ভয়ঙ্কর আর্থিক মন্দার সামনে বাংলা, মমতা-র সরকারের কড়া সমালোচনায় বিজেপি বিধায়ক অশোক লাহিড়ি

রাজ্যের আর্থিক দূরাবস্থা নিয়ে তীব্র হতাশা ব্যক্ত করেছেন অশোক লাহিড়ি। বালুরঘাটের বিজেপি বিধায়ক রীতিমতো সংখ্যা তুলে ধরে বাংলার আর্থিক অবস্থাকে তুলে ধরেছেন। তাঁর মতে, যেভাবে অনুদানে অর্থ বারাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে তাতে সঙ্কট অতি দ্রুত নেমে আসবে। 
 

Web Desk - ANB | Published : Mar 29, 2022 1:16 PM IST / Updated: Mar 29 2022, 07:18 PM IST

রাজ্যের আর্থিক হাল নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে তুলোধনা করলেন বালুরঘাটের বিজেপি বিধায়ক অশোক লাহিড়ি। তাঁর মতে, রাজ্যে আয়ের যা অবস্থা তাতে খুব শিগরি আর্থিক মন্দার সামনে পড়তে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ। সেইসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেছেন যে মানুষের মনে তিনি আতঙ্ক ছড়াতে চান না। তবে পরিস্থিতি এতটাই জটিল হয়ে উঠেছে তাতে বাংলায় ফিসক্যাল ক্রাইসিস বা আর্থিক মন্দা আসতে চলেছে। 

মঙ্গলবার কলকাতায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে এসে রাজ্যের বাজেটের বেশকিছু জায়গায় প্রশ্ন তোলেন অশোক লাহিড়ি। যিনি একটা সময় ভারতের অর্থনৈতিক উপদেষ্টার পদ থেকে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন অর্থ সংস্থার উচ্চপদে আসীন ছিলেন। এহেন অশোক লাহিড়ির মতে, রাজ্যে দিনের পর দিন মূলধনি বিনিয়োগ কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর অনুদান খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। মূলধনি বিনিয়োগ যদি কমিয়ে দেওয়া হয় তাহলে রাজ্যের পরিকাঠামো উন্নয়ন সঠিকভাবে সম্ভব নয়। এমনকী শিল্পের জন্য পরিকাঠোমা গঠনের যে কথা রাজ্য সরকার ফলাও করে বলছে তাও সম্ভব নয়। তাঁর মতে রাজ্যের আর্থিক হাল এবং রাজ্য সরকারের দেওয়া তথ্যের মধ্যে বিস্তর অমিল রয়েছে। 

অশোক লাহিড়ি জানিয়েছেন, রাজ্যে মোট আয় যদি ধরা হয় ১০০ টাকা, তাহলে তার ৪৮ টাকা আসে কেন্দ্রের কাছে জমা পড়া খাজনা থেকে ঋণ হিসাবে। এছাড়া রাজ্য বাজার থেকে নেওয়া ঋণে ৩৩ টাকা করে পায়। আর রাজ্যের নিজস্ব যোগদান ১৯ টাকা। এগুলো আবার যদি টাকা প্রতি হিসাব করা হয় তাহলে, ১ টাকায় কেন্দ্র রাজ্যকে দিচ্ছে ৪৮ পয়সা, ঠিক একইভাবে বাজার থেকে নেওয়া ঋণে টাকায় ১৯ পয়সা এবং রাজ্যের নিজস্ব যোগদান ১৯ পয়সা। অশোক লাহিড়ির মতে, রাজ্য সরকার মাঝে মাঝে চিৎকার করে যে বলতে থাকে কেন্দ্র অর্থ দিচ্ছে না বা কেন্দ্রীয় প্রকল্পের অর্থ আসছে না, এটা পুরো ভুল। এই হিসাব পরিস্কার করে দিয়েছে যে রাজ্য সরকার তার আয়ের জন্য অন্যের মুখাপেক্ষী। 

রাজ্য সরকারের ঋণ নেওয়ার নীতিকেও নিশানা করেছেন অশোক লাহিড়ি। তিনি জানিয়েছেন একটা সময় রাজ্য সরকার ফিসক্যাল রেসপনসিবিলিটি বাজেট ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট বা এফআরবিএম নামে একটি ঋণনীতির আইন বানিয়েছিল। এতে বলা হয়েছে যে রাজ্য তার মোট আয়ের ২৫ শতাংশ বেশি ঋণ নিতে পারবে না। কিন্তু, ২০২২-২৩-এর বাজেটে এফআরবিএম-এর ঋণ নেওয়ার লক্ষণ রেখা-কে বাড়িয়ে ৩৪.৫ শতাংশ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অশোক লাহিড়ি। 

তিনি আরও জানিয়েছেন যে ২০২১-২২ অতিমারির সঙ্কটের জন্য রাজ্য সরকার ভর্তুকি ক্ষেত্রে বরাদ্দ বৃদ্ধি করেছিল। কিন্তু ২০২২-২৩ সালের বাজেটে এই বরাদ্দ কমানো হয়েছে। অথচ রাজ্য সরকার আবার এই অতিমারির কথা বলে ২০২১-২২-এর অর্থবর্ষে বরাদ্দ-কে ১০৯৫৫ কোটি থেকে বাড়িয়ে ১৮৭২০ কোটি টাকায় নিয়ে গিয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ভর্তুকিখাতে বরাদ্দ-কে ১০৯৫৫ কোটি টাকার নিচে নামানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। অশোক লাহিড়ির মতে এমন কথা কীভাবে বলা হচ্ছে সেটাই আশ্চর্যের। 

রাজ্যের আয়ের হাল-এর লন্ডভণ্ড মার্কা ছবিটা তুলে ধরতে অশোক লাহিড়ি তুলে ধরেছেন মূলধনি খাতে বিনিয়োগের বিষয়টি। তিনি দেখিয়েছেন, ২০২১-২২ সালে মূলধনি খাতে বরাদ্দ ছিল ৩২৭৭৪ কোটি টাকা। আর ২০২২-২৩-এর অর্থবর্ষে মূলধনি খাতে বরাদ্দ দেখানো হয়েছে ১৯৩৫৫ কোটি টাকা। মূলধনি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো মানে রাস্তা-ঘাট, নিকাশী ব্যবস্থা থেকে শুরু করে পানীয় জল সরবরাহ, বিদ্যুৎ যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শহর এবং গ্রামীণ জীবনের উন্নয়নে কাজ করা। এর দ্বারা পরিকাঠামো উন্নয়ন হয় এবং যা শিল্প গড়ার পক্ষে সহায়ক হয়ে ওঠে। 

অশোক লাহিড়ি প্রশ্ন করেছেন, যদি মূলধনি খাতেই বরাদ্দ কমানো হয়ে থাকে তাহলে পরিকাঠোমা উন্নয়নের স্বপ্ন কীভাবে দেখছে রাজ্য সরকার। সেই সঙ্গে মূলধনি খাতেও কীভাবে বরাদ্দ কমেছে সে তথ্যও তুলে ধরেছেন অশোক লাহিড়ি। তিনি জানিয়েছেন, ২০২১-২২ সালে সামাজিক পরিকাঠোমায় ১২৮১৮ কোটি টাকার বরাদ্দের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু, সেখানে রিভাইসড বাজেটে এস্টিমেটে ৮২৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে। এমনকী গ্রামীণ উন্নয়নেও প্রথমে ৬১৮৩ কোটি টাকার বরাদ্দের কথা বলা হয়েছিল ২০২১-২২ সালে। কিন্তু ২০২২-২৩-এ এই খাতে মাত্র ১৭৪৪ কোটি টাকা বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে। 

অশোক লাহিড়ির প্রশ্ন, মূলধনি খাতে বরাদ্দ কমানো হচ্ছে, ভর্তুকিতেও বরাদ্দ কমানো হচ্ছে। তাহলে এই সব অর্থ যাচ্ছে কোথায়। প্রবীণ এই অর্থনীতিবিদের মতে, কর্মসংস্থান এবং শিল্প পরিকাঠামোর উন্নয়নকে ভুলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসলে অনুদানে অর্থ বরাদ্দ বাড়াচ্ছেন। লক্ষীর ভাণ্ডার থেকে আরও অনেক অনুদান প্রকল্পে অর্থ যাচ্ছে। এর জন্য উন্নয়নকে স্তব্ধ করে রাখা হয়েছে। রাজ্যে উন্নয়ন করতে গেলে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে গেলে এমন অনুদান নির্ভর প্রকল্প চালানো যে সম্ভব নয় তাও খোলসা করে বলছে না রাজ্য সরকার। এটা দ্বিচারিতা বলেই মনে করছেন অশোক লাহিড়়ি। একে অবক্ষয়ের প্রতিফলন বলে মানছেন তিনি। 

রাজ্য বাজেট পেশের সময় চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য যেভাবে চাহিদা বৃদ্ধি করে আয়ের পথ খোলার কথা বলেছেন সেটারও সমালোচনা করেছেন অশোক লাহিড়ি। তিনি বলেছেন, হঠাৎ করে রাজ্যে কী মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়ে গিয়েছে যে সেখান থেকে অর্থনীতিতে চাহিদা বৃদ্ধি তত্ত্বকে হাতিয়ার করা হচ্ছে। চাহিদা বাড়ানোর কথা বললে শুধু হবে না, উৎপাদন শিল্পের বিকাশে কাঁচা মালের জোগান কেমনভাবে হবে- তার কোনও স্পষ্ট রূপরেখা নেই বলেও সমালোচনা করেছেন বিজেপি বিধায়ক। 

সেই সঙ্গে জিএসডিপি বা গ্রস স্টেট ডোমেস্টিক প্রোডাক্টের বৃদ্ধির হারকেও হাতিয়ার করেছেন অশোক লাহিড়ি। তাঁর দেওয়া তথ্যে দাবি করা হয়েছে, ২০১১ সালের পর থেকে একমাত্র ১৩-১৪ এবং ১৫-১৬ সাল ছাড়া সবসময়ই জিএসডিপি-র বৃদ্ধির হার কম ছিল। সুতরাং, চাহিদা বাড়িয়ে আয় বাড়ানোর যে তত্ত্ব চন্দ্রিমা খাড়া করেছেন তাতে যথেষ্টই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অশোক লাহিড়ি। এমনকী রাজ্য সরকার যেভাবে ফি বছর বাজেটের এস্টিমেটে বলা প্রতিশ্রুতির থেকে ফিসক্যাল এক্সপেনডিচারে খরচের বহর বাড়িয়ে দিচ্ছে তাতে বোঝাই যাচ্ছে যে সরকারের খরচ বেড়েছে। যদি খরচ বেড়ে থাকে তাহলে আয়টা কেমন হচ্ছে- এই প্রশ্নও তুলেছেন বালুরঘাটের বিজেপি বিধায়ক অশোক লাহিড়ি। 
আরও পড়ুন|রাজ্য বাজেটে চা শিল্পে স্বস্তি, কর ছাড়ের মেয়াদ বাড়ানো হল আরও এক বছর
আরও পড়ুন| 'কত টুপি আর বাংলার লোককে পরাবেন', মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন শুভেন্দু 
আরও পড়ুন|'কয়েক কোটি কর্মসংস্থান তৈরি হবে রাজ্যে', বাজেটে বড় ঘোষণা মমতার 

"

Share this article
click me!