও তা নিয়ে চূড়ান্ত কোনও নির্দেশিকা এখনও পাঠায়নি ন্যাশনাল মেডিক্যাল কাউন্সিল (National Mediacal Council)। উল্লেখ্য, যিনি শপথ পাঠ (Oath) করিয়েছেন তিনি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের (Calcutta Mediacl Colleage) অধ্যক্ষ ডা. রঘুনাথ মিশ্র। তিনি জানিয়েছেন, এনএমসির (NMC) গাইডলাইন মেনেই চরকের নামে শপথ নেওয়া হয়েছে। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কাউন্সিলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই চড়ক শপথ করিয়ে ফেললেন অধ্যক্ষ ডা. রঘুনাথ মিশ্র।
আরও পড়ুন-এবার জিএসটি-র আওতায় অনলাইন মেডিক্যাল কোর্স, ঘোষণা কর্ণাটক এএআর-এর
আরও পড়ুন-ভাঙা পা ভুলে ৬৫-র প্রৌঢ়ার সুস্থ পায়ে হল প্লাস্টার, মারের ভয়ে পুলিশকে আগাম জানালো জেলা হাসপাতাল
আরও পড়ুন-ব্যাংকে বাংলা ভাষায় পরিষেবার দাবি, কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ বাংলা পক্ষ
সোমবার কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের এই ঘটনার পর চিকিৎসক মহলে তৈরি হয়েছে শোরগোল। সেই সঙ্গে লেগেছে রাজনীতির রং-ও। তৃণমূল সাংসদ (TMC MP) শান্তুনু সেন জানিয়েছেন, বিষয়টাই যেখানে বিবেচনার স্তরে সেখানে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ কেন এই কাজটা করতে গেল সেটা তাঁর বোধগম্য হয় নি। বিষয়টি খুবই অস্বস্তিকর বলে দাবি করেন তিনি। অন্যদিকে আবার বিজেপি নেতা চিকিৎসক ডা. ইন্দ্রনীল খান যদিও এতে অস্বস্তির কিছু দেখছেন না। তাঁর কথায়, মডার্ন মেডিসিন শুধু পাশ্চাত্য চিকিৎসা বিজ্ঞানে আবদ্ধ নয়। প্রাচ্যের চিকিৎসাবিদ্যাও তার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। মেডিক্যাল কলেজে চরকের নামে শপথ নিয়ে এই সত্যিটাকেই মান্যতা দেওয়া হল। ব্রিটিশরা এদেশে হিপোক্রেটিক ওথ চাপিয়ে দিয়েছিল। এক স্বদেশী চিকিৎসকের নামে শপথ নিয়ে সেই শৃঙ্খল ভাঙাকে সমর্থন করলেন ডা. ইন্দ্রনীল খান।
বস্তুত, চিকিৎসা (Medical Sector)পেশায় আসার আগে গোটা বিশ্বেই শপথ নেওয়ার প্রচলন রয়েছে। মূলত গ্রিক চিকিৎসক হিপোক্রেটসের নামাঙ্কিত শপথই পাঠ করা হয় সর্বত্র। সেটিই হিপোক্রেটিক ওথ বা শপথ নামে পরিচিত। অন্যদিকে আবার প্রাচীন ভারতের চিকিৎসার জনক বলে পরিচিত মহর্ষি চরক। চিকিৎসক সংগঠন মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টারের জেলা সম্পাদক ডা. বিপ্লব চন্দ্র জানিয়েছেন, সোমবার এই ঘটনার মধ্যে দিয়ে চিকিৎসা পেশাতেও গৈরিকীকরণ শুরু হল তা বলাই যায়।