জঙ্গলমহলের স্বাস্থ্য় সংক্রান্ত হেন কাজ নেই যে তাঁদের করতে হয় না। বিশেষ করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কোথাও ডেঙ্গুর মশা জমেছে কিনা তার খোঁজ নেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজের গুরুভার তাঁদেরই ওপর। অথচ তাঁরা তাঁদের প্রাপ্য় স্বীকৃতি তাঁরা পাচ্ছেন না বলে জেলা স্বাস্থ্য়ভবনের সামনে প্রায় একমাস ধরে ধরনায় বসেছেন। স্বাস্থ্য় দফতরেরর পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত তাঁদের দাবিদাওয়া নিয়ে কেউ আলোচনায় বসেনি বলে খবর। তাই কার্যত লাটে উঠতে বসেছে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
পুরুলিয়ার বান্দোয়ান, বাঘমুন্ডি, বরাবাজার, বলরামপুর, নিতুরিয়ার মতো বিভিন্ন ব্লকে রয়েছেন ৫০ জন কর্মী। ২০১০ সালে কেন্দ্রীয় সরকার জাতীয় পতঙ্গবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি বা এনভিডিসিপি প্রকল্পের অধীনে চুক্তির ভিত্তিতে এঁদের নিয়োগ করেন। শুধু পুরুলিয়াতে নয়, অন্য়ান্য় জেলাতেও এই প্রকল্পে বেশ কিছু কর্মী নিয়োগ করা হয়। ২০১২ সাল থেকে তাঁদের রাজ্য় সরকারের স্বাস্থ্য় দফতরের অধীনে স্বাস্থ্য়কর্মীদের স্বীকৃতি দেওয়ার কথা থাকলেও এই জেলায় তা মানা হয়নি বলে দাবি।
বাঘমুন্ডির বীরগ্রাম উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উদয় কুমার বা বান্দোয়ানের কুচিয়া উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অমিত গঙ্গোপাধ্য়ায়ের কথায়, প্রথমে মাসিক ৬ হাজার টাকার চুক্তিতে কাজ শুরু করলেও ২০১২ সালে এই বেতন বেড়ে ১৩৮০০ টাকা হয়। কিন্তু তারপর থেকে এই বেতনই চলছে। গত সাতবছরে আর বেতন বাড়েনি। বান্দোয়ানের কুমড়া উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বহুমুখী স্বাস্থ্য কর্মী বিদ্যুৎ মোদক জানান, "বিগত ১০ বছর ধরে আমরা চূড়ান্ত প্রতিকূল পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য দফতরের হয়ে অক্লান্ত পরিষেবা দিয়ে আসছি, কিন্তু আজ বুঝতে পারছি আমরা বঞ্চিত হলাম।"
স্বীকৃতিহীন ওই স্বাস্থ্য়কর্মীদের বিক্ষোভ প্রায় একমাস ধরে চলছে পুরুলিয়া শহরের জেলা স্বাস্থ্য়ভবের সামনে। বেতনবৃদ্ধি, স্থায়ীকরণ, স্বাস্থ্য় দফতরের কর্মী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার মতো নানা দাবিতে তাঁরা বিক্ষোভ করলেও আজ অবধি কোনও পদক্ষেপ নেয়নি স্বাস্থ্য দফতর। ৫০ জন বিক্ষোভকারীর অন্য়তম অমিত গঙ্গোপাধ্য়ায়ের বক্তব্য, "সেসময় এই কাজে নিযুক্তির ন্য়ূনতম যোগ্যতা ছিল বিজ্ঞান বিষয় নিয়ে উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ। আমাদের মধ্য়ে অনেকেই রয়েছেন যাঁরা বিজ্ঞানের স্নাতক। জীবনের মূল্যবান দশটা বছর স্বাস্থ্য়ের মতো জরুরি পরিষেবা দিয়েও কোনও স্বীকৃতি না পেয়ে আমরা বঞ্চনার শিকার।"
আনন্দ মাহাতো, উদয় কুমার, বিশ্বনাথ সিং মুড়ারা এখনও বেতন পেলেও সিঁদুরে মেঘ দেখছেন। তাঁদের আশঙ্কা, নির্দির্ষ্ট এক খাত থেকে আসে এইসব বহুমুখী স্বাস্থ্য কর্মীদের বেতনের জন্য। তবে কর্মী হিসেবে এখনও স্বীকৃতি না পাওয়ায় অদূর ভবিষ্যতে বেতন বন্ধ হয়ে গেলেও অবাক হয়ে যাওয়ার কিছু নেই।
এদিকে প্রশ্ন উঠেছে, জেলা স্বাস্থ্য় দফতর কেন এই ৫০জন কর্মীর সঙ্গে আলোচনা করে সমস্য়া মিটিয়ে নিচ্ছেন না। কারণ, এঁদের হাতে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। বাড়ি বাড়ি গিয়ে দেখতে হয় এঁদের ডেঙ্গুর মশা ডিম পাড়ল কিনা, কোথাও কেউ পতঙ্গবাহিত রোগে অসুস্থ হয়ে পড়লেন কিনা। তাই মাসখানেক ধরে এঁদের বিক্ষোভে এমন গুরুতর সব কাজ কার্যত লাটে উঠেছে। অতএব যত তাড়াতা়ড়ি সম্ভব এঁদের সঙ্গে বসা দরকার স্বাস্থ্য় দফতরের কর্তাদের, মত স্থানীয় মানুষদের।