প্রথমে গুরুত্বই দেননি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে কটাক্ষ করে বলেছিলেন দিল্লির হিংসা থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিতেই করোনার আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তাঁর ঘরে যখন ঢুকে পড়েছে করোনার বিপদ তখন আর হাত গুটিয়ে বসে থাকেননি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। করোনাকে জরুরী অবস্থা বলে ঘোষণা করে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় পরিস্থিতি মোকাবিলায় নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরকে। বৃহস্পতিবার বিকেলে নবান্নে স্বাস্থ্য দফতের আধিকারিকদের উপস্থিতিতে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের দায়িত্ব প্রাপ্তদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।
নবান্নের বৈঠকেই মমতা জানিয়েছেন করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় প্রয়োজনী কোনও জিনিসের যেন ত্রুটি না হয়। চিকিৎসা সামগ্রী যেন ঠিতমত পান চিকিৎসকরা তার দিকে নজর দিতে স্বাস্থ্য সচিব বিবেক কুমারকে নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। তিনি জানিয়েছেন ভেন্টিলেটার, মাস্ক, স্যানিটাইজার যেন সব হাসপাতালে পর্যপ্ত পরিমাণে থাকে। ইতিমধ্যেই রাজ্য ৩০০ ভেন্টিলেটারের অর্ডার দিয়েছে। তারমধ্যে ৭০টি ভেন্টিলেটার হাতে পাওয়ায় তা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে। বাকি গুলি ২০ দিনের মধ্যে চলে আসবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। বেসরকারি হাসপাতালগুলিকেও ভেন্টিলেটার কেনার অনুরোধ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
২ লক্ষ গ্লাভস ও মাস্কের অর্ডার দেওয়া হয়েগেছে। করোনার সংক্রমণ রুখতে বিশেষ পিপিই পোষাকেরও অর্ডার দিয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। মাস্কসহ প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট, গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম খুব তাড়াতাড়ি জেলার হাসপাতাল গুলিতে পৌঁছে দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বর্তমানে রাজ্যের বাজারে স্যানিটাইজারের রীতিমত অভাব রয়েছে। অভাব রয়েছে মাস্কের। তাই এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিসের সরবরাহ বাড়াতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র কুটীরশিল্পের সঙ্গে জড়িতদের সাহায্য নেওয়া হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন। কারণ রাজ্যে করোনার সংক্রমণ রুখতে রীতিমত কড়া পদক্ষেপ নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সরকারি হাসপাতালগুলির পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতগুলিকেও প্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে তিনি সাহায্য করবেন বলে ঘোষণা করেছেন।
করোনা সংক্রমিতদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে কোনো ত্রুটি রাখতে চান না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বারবার সেকথাই মনে করিয়েদিয়েছেন তিনি। চিকিৎসার সঙ্গে জডিত ব্যক্তিরাও যাতে প্রয়োজনীয় জিনিস পায় , সেদিকেও বিশেষ নজর দিতে হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যয়। একই সঙ্গে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে নিরাপদে থেকে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মঙ্গলবার রাতে রাজ্যে প্রথম করোনা আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল। আক্রান্ত তরুণ, চিকিৎসকের পরামর্শ না মেনে একাধিক শপিং মলে ঘুরে বেড়িয়েছে। তাঁর মা স্বাস্থ্য দফতরের আমলা হলেও নিজেকে গৃহবন্দি না রেখে যাতায়াত করেছেন অফিসে। তাতেই আতঙ্ক বাড়ছে রাজ্যবাসীর মধ্যে। এখনও পর্যন্ত কলকাতায় করোনা আক্রান্ত একজন। তবে বেশ কয়েকজন ভর্তি রয়েছেন হাসপাতালে। কিন্তু পরিস্থিতি যাতে হাতের বাইরে চলে না যায় তারজন্যই কড়া রাশ টানতে রীতিমত ময়দানে নেমেপড়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।