করোনার টিকায় ভরা আছে মাইক্রোচিপ
তাই দিয়ে মানুষের মন নিয়ন্ত্রণ করবে ইহুদিরা
চিনা টিকা পরীক্ষার জন্য স্বেচ্ছাসেবীই মিলছে না পাকিস্তানে
টিকা সংগ্রহে বিপদে পড়তে চলেছেন ইমরান
চিনের নিকটতম মিত্রদের মধ্যে অন্যতম হল পাকিস্তান। অর্থনীতিতে অনেক পিছিয়ে থাকা পাকিস্তান, চিনের সঙ্গে চুক্তি করেছিল, ক্লিনিকাল ট্রায়ালের বদলে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে চিনা কোভিড ভ্যাকসিন সংগ্রহের জন্য। কিন্তু ইমরান খানের আমলে একদিকে যেমন পাকিস্তানে চিনা প্রভাব বেড়েছে, অন্যদিকে বেড়েছে ইসলামি মৌলবাদীদের বাড়বাড়ন্তও। আর, তাদের ছড়ানো কুসংস্কারের বশেই চিনা ভ্যাকসিনের তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিকাল পরীক্ষার জন্য স্বেচ্ছাসেবীই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না পাকিস্তানে।
করোনভাইরাস মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকেই পাকিস্তান চিন থেকে প্রচুর চিকিত্সাগত ও আর্থিক সহায়তা পেয়েছে। টিকা সংগ্রহের বিষয়েও তারা বেজিং-এর উপরই নির্ভরশীল। তবে তার জন্য চিন, ক্লিনিকাল ট্রায়ালের শর্ত দিয়েছিল। পাকিস্তান সরকারও গত সেপ্টেম্বর থেকে তাদের দেশে চিনা সংস্থা ক্যানসিনো ও অ্যাকাডেমি অফ মিলিটারি মেডিকেল সায়েন্সেস-এর যৌথ উদ্যোগে তৈরি সম্ভাব্য ভ্যাকসিন অ্যাড ৫-এনকোভ-এর চূড়ান্ত পর্যায়ের ক্লিনিকাল পরীক্ষার অনুমতি দিয়েছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে সারা লবিশ্বে এখন ৪৭টি ভ্যাকসিনের ট্রায়াল চলছে। তারমধ্যে ৫টির পরীক্ষা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। অ্যাড ৫-এনকোভ সেই ৫টিরই একটি।
দেখা নেই স্বেচ্ছাসেবীর
এই ট্রায়াল চলছে আর্জেন্টিনা, চিলি, মেক্সিকো, সৌদি আরব, এবং রাশিয়াতেও। ২০২২ সালের জানুয়ারিতেই এই পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা। মোট ৪০,০০০ স্বেচ্ছাসেবী এই পরীক্ষায় অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এর মধ্যে পাকিস্তানের করাচি, ইসলামাবাদ ও লাহোরের পাঁচটি হাসপাতাল থেকে প্রায় ৮,০০০ থেকে ১০,০০০ মানুষের এই পরীক্ষায় অংশ নেবেন কথা ছিল। পাক সরকার এখনও পর্যন্ত মোট অংশগ্রহণকারী স্বেচ্ছাসেবীদের সংখ্যা না জানালেও, কার্যক্ষেত্রে প্রত্যাশিত সংখ্যার ধারে কাছেও সেই সংখ্যা পৌঁছায়নি বলেই জানা গিয়েছে। নির্বাচিত পাঁচটি হাসপাতালের অন্যতম, করাচির ইন্ডাস হাসপাতালে (টিআইএইচ) গত ১৩ অক্টোবর থেকে এই ট্রায়ালের জন্য স্বেচ্ছাসেবী মিলেছে সাকুল্যে ৫০০ জনের মতো। যদিও এই সময়ের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০০০। অন্যান্য হালপাতালগুলির স্বেচ্ছাসেবীদের সংখ্যাও তথৈবচ।
পাক সরকার পরিচালিত গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ (এনআইএইচ) সরকারিভাবে এর কারণ সম্পর্কে কিছু না জানালেও, অন্দরমহলে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, ভ্য়াকসিন নিয়ে পাক সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়ো তথ্যের বন্যা বইছে। তার কারণেই হাসপাতালগুলিতে টিকা পরীক্ষার জন্য স্বেচ্ছাসেবী মিলছে না। এনআইএইচ এর এক কর্মকর্তা অবশ্য জানিয়েছেন এই ধরণের পরীক্ষায় স্বেচ্ছাসেবী সংগ্রহের ক্ষেত্রে সমস্যা হওয়াটা পাকিস্তানে কোনও নতুন ঘটনা নয়। বিশ্বে বহুল প্রচলিত বেশ কিছু ভ্যাকসিন নিয়েও পাকিস্তানিদের এই মনোভাব দেখা গিয়েছে। যেমন অনেক পাকিস্তানি বাবা-মা'ই তাঁদের বাচ্চাদের পোলিও ভ্যাকসিন খাওয়াতে চান না। তাঁদের বিশ্বাস, এটি বিষাক্ত অথবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ তেকে ইসলামী দেশগুলির শিশুদের নপুংসক করার চক্রান্তের অংশ।
কোভিড নিয়ে পাকিস্তানে কী কী গুজব ছড়িয়েছে?
সম্প্রতি এক পাক মুসলিম ধর্মগুরুকে একটি ভাইরাল ভিডিওয় চিকিত্সকদের বিরুদ্ধে করোনাভাইরাস রোগীদের হত্যার মিথ্যা অভিযোগ করতে দেখা গিয়েছে। তিনিই দাবি করেছেন, কোভিড-১৯'এর ভ্যাকসিনে একটি মাইক্রোচিপ ভরা থাকবে, যার মাধ্যমে ইহুদিরা অমন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষের মন নিয়ন্ত্রণ করবে। এছাড়া, কোথাও কোথাও রটেছে, পাকিস্তানীদের প্রাকৃতিকভাবেই করোনার বিরুদ্ধে অনাক্রম্যতা রয়েছে। কিন্তু, সরকারে পক্ষ থেকে মিথ্য়া মিথ্যা করোনা পরীক্ষার ফল ইতিবাচক দেখানো হচ্ছে। কারণ যত বেশি মানুষ ইতিবাচক হবেন, ততই নাকি বিদেশী অর্থ পাবে ইমরান সরকার। আবার পাকিস্তানে কোভিড মৃত্যুর তুলনামূলকভাবে সংখ্যা কম, এই তথ্য দিয়ে বলা হচ্ছে, এই রোগটি দক্ষিণ এশীয়দের চেয়ে পাশ্চাত্য দেশের মানুষের পক্ষে বেশি ক্ষতিকারক।
পাকিস্তানে গত জুন মাসেই সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছেছিল কোভিড সংক্রমণ। দৈনিক নতুন কোবিড রোগীর সংখ্যা ৬,০০০ ছাপিয়ে গিয়েছিল। তারপর থেকে ধীরে ধীারে করোনার দাপট কমছিল। তবে শুক্রবার থেকেই সেখানে করোনার নতুন তরঙ্গ আছড়ে পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এদিন পাকিস্তানে একদিনে নতুন কোভিড রোগীর সংখ্যা ফের হাজার ছাপিয়ে হয়েছে ১,৩৭৬ আর মৃত্য়ুর সংখ্যা ৩০টি। সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত পাকিস্তানে মোট করোনা রোগীর সংখ্যা ৩,৪০,২৫১ এবং কোভিড জনিত কারণে মৃত্যু হয়েছে ৬,৯৩২ জনের।