মঙ্গলবার রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি দাবি করে পুজো বাবদ মুখ্যমন্ত্রীর অনুদানের টাকার যা পরিমাণ ওই মোটা অঙ্কের টাকা বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে ব্যবহার করলে রাজ্যের অনেক লাভ হত। রাজ্যের এই সিদ্ধান্তকে 'দিশাহীনতা বলেও দাবি করেছেন বিরোধীরা।
দুর্গাপুজো বাবদ আড়াই হাজার কোটি টাকা অনুদান ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর, অপরদিকে টাকার অভাবে আটকে রাজ্যের সরকারি কর্মীদের মহার্ঘভাতা। সোমবার মুখ্যমন্ত্রীর পুজো বাবদ খরচের হিসাব শোনার পর থেকেই সরব বিরোধীরা। এবার পুজো বাবদ অর্থ রাজ্যের উন্নতির ক্ষেত্রে কী ভাবে বহুল ব্যবহৃত হতে পারে তার তালিকা নিয়ে হাজির বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য। শুধু বলা নয় একেবারে খাতায় কলমে এই হিসাব দাখিলও করলেন তিনি। যদিও এই দাবি উড়িয়ে দিয়ে কুণাল ঘোষ জানিয়েছে। এবার পুজোয় রাজ্যের প্রান্তিক অসংগঠিত শ্রমজীবী মানুষদের হাতে অর্থ পৌঁছে দিতেই এই উদ্যোগ।
মঙ্গলবার রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি দাবি করে পুজো বাবদ মুখ্যমন্ত্রীর অনুদানের টাকার যা পরিমাণ ওই মোটা অঙ্কের টাকা বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে ব্যবহার করলে রাজ্যের অনেক লাভ হত। রাজ্যের এই সিদ্ধান্তকে 'দিশাহীনতা বলেও দাবি করেছেন বিরোধীরা। এই প্রসঙ্গে বিজেপি মুখোপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, "সরকারি কর্মীদের প্রাপ্য মহার্ঘভাতা দিতে পারছে না রাজ্য। হাসপাতালে ওষুধ কেনার টাকা নেই, কোনও ক্ষেত্রেই উন্নয়ন নেই, এদিকে এই পরিস্থিতিতে টাকা বিলোচ্ছে সরকার।" রাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপকে রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি থেকে দৃষ্টি আকর্ষণের ছুতো বলেও দাবি করলেন শমীক। এই প্রসঙ্গে বিজেপি মুখপাত্র বলেন, ‘‘আসলে ক্লাবগুলিকে কিনে ‘চোর-চোর’ আওয়াজ বন্ধ করতে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তাতে কাজ হবে কি? বরং উনি যদি ওই টাকাটা রাজ্যের উন্নয়নে খরচ করতেন, তা হলে বাংলার লাভের লাভ হত।"
পাশাপাশি বাংলার সর্বজনীন দুর্গাপুজোকে 'সরকার পোষিত' পুজোয় পরিনত করতে চাইছে রাজ্য সরকার বলেও দাবি করলেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া হিসাব অনুযায়ী মোট ৪৩টি ক্লাবকে ৬০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে, অর্থাৎ মোট খরচ ২৫৮ কোটি টাকা। এর পরেও থাকছে শোভাযাত্রা পুজার কার্নিভাল ইত্যাদি। বিরোধীদের দাবি শুধু যদি ২৫৮ কোটি টাকারই হিসাব করা যায় তাহলেই অনেক কিছু করা যেত।
পুজোর অনুদান বাবদ অর্থ কোন খাতে কী ভাবে ব্যবহার করা সম্ভব ছিল তার একটি তালিকাও তুলে ধরেন শমীক ভট্টাচার্য। তিনি বলেন,‘‘উচ্চমানের ল্যাবরেটরি বানানোর জন্য রাজ্যের ২৫৮টি উচ্চমাধ্যমিক স্কুলকে এক কোটি টাকা করে দেওয়া যেত। মাত্র ১০ লাখ টাকা করে দিলে ২,৫৮০টি প্রাথমিক স্কুলের উন্নয়ন সম্ভব ছিল। আর সবচেয়ে বড় কথা, রাজ্য সরকার ২ টাকা কেজি দরে ১ কোটি ২৯ লাখ কেজি চাল কিনতে পারত।’’
আরও পড়ুন - মহম্মদ আলি পার্কের পুজো নিয়ে বিকল্প প্রস্তাব পুর-কর্তৃপক্ষের, উদ্যোক্তাদের দোনোমোনোয় সমাধান অধরা
এছাড়াও, প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্য এই টাকায় প্রায় ৫২ কোটি মিড ডে মিল হত। উচ্চ প্রাথমিকে (৭.৪৫ টাকা প্রতি পড়ুয়া) ৩৪ কোটি ৬৩ লাখের বেশি মিড ডে মিল বাবদে খরচ করা যেত বলে দাবি শমীকের। তা বাদেও রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে ৫১,৬০০ শয্যা বাড়ানো যেত, গ্রামাঞ্চলে ৩৬,৮৬০টির মতো নলকূপ বানানো যেত। যার ফলে রাজ্যে পানীয় জলের সমস্যা বেশ অনেকটাই মিটত।
যদিও যাবতীয় দাবি উড়িয়ে দিয়ে কুণাল ঘোষ পালটা বলেন, "দুর্গাপুজোর সঙ্গে রাজ্যের এক বিশাল অর্থনৈতিক বিষয়ও জড়িত। রাজ্যের অসংগঠিত শ্রমজীবী পরিবারের হাতে যাতে টাকা যায়,তার জন্যই সরকারের এই উদ্যোগ।"
আরও পড়ুন - দেবীপক্ষের সূচনা লগ্নে এবার 'মহিষাসুরমর্দিনী' ঋতুপর্ণা, প্রকাশ্যে এল প্রথম ছবি