বিরোধী কণ্ঠও শোনা যায়, মমতাকে বার্তা দিয়ে যাদবপুরে দৃষ্টান্ত স্থাপন ধনখড়ের

  • উত্তাল ছাত্র বিক্ষাভে ইতি টানলেন নিজেই
  •  যাদবপুরে বিক্ষোভকারী ছাত্রদের প্রশ্নের উত্তর দিলেন রাজ্য়পাল
  •  প্রবীণ শরীরে ঠায় দাঁড়িয়ে নবীনদের পড়ালেন গান্ধিগিরির পাঠ
  •  বেনজির প্রশ্ন-উত্তর পর্বের সাক্ষী রইল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়
     

Tapas Dutta | Published : Dec 23, 2019 6:22 PM IST / Updated: Dec 23 2019, 11:53 PM IST

উত্তাল ছাত্র বিক্ষাভে ইতি টানলেন নিজেই। 'পালিয়ে না গিয়ে' যাদবপুরে বিক্ষোভকারী ছাত্রদের প্রশ্নের উত্তর দিলেন রাজ্য়পাল। প্রবীণ শরীরে ঠায় দাঁড়িয়ে নবীনদের পড়ালেন গান্ধিগিরির পাঠ। বেনজির প্রশ্ন-উত্তর পর্বের সাক্ষী রইল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়।

তিনি এলে বিক্ষোভের আগুনে যে ঘি পড়বে, তা বিলক্ষণ জানতেন রাজ্য়পাল জগদীপ ধনখড়। কিন্তু সব জেনেও বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজ্য়পালের গাড়ি ঢোকে কোর্ট মিটিংয়ের কিছু সময় আগে। কালো পতাকা, ব্যানার নিয়ে রাজ্য়পালকে 'স্বাগত জানায়' পড়ুয়া, শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীরা। রাজ্যপাল বিশ্বিদ্যালয় চত্বরে ঢুকতেই ঘিরে ধরা হয় ধনখড়ের গাড়ি। সিএএ-র বিরুদ্ধে স্লোগান তোলে পড়ুয়ারা। বাদ যায়নি শিক্ষাকর্মীরাও। রাজ্য়পালকে পোস্টার লিখে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে সুর চড়ান তারাও।

সবথেকে অবাক করার বিষয়, ছাত্রদের এই আচরণ দেখে চটলেন না রাজ্য়পাল। উল্টে স্নেহশীল অভিভাবক হিসাবে বিক্ষোভের মুখে দাঁড়িয়ে বিরোধী কণ্ঠ শুনতে থাকেন তিনি। এক সময় ঠায় আধ ঘণ্টা ধরে চলে প্রশ্নোত্তর পালা। ছাত্রদের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি সামাল দিয়ে মোড় ঘুরিয়ে দিলেন একেবারে অন্য়দিকে। এদিন গাড়ি থেকে নেমে প্রথমেই তিনি ছাত্রদের উদ্দেশে বলেন, আমি আপনাদের চ্যান্সেলর, সব প্রশ্নের উত্তর দেব। তবে আমার সাংবিধানিক বাধ্য় বাধকতা রয়েছে। আমি আশা করছি আপনাদের কিছু প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে আছে। আমি এলে এখানে বিরোধিতা হবে, বিক্ষোভ হবে। তবু আমি এড়িয়ে যাইনি। কারণ আলোচনার রাস্তা বন্ধ করে দিলে এগোনো যায় না। আপনারা এটা বলার সুযোগ পাবেন না, যে রাজ্যপাল আপনাদের সঙ্গে কথা না বলে চলে গিয়েছেন।

প্রথম থেকেই রাজ্য়পালকে নাগরিকত্ব আইনের বিষয়ে তাঁর মত জানতে চায় পড়ুয়ারা। যা শুনেই রাজ্য়পাল জানিয়ে দেন, সিএএ নিয়ে কিছু সমস্যা রয়েছে। তিনি ছাত্রদের থেকে এ বিষয়ে  মত জানতে চান। এবিষয়ে রাজভবনে চর্চার জন্য় ছাত্রদের আহ্বান জানান রাজ্য়পাল। যা শুনে কিছুটা হলেও অবাক হন পড়ুয়ারা। 

রাজ্য়ের রাজনৈতিক ইতিহাস বলছে, অতীতে এরকম নিদর্শন খুব কম দেখেছে রাজ্য়বাসী। খোদ বিরোধী আওয়াজ দমিয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের বিরুদ্ধে। কলকাতার টাউন হলে একটি বেসরকারি ইংরেজি খবরের চ্যানেলের `টক-শো`তে হাজির ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। দর্শকদের একজন তাঁকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্রের গ্রেফতারি সম্পর্কে প্রশ্ন করতেই ক্ষুব্ধ হন তিনি। পরে আপাবুল ইললাম নিয়ে প্রশ্ন করা হলে উপস্থিত ছাত্রছাত্রীদের মাওবাদী তকমা দিয়ে মঞ্চ ছেড়ে চলে যান মমতা। সঞ্চালিকাকে তিনি  বলেন, সিপিআইএম ও মাওবাদীদের প্রশ্নের উত্তর দেবেন না তিনি। এর পর কলার মাইক্রোফোন খুলে মঞ্চ থেকে হাঁটা লাগান মুখ্যমন্ত্রী। হাজার চেষ্টাতেও তাঁকে আটকাতে পারেননি উপস্থাপক।

তবে একবার এই কাণ্ড ঘটাননি তিনি। ধানের মূল্য নিয়ে প্রশ্ন করায় জঙ্গলমহলে শিলাদিত্য়কেও সভা থেকেই  ধরতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। তার কপালেও জোটে মাওবাদী তকমা। বিরোধীদের অভিযোগ, ক্ষমতায় এসে বিরোধী কণ্ঠ শুনলেই তকমা দেওয়ার পথে হেঁটেছেন মমতা। কিন্ত এদিন একেবারে অন্য চিত্র দেখল রাজ্য়বাসী। প্রবল বিক্ষোভের মুখে দাঁড়িয়েও বিরোধী ছাত্রদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে শুনলেন রাজ্য়পাল। যা এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করল।    

Share this article
click me!