গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের পাশাপাশি বাড়ছে তরুণদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা! প্রকাশ্যে এল ভয়ঙ্কর তথ্য
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ভয়াবহ প্রভাব পড়ছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের উপর। ক্লাইমেট চেঞ্জ মানুষের মনেও বিষাদের বীজ বপন করছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়াচ্ছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন নিয়ে আলোচনার জন্য আজারবাইজানে COP29 সম্মেলনে বিশ্বনেতারা একত্রিত হয়েছিলেন। সম্মেলনে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন সংক্রান্ত নতুন গবেষণার ফলাফল নিয়ে আলোচনা হয়। তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে উঠে আসে।
সিডনির নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা একটি গবেষণায় উল্লেখযোগ্য তথ্য উন্মোচন করেছেন। অস্ট্রেলিয়ার তরুণদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা এবং তীব্র গরমের মধ্যে সম্পর্ক পেয়েছেন তারা।
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে বিশ্বব্যাপী তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হচ্ছে। পৃথিবীর ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেক তরুণ উদ্বিগ্ন। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব ইতিমধ্যেই তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত করছে বলে গবেষণায় দেখা গেছে।
এই গবেষণায় নিউ সাউথ ওয়েলসের ১২-২৪ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীদের আত্মহত্যার প্রবণতা ও আচরণ জানার জন্য জরুরি বিভাগের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ২০১২ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত নভেম্বর থেকে মার্চ মাসের গরমের মাসগুলোর তথ্য পর্যালোচনা করে তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং জরুরি বিভাগে আসা রোগীর সংখ্যার মধ্যে সম্পর্ক পাওয়া গেছে।
প্রতিদিনের গড় তাপমাত্রায় প্রতি ১°C বৃদ্ধির জন্য আত্মহত্যার প্রবণতা ১.৩ শতাংশ বৃদ্ধি পায় বলে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন।
উদাহরণস্বরূপ, গড় তাপমাত্রা ২১.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকা দিনগুলোর তুলনায় ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস গড় তাপমাত্রা থাকা দিনগুলোতে জরুরি বিভাগে আসা রোগীর সংখ্যা ১১ শতাংশ বেশি ছিল। তীব্র গরম ছাড়াও স্বাভাবিক গরমের দিনগুলোতেও আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। লক্ষণীয় বিষয় হলো, গরমের তরঙ্গ (তিন বা তার বেশি দিন ধরে তীব্র গরম) এক দিনের তুলনায় বেশি ঝুঁকি বাড়ায় না বলে গবেষণায় দেখা গেছে। এটি প্রমাণ করে যে গরমের দিন তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।
অস্ট্রেলিয়ার পিছিয়ে পড়া অঞ্চলের তরুণরা গরমের কারণে মানসিক সমস্যায় ভোগার ঝুঁকিতে আছে বলে গবেষণায় দেখা গেছে। শুধুমাত্র সামাজিক ও অর্থনৈতিক পিছিয়ে পড়া অবস্থা আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ায় না, তার সাথে গরমের প্রভাব যোগ হলে ঝুঁকি আরও বেশি হয়।
এই পরিপ্রেক্ষিতে তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে COP29। অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলো যদি জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতা কমায়, তাহলে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের চাপ কমবে এবং তরুণদের আত্মহত্যার হার কমানো সম্ভব হবে।
ভাড়া বাড়িতে উন্নত শীতাতপ ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করা, খোলা স্থানে ছায়াযুক্ত জায়গা তৈরি করার মতো পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সরকারগুলোকে সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়াও, শিশু ও তরুণদের জন্য উন্নত মানসিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়েছে।