চিকিৎসার অভাবে এক গৃহবধূর মৃত্যুর অভিযোগ তুললেন মৃতের পরিবারের সদস্যরা। বুধবার সকালে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে মৃত্যু হয় শিখা গোমস্তা নামে বছর চল্লিশের ওই গৃহবধূর। মঙ্গলবার সন্ধেয় এই ক্যানিং মহকুমা হাসপাতাল থেকেই তাঁকে কলকাতায় রেফার করেছিলেন চিকিৎসকরা। কিন্তু কলকাতার সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের কর্মবিরতি চলার কারণে একের পর এক হাসপাতালে ঘুরেও রোগীকে ভর্তি করাতে না পেরে বুধবার সকালে ফের ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। সেখানেই বুধবার সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ মৃত্যু হয় তাঁর।
রাস্তার পড়ে মায়ের দেহ, মাতৃদুগ্ধ পানের চেষ্টায় দুই শিশু
মৃতের পরিবার সূত্রে খবর, গত পাঁচ ছয়দিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন তিনি। জ্বর না কমায় এলাকার ওষুধের দোকান থেকে জ্বরের ওষুধ এনে খেয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও জ্বর না কমায় অবশেষে মঙ্গলবার ঘুঁটিয়ারি শরিফ ব্লক প্রাথমিক হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হন তিনি। কিন্তু সেখানে অবস্থার অবনতি হলে রোদীর পরিবার তাকে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করেন চিকিৎসার জন্য। ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে শিখা দেবীর রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা ও করা হয়। কিন্তু সেভাবে কিছু ধরা পড়েনি বলে জানা যায়। কিন্তু সময় যত গড়াতে থাকে ততই তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতাল থেকে চিকিৎসকরা কলকাতার চিত্তরঞ্জন ন্যাশানাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করেন। কিন্তু সেখানে চিকিৎসক নিগ্রহের প্রতিবাদে কর্ম বিরতি চলার কারণে হাসপাতালের মধ্যে ঢুকতেই পারেননি রোগীকে নিয়ে। সেখান থেকে নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতাল সহ কলকাতার একের পর এক সরকারি হাসপাতালে ঘুরেও কোন লাভ হয়নি। সব জায়গাতেই চিকিৎসকদের বিক্ষোভের জেরে বিমুখ হতে হয় শিখা দেবীকে।
অবশেষে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাকে বুধবার ভোর রাতে ফের ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয় চিকিৎসার জন্য। সেখানেই ঘণ্টা পাঁচেকের চিকিৎসার পর বুধবার সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ মারা যান ওই গৃহবধূ। মৃতের পরিবারের দাবি, চিকিৎসার অভাবের কারণেই কার্যত মৃত্যু হয়েছে তাঁর। এই ঘটনায় মৃতের পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। এ বিষয়ে মৃতের ভাইপো শ্যামল গোমস্তা বলেন, 'ক্যানিং মহকুমা হাসপাতাল থেকে রেফার করার পর কলকাতার একের পর এক সরকারি হাসপাতালে গিয়েছি আমরা। সেখানে আমাদের ঢুকতেই দেওয়া হয়নি। আমরা গরিব পরিবার, কোনও বেসরকারি হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে ভর্তি করাতে পারিনি রোগীকে। তাই বাধ্য হয়েই রাতে আবার ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে আসি চিকিৎসার জন্য। এখানেই মারা যায় কাকিমা। দীর্ঘক্ষণ চিকিৎসা পরিষেবা না পেয়েই ওঁর মৃত্যু হয়েছে। যদি কলকাতার হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ পেতেন উনি তাহলে এই ঘটনা ঘটত না'।