তেঁতুলের আচার বা চাটনি, ভাবলেই কীরকম যেন জিভে জল আসে। খাবারের পাতে কিম্বা নিঃস্তব্ধ দুপুরে তেঁতুলের আচার খাওয়ার মজাই আলাদা। শুধু চাটনি বা আচার নয়, তেঁতুলের বাইরের ত্বক থেকে বিশেষ পদ্ধতিতে উন্নতমানের পেপটিন, পলিপোজ ইত্যাদি তৈরি হয়। যা জ্যাম-জেলি বা মার্মালেড জমানোর কাজে লাগে। দেখে নেওয়া যাক তেঁতুলে কী কী উপাদান রয়েছে।
পাকা তেঁতুলে, ৫৫ শতাংশ শাঁস, ৩৩ শতাংশ বীজ, ১২ শতাংশ ফাইবার থাকে। তেঁতুলের শ্বাসে ২০ শতাংশ পর্যন্ত টার্টারিক অ্যাসিড থাকে, যার জন্য এর স্বাদ হয় টক। এছাড়া কার্বোহাইড্রেট ৩৮.২ শতাংশ, প্রোটিন ২.৮ শতাংশ, পেকটিন ২.৭ শতাংশ, খনিজ বা মিনারেলস ২.৯ শতাংশ, ক্যালশিয়াম ০.৭ শতাংশ, ফসফরাস ০.১১ শতাংশ, আয়রন ০.১২ শতাংশ, ভিটামিন-এ ১০০আই ইউ, নিয়াসিন ০.২ শতাংশ থাকে। এরসঙ্গে থাক সাইট্রিক অ্যাসিড, পটাশিয়াম, সিনামিক অ্যাসিড ইত্যাদি।
তেঁতুলের রয়েছে নানা ঔষধি গুণ। পেট পরিষ্কার করতে প্রতিদিন তেঁতুল খান, উপকার পাবেন। এটি গ্যাসের সমস্যাও দূর করে। রোগব্যাধি থেকে সেরে ওঠার পর, শরীর অতিরিক্ত দুর্বল হয়ে গেলে পাকা তেঁতুল খান, উপকার পাবেন। অনেকেই হাত-পা জ্বালায় কষ্ট পান। রেহাই পেতে হলে, পাকা তেঁতুলের শ্বাস পুরু করে হাত-পায়ের পাতায় লাগিয়ে, মিনিট পনেরো রেখে তারপর ধুয়ে ফেলুন। অবশ্যই আরাম পাবেন।
রোদ্দুর থেকে ঘুরে এসে তেঁতুলের টক-মিষ্টি সরবত খেতে পারেন, আরাম পাবেন। স্কার্ভি রোগের প্রতিরোধে তেঁতুল অত্যন্ত কার্যকরী। ঋতু পরিবর্তনের সময়ে ঠান্ডা লাগা বা সর্দিকাশি থেকে রেহাই পেতে গোলমরিচ মেশানো তেঁতুলের পানীয় উষ্ণ করে খান। দারুণ উপকার পাবেন।
রক্তাপ্লতার সমস্যা দূর করতেও কাজে দেয় তেঁতুল। প্রসাবের সময়ে জ্বালা করলে পুরনো তেঁতুলের ক্বাথ যথেষ্ট আরাম দেয়। গরমের দিনে ঘামাচি থেকে মুক্তি পেতে চাইলে, স্নানের আগে পাকা তেঁতুলের শ্বাস ভাল করে গায়ে লাগিয়ে নিন। উপকার পাবেন। তেঁতুল পাতার রস ক্রিমিনাশক। পুরনো তেঁতুল জীবাণুনাশক ও পচন নিবারক। তাই মাছ-মাংশ রান্না করবার সময়ে খাদ্যগুণ বজায় রাখতে তেঁতুল ব্যবহার করতে পারেন। ন্যাচারাল প্রিজারভেটিভ হিসেবেও ভাল কাজ করে তেঁতুল। বাতের ব্যথা ও ফোলার কষ্ট কমাতে তেঁতুল পাতার নির্যাস ফুটন্ত গরম জলে মিশিয়ে সেঁক দিন, আরাম পাবেন। শুধু তেঁতুল ফল নয়, এই গাছের ছালের নির্যাস পক্ষাঘাত রোগের চিকিৎসায় কাজে দেয়, এমনকি হাঁপানি রোগ সারাতেও ভূমিকা রাখে।
যাঁরা পিত্তের সমস্যায় ভুগছেন, তাঁরা পাকা তেঁতুলের সরবত খান। তবে এই সরবতের সঙ্গে, আধকাপ মুড়ি, কিছু মৌরি আর সামান্য বিটনুন মিশিয়ে রোজ পান করলে সমস্যা উধাও হবেই হবে। তবে সাবধান, কাঁচা তেঁতুল একদম খাবেন না। কারণ কাঁচা তেঁতুল থেকে পিত্তের সমস্যা ও কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়।