একটি চিঠি কবিতা ও ডাকে আসা একটি খাম থেকে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

  • একটি ছেলে ইস্কুলের পরীক্ষার শেষ
  •  বান্ধবীর উদ্দেশে লিখে ফেলল কবিতা
  •  কবিতার নাম দিল ‘একটি চিঠি’
  • তারপর জানতে পড়ুন বিস্তারিত 

Asianet News Bangla | Published : Sep 7, 2020 3:17 PM IST

তপন মল্লিক : একটি ছেলে ইস্কুলের পরীক্ষার শেষে তাঁর এক বান্ধবীর উদ্দেশে একদিন আচমকাই লিখে ফেলল একটি কবিতা। কবিতার নাম দিল ‘একটি চিঠি’। কবিতা তী লিখলো এবার? কী ভেবে সে ডাকে পাঠিয়ে দিল বিখ্যাত একটি পত্রিকার অফিসে। কিছু না বুঝে পাঠানো সেই কবিতাটি একদিন সেই পত্রিকাতে ছাপাও হল। এরপর তার বাড়ির ঠিকানায় একদিন এসে পোঁছাল একটি ভারী খাম। খামের ওপর লেখা সেই ছেলেটির নাম। ছেলেটি বেশ একটু ভয় পেল। তার নাম লেখা এত ভারী খাম। খুলে দেখল; ১৯৫১ সালের ৩১ মার্চ সংখ্যা ‘দেশ’ পত্রিকায় তার লেখা কবিতাটি প্রকাশিত হয়েছে। সেদিনের সেই ছেলেটির নাম সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। 
কিন্তু কেউ বিশ্বাসই করতে চায় না যে সেই কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। একই নামে দু’জন বা একাধিক মানুষ যেমন থাকে তেমনই এই ঘটনা। এমনকি যে বান্ধবীকে উদ্দেশ্য করে ছেলেটি কবিটাটি লিখেছিল সেও বিশবাস করলো না কবিতাটি তারই লেখা।  
 
আসল ঘটনা হল সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বাবা তাঁকে টেনিসনের একটা কাব্যগ্রন্থ দিয়ে বলেছিলেন, প্রতিদিন এখান থেকে দু’টি করে কবিতা অনুবাদ করবে। এই কাজটা তিনি দিয়েছিলেন যাতে সুনীল দুপুরে বাইরে যেতে না পারেন। তিনি তাই করতেন। বন্ধুরা যখন সিনেমা দেখত, বিড়ি ফুঁকত সুনীল তখন পিতৃআজ্ঞা শিরোধার্য করে দুপুরে কবিতা অনুবাদ করতেন। অনুবাদ করতে করতে একঘেঁয়ে উঠেছিলেন তিনি। তাই নিজেই একদিন লিখতে শুরু করেন।

তবে সেই যে বান্ধবীর উদ্দেশে চিঠির আকারে লেখা কবিতা লেখা শুরু করলেন সুনীল তারপর ধীরে ধীরে জড়াতে লাগলেন সাহিত্যজগতে। কফি হাউসের আড্ডা, হৈ-হল্লা, সম্পূর্ণ বোহেমিয়ান জীবন, অবিরাম লিখে যাওয়া এবং পত্রিকা প্রকাশ ইত্যাদিতে এমনভাবে জড়ালেন, এক জীবনে সেখান থেকে আর বেরোতে পারেননি। ‘এক জীবনে’ নামে তাঁর একটি উপন্যাসও আছে। আবার তাঁর আত্মজীবনীর নাম ‘অর্ধেক জীবন’। ‘অর্ধেক জীবন’ নাম দিলেন কেন? এ কথার উত্তরে সুনীল মৃদু হেসে বলেছিলেন, ‘জীবনের সব কথা তো লিখতে পারিনি! বাঙালি লেখক হিসেবে লেখা সম্ভবও না। অর্ধেক লিখেছি, বাকি অর্ধেক স্মৃতিতে চাপা পড়ে রইল।’ 

অধুনা বাংলাদেশের মাদারীপুরে সুনীলের জন্ম। গ্রামের নাম মাইজপাড়া। ছেলেবেলায় কিছুদিন সেই গ্রামে কাটিয়েছেন তিনি। তারপর কলকাতায়। তবে মাইজপাড়া গ্রামটির জন্য সুনীলের মন কেঁদে  উঠত। গেল শতকের শেষের দিকে ওই গ্রামের এক ভদ্রলোক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়দের পৈতৃক ভিটা খুঁজে বের করলেন। তাঁর নাম আবদুর রাজ্জাক হাওলাদার। থাকেন আমেরিকায়। সুনীলের মহা অনুরাগী তিনি। সুনীলের বাড়ি উদ্ধার করে সেখানে তিনি একটি পাঠাগার করলেন। প্রতিবছর সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্মদিনে দু’দিন ধরে ‘সুনীল মেলা’ হয় এখন মাইজপাড়া গ্রামে। বেশ কয়েকবার সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সেখানে গিয়েছেন।
 
বাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলেছেন। কারণ দেশভাগের বেদনা তাঁকে আচ্ছন্ন করে রাখত। অথচ পূর্ব পাকিস্তান বা বাংলাদেশে সুনীল ছিলেন মাত্র চার বছর। তাঁর বিশাল উপন্যাস ‘পূর্ব-পশ্চিম’ পড়লে সেই হাহাকার টের পাওয়া যায়। এই উপন্যাসের অনেকখানি জুড়ে আছে বিক্রমপুরের মালখানগর গ্রাম। উপন্যাসের এক চরিত্র অতীন মালখানগরের। দেশভাগের ফলে সেই গ্রাম ফেলে উদ্বাস্তু হয়ে চলে গিয়েছিল কলকাতায়। মা মৃত্যুশয্যায়, ছেলে মাকে বলছে—‘তোমার শেষ ইচ্ছে কী?’ মা বললেন, ‘আমাকে মালখানগরে নিয়ে যা।’ এই একটি বাক্যে দেশপ্রেমের গভীর টান উপলব্ধি করা যায়।

এই মালখানগর বাংলা সাহিত্যের আরেক বিখ্যাত লেখকের গ্রাম। তাঁর নাম বুদ্ধদেব বসু। বেশ কাছেই আরেক গ্রাম ‘মালপদিয়া’ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রাম। তাঁর মামাবাড়ির গ্রাম ‘গাওদিয়া’। এই গ্রামের পটভূমিতে লেখা মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিখ্যাত উপন্যাস ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’। দেশভাগের ভয়ংকর সব ঘটনা এবং উদ্বাস্তু হয়ে কলকাতা ও আশপাশে আশ্রয় নেওয়া পূর্ববঙ্গের ছিন্নমূল মানুষদের নিয়ে সুনীল গাংগুলী লিখেছিলেন ‘অর্জুন’ নামে আরেকটি উপন্যাস।

Share this article
click me!