পাকিস্তান তথা ইমরান খানের উপর কি আস্থা হারাচ্ছে বেজিং? বাস হামলার প্রেক্ষিতে চিন দিল ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের হুমকি, পাঠালো নিজস্ব তদন্তকারী দলও।
উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তানে বাসে বিস্ফোরণের ঘটনায় ৯ জন চিনা ইঞ্জিনিয়ারের মৃত্যু হয়েছিল। ঘটনাটি 'সন্ত্রাসবাদী হামলা' হতে পারে বলে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ঘোষণা করার পরই, শনিবার, এই হামলার তদন্তের জন্য চিন নিজস্ব তদন্তকারী দল পাঠালো পাকিস্তানে। শুক্রবারই, পাক সন্ত্রাসবাদীদের নির্মূল করতে পাক ভূমে চিনা ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করার হুমকি দিয়েছিল চিন। তারপরই এই অগ্রগতি ঘটল।
গত বুধবার, ১৪ জুলাই, পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের একটি জলবিদ্যুৎ বাঁধ নির্মাণস্থলের কাছে ওই বিস্ফোরণ ঘটেছিল। বাসটিতে প্রায় ৪০ জন চীনা ইঞ্জিনিয়ার, জরিপকারী এবং যান্ত্রিক কাজের কর্মীরা ছিল। আর ছিল পাক নিরাপত্তা কর্মীরা। বিস্ফোরণে ১২ জন নিহত হয়েছিলেন, যার মধ্যে নয়জনই ছিল চিনা নাগরিক, বাকিরা স্থানীয় পাকিস্তানি। গুরুতর আহত হয়েছিলে ওই বাসের আরও ২৮ জন।
প্রথমে পাকিস্তানি বিদেশ মন্ত্রক, যান্ত্রিক ব্যর্থতায় উপত্যকায় পড়ে গ্যাস লিক করে বাসে বিস্ফোরণ ঘটে - এইভাবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল। কিন্তু, সেই ব্যাখ্যায় মোটেই সন্তুষ্ট হয়নি বেজিং।
বৃহস্পতিবারই চিনা সরকারি সংবাদত্র গ্লোবাল টাইমস-এর সম্পাদক টুইট করে বলেছিলেন, এর আগে কাপুরুষ সন্ত্রাসবাদীরা চিনকে আক্রমণ করার সাহস দেখায়নি। তবে তাদের অবশ্যই খুঁজে বের করে নির্মূল করা হবে। তিনি আরও বলেন, পাকিস্তানের যদি জঙ্গি নির্মূল করার ক্ষমতা না থাকে, তাহলে চিনা ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা যেতে পারে এবং চিনা সেনাবাহিনীর বিশেষ দলকে পাকিস্তানে পাঠানো যেতে পারে। গ্লোবাল টাইমস-এর সম্পাদকের বক্তব্যকে রাষ্ট্র-অনুমোদিত বলেই ধরে নেওয়া যায়।
এরপরই, পাক তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ হুসেন চৌধুরী ওই ঘটনায় বিস্ফোরক ব্যবহারের 'নিশ্চিত' প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে বলে জানিয়েছিলেন। তার প্রেক্ষিতেই এদিন পাকিস্তানে তদন্তকারী দল পাঠালো চিন। তার আগে চিনের জননিরাপত্তা মন্ত্রী ঝাও কেজি, পাক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও এই বিষয়ে কথা বলেন, বলে জানা গিয়েছে। ঝাও কেজি জানিয়েছেন, 'চিন ও পাকিস্তান একত্রিতভাবে এই সত্য সন্ধানের কাজ করবে। পাকিস্তানকে তদন্তে সহায়তা করার জন্যই চিন সেই দেশে অপরাধমূলক তদন্তের প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের পাঠাচ্ছে।'
অন্যদিকে চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান বিস্ফোরণের জন্য দায়ী সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছেন পাকিস্তানকে। পাকিস্তানে থাকা চিনা নাগরিক ও প্রকল্পগুলিকেও 'আন্তরিকভাবে' রক্ষা করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
পাকিস্তানই চিনের নিকটতম আঞ্চলিক মিত্রশক্তি। কিন্তু, ক্রমেই পাকিস্তানে মুসলিম মৌলবাদীদের চক্ষুশূল হয়ে উঠছে বেজিং। এমনকী চিনের পক্ষ থেকে তাদের ধর্ম পালন করতে দেওয়া হচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে। পাকিস্তানে চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের বিভিন্ন প্রকল্পের কর্মরত চিনা কর্মীদের নিরাপত্তা দীর্ঘদিন ধরেই বেজিং-এর উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠেছে। এই হামলা সেই ধারবাহিকতারই অংশ বলে মনে করা হচ্ছে।