
জন্মাষ্টমী দিনটি গোকুলাষ্টমী,কৃষ্ণাষ্টমী, অষ্টমী রোহিণী, শ্রীকৃষ্ণজয়ন্তী নামেও পরিচিত। দুষ্টের পালন ও শিষ্টের পালন করতেই ধরাধামে অবতীর্ণ হয়েছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। সৌর ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে যখন রোহিণী নক্ষত্রের প্রাধান্য পায় তখন জন্মাষ্টমী পালিত হয়।
পুরাণের গল্প থেকেই আমরা জানতে পারি ছোট্ট গোপালের ধীরে ধীরে বড় হয়ে ওঠার কাহিনি। ছোটোবেলা থেকেই চঞ্চল প্রকৃতির বালক ছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। ছোট গোপালের অত্যাচারে তিতিবিরক্ত হয়ে পড়েছিল গোকুল ও বৃন্দাবনের মহিলারা। ঘরে ঘরে ঢুকে তিনি চুরি করে মাখন খেয়ে পালিয়ে যেতেন। এর জন্য ছোট্ট গোপাল-কে তাঁর পালিতা মা যশোদা-র কাছে যথেষ্টই বকুনি খেতে হত। এমনকী, ছেলের পিছনে লাঠি নিয়েও নাকি ধাওয়া করতেন যশোদা। এমন কাহিনিও বর্ণিত রয়েছে এই লোকগাথায়। কিন্তু, ছোট্ট গোপালের সরলতা, মা-এর প্রতি প্রবল ভালোবাসা গোকুল ও বৃন্দাবনের চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। তাঁর মাখন চুরি ধরা পড়ে গিয়েছে জেনে যেভাবে ছোট্ট গোপাল দুষ্টু-মিষ্টু আচরণে সকলকে কাছে টেনে নিতেন তা কেউই অগ্রাহ্য করতে পারতেন না। তাই 'মাখনচোর'-এর আখ্যা পেলেও এই কাহিনি আজও জন্মাষ্টমী-তে শ্রীকৃষ্ণের অন্যতম লীলা বলেই বিবেচিত হয়।
শাস্ত্রে রয়েছে কেউ যদি একবার শ্রীকৃষ্ণের এই জন্মাষ্টমী উপবাস পালন করেন, তাহলে তাঁকে এই জগতে জন্ম, মৃত্যু, ব্যাধি, কষ্ট ভোগ করতে হয় না ও পুনর্জন্ম গ্রহণ করতে হয় না।
জন্মাষ্টমীর ভোগও বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। গোপালের জন্য রান্না হয় ছাপ্পান্ন ভোগ, থাকে অতি আবশ্যিক মাখন-মিছরির ভোগও। অন্ন ছাড়া এই ভোগে প্রায় নিরামিষ সবকিছুই থাকে। লুচি থেকে শুরু করে সুজি, ডাল, ভাজা, তরকারি, পায়েস, নানা রকমের মিষ্টি, মালপোয়া, তালের বড়া, তালক্ষীর, তালের লুচি, ইত্যাদি। মাখন-মিছরি তো থাকবেই।
কথিত রয়েছে নিষ্কাম শুদ্ধ মন নিয়ে জন্মাষ্টমীর দিন শ্রীকৃষ্ণকে ডাকলে নাকি তিনি মনষ্কামনা পূর্ণ করেন।
জন্মাষ্টমীর পরের দিন পালিত হয় নন্দ্যোৎসব। কথিত আছে কৃষ্ণের জন্মদিনে নন্দরাজা খুশিতে সকলকে উপহার দিয়েছিলেন।