মুকুল রায়ের দলবদল, পদ্মবন থেকে ঘাসফুল চার বছরের সফরনামা

  • তৃণমূল থেকে বিজেপি হয়ে আবার তৃণমূলে 
  • মুকুল রায়ের দলবদলের চার বছর 
  • বিজেপিতে তাঁর সফর ছিল কিছুটা চাপের 
  • তবে বিজেপির টিকিটেই বিধায়ক হয়েছেন তিনি 

Saborni Mitra | Published : Jun 11, 2021 9:54 AM IST / Updated: Jun 11 2021, 04:15 PM IST

পূর্বাভাস ছিল। সেই মতই দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে তৃণমূল ভবনে গেলেন মুকুল রায়। সৌগত রায়ের ইঙ্গিত মতই  মুকুল রায়ের তৃণমূল কংগ্রেসের প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত হল। সালটা ছিল ২০১৭, এরকমই নাটকীয়ভাবেই তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করেছিলেন মুকুল রায়। গেরুয়া শিবিরে মাত্র চার বছর তাঁর সফর খুব একটা সহজ ছিল না। কিন্তু তাও  বিজেপি-ই তাঁকে সংসদীয় গণতন্ত্রে সাফল্য দিয়েছিল। বিধায়ক করেছিল কৃষ্ণনগর উত্তর আসন থেকে। 

বিধানসভা ভোটের আগে ঘর গোছাতে ব্যস্ত বিজেপি, কিছুটা চাপ নিয়েই প্রধানমন্ত্রীর বাড়িতে যোগী আদিত্যনাথ ..

২০১৭ সালে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান সেনাপতি বলা হত মুকুল রায়কে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আস্থাভাজনদের তালিকায় অন্যতম নাম ছিল মুকুল রায়। রাজ্যের পাশাপাশি তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে দিল্লিতেও গুরুত্বপূর্ণভূমিকা পালন করেছিলেন মুকুল রায়। রাজ্যের বাইরে ত্রিপুরাসহ অন্যত্র তৃণমূল কংগ্রেসের সংগঠনকে ছড়িয়ে দিতেই তিনি অগ্রণীভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি। তবে  সারদা থেকে নারদকাণ্ড ও  রোজভ্যালি চিটফাণ্ডকাণ্ডে নাম জড়িয়ে পড়ে মুকুল রায়ের। যা তৃণমূলের পাশাপাশি অস্বস্তিতে ফেলে দেয় মুকুলকেও। তাতেই সিবিআই-ইডি জেরায় মুখোমুখি হয়ে হয়েছিল। একটা সময় এই রাজ্যে প্রচারে এসে তৎকালীন বিজেপির পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিং স্লোগান তুলেছিলেন 'ভাগ মুকুল ভাগ'। তাই এই রাজ্যে বিরোধী শিবিরে যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়েছিল। 

প্রেমিকের জন্য ১১ বছর লোকচক্ষুর অন্তরালে প্রেমিকা, লকডাউনে সামনে এক অন্য প্রেম কাহিনি .

ক্রমশই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা মুকুল রায়ের ওপর চাপ বাড়িয়ে চলছিল। তারপরই ২০১৭ সালে দলবদলের মত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন মুকুল রায়। সেই সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নাম না করে একাধিকবার তাঁকে 'গদ্দার' বলে আক্রমণ করেছিলেন।  তিনি দল বদল করলেও তাঁরছেলে কিন্তু থেকে গিয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসেই। কিছুটা অস্বস্তিতি নিয়েই তাঁকে দলে থাকতে হয়েছিল। তবে বিজেপিতে গিয়েও প্রথম দিকে কিছুটা হলেও কোনঠাসা ছিলেন মুকুল। প্রথম দিকে কোনও পদ পাননি মুকুল। অনেকটাই পরে তাঁরে দলের সর্বভারতীয় সহসভাপতির পদ দেওয়া হয়। তবে সংগঠন হিসেবে দক্ষ রাজ্য রাজনীতিতে চাণক্য নামে পরিচিক মুকুল রায়কে সেভাবে সংগঠনের কাজে লাগানো হয়নি বলেও অভিযোগ তাঁর অনুগামীদের। ভোট যুদ্ধেও নাকি সামিল হওয়ার ইচ্ছে ছিল না। একপ্রকাশ জোর করেই তাঁকে 'সেফসিট' কৃ্ষ্ণনগর উত্তর দেওয়া হয়েছিল। তবুও অনুমাগীদের কথায় 'দাদা সংগঠক হিসেবেই থাকতে চেয়েছিলেন কিন্তু প্রার্থী করে তাঁকে একটি আসনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ করে রাখা হয়েছিল'। যদিও তাঁর হয়ে প্রচার করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। অমিত শাহও ঘনিষ্ট বৃত্তেও তাঁর অবাধ যাতায়াত ছিল। 

তৃণমূলে ফিরছেন বিজেপির মুকুল রায়, জল্পনা উস্কে দিলেন এক স

দিলীপ ঘোষও প্রথম থেকে মুকুল রায়ের আগমণকে একটু বাঁকা চোখে দেখেছিলেন বলেও অভিযোগ মুকুল অনুগামীদের। যা নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব একাধিকবার হস্তক্ষেপ করেছেন। অমিত শাহ থেকে কৈলাশ বিজয়বর্গীয়- মুকুল ও দিলীপের দ্বন্দ্ব থামাথে উদ্যোগ নিয়েছিলেন বলেও শোনাগেছে। বিধানসভা নির্বাচনেও আগেও দলের নেতাদের সমস্যা মেটাতে সরফসূচি বদল করে রাতভোর কলকাতার একটি বেসরকারি পাঁচতারা হোটেলে বৈঠক করতে হয়েছিল অমিত শাহকে। কিন্তু ভোট পরবর্তী বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের সমস্যা আবারও প্রকট হয়। অন্যদিকে বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে কিছুটা নরম ছিলেন মুকুল রায়।  বিধানসভাতেও তৃণমূল ঘনিষ্ট হিসেবেই তিনি নিজের ছবি তুলে ধরেছিলেন। তারপর বিজেপির একের পর এক বৈঠকে অনুপস্থিত থেকেই দলের বিরুদ্ধে বার্তা দিয়েগেছেন বলেও মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। দিলীপ ঘোষের ডাকা শেষ বৈঠকেও অনুপস্থিত ছিলেন মুকুল রায়।তারপর থেকেই তাঁর তৃণমূলে ফেরা বনিয়ে নতুন করে জল্পনা শুরু হয়। তবে ২ মে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা ভোটের ফলাফল ঘোষণা হয়। তারপর মাত্র ১ মাস ৯ দিন পরে মুকুলের ঘাসফুলে প্রত্যাবর্তনও কম নাটকীয় নয়। 

Share this article
click me!