অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে হ্যাটট্রিক করতে পারলেন না অ্যারিনা সাবালেঙ্কা।
আমেরিকার ম্যাডিসন কিজ় জিতলেন ৬-৩, ২-৬ এবং ৭-৫ ব্যবধানে। গত ২০০৯ সাল থেকে পেশাদার টেনিস খেলে চলেছেন কিজ়। তবে এই প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপা জিতলেন। মাত্র ২৯ বছর বয়সে প্রথমবারের জন্য অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালে উঠেই বাজিমাত করলেন তিনি।
তবে এদিন ফেভারিট হিসেবেই ফাইনাল খেলতে নেমেছিলেন শীর্ষবাছাই সাবালেঙ্কা। তাঁর সামনে ছিল কার্যত হ্যাটট্রিকের সুযোগ। কিন্তু ২৯ বছরের আমেরিকার খেলোয়াড়কে হারাতে পারলেন না তিনি। বরং, দাপট দেখিয়েই জয় ছিনিয়ে নিলেন কিজ।
এ যেন সত্যিই হাল না ছাড়া এক মানসিকতা। যা মানুষকে নিঃসন্দেহে একটি জায়গায় পৌঁছে দেয়। আর এদিন কিজ়কেও দিয়েছে। মাত্র ১৪ বছর বয়স থেকে পেশাদার টেনিস খেলতে শুরু করা কিজ়কে প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যামের জন্য অপেক্ষা করতে হল আরও ১৫টা বছর। আমেরিকার কিজ়কে ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিতে হয়েছে বারবার। একাধিকবার ব্যর্থ হয়েছেন এবং পরাজয় বহন করেছেন। কিন্তু ততবারই উঠে দাঁড়িয়েছেন এবং শিখেছেন।
তাঁর সেই চেষ্টা বৃথা যায়নি। হাজার হাজার টেনিস খেলোয়াড় সারাজীবন চেষ্টা করেও গ্র্যান্ড স্ল্যাম সেমিফাইনাল বা ফাইনালে উঠতে পারেন না। কিন্তু কিজ় তাদের টপকে গেলেন। সেইসঙ্গে, আরও একজন গ্র্যান্ড স্ল্যাম সিঙ্গলস চ্যাম্পিয়নকে পেল আমেরিকা। সাবালেঙ্কা সাধারণত প্রতিপক্ষকে খুব একটা সুযোগ দেন না। কারণ, প্রতিপক্ষের উপর চাপ বজায় রাখেন ম্যাচের একেবারে শুরু থেকেই।
শক্তিশালী সার্ভিস এবং ব্যাকহ্যান্ডে প্রতিপক্ষকে বেঁধে ফেলার চেষ্টা তাঁর চিরাচরিত একটি স্টাইল। কিন্তু শনিবার যেন তিনি নিজেই ফাঁদে পড়ে গেলেন। এদিন ততটা শক্তিশালী দেখাল না তাঁকে। পরপর তিনবার অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জেতার বিষয়টি হয়ত তাঁকে কিছুটা চাপে রেখেছিল। সামনে ছিল হ্যাটট্রিকের সুযোগ।
নিজের চাপে নিজেই যেন আটকে গেলেন। কিজ় প্রথম সেট জিতে নিলেন ৬-৩ ব্যবধানে। তখনই হয়ত টেনিসপ্রেমীদের মনে আশঙ্কার কালো মেঘ তৈরি হয়েছিল। বা হয়ত আশার সঞ্চার ঘটেছিল। হ্যাঁ, এদিনের হারের পর সাবালেঙ্কার হ্যাটট্রিক অপূর্ণ থেকে গেল। কিন্তু উল্টোদিকে ২৯ বছর বয়সী কিজ়ের চ্যাম্পিয়ন হওয়াটিও বেশ ইতিবাচক একটি দিক।
ম্যাচের প্রথম থেকে সমানে সমানে লড়াই হয়েছে দুজনের মধ্যে। সাবালেঙ্কা এবং কিজ় চেষ্টা করেছেন প্রতিপক্ষের ভুলগুলিকে কাজে লাগাতে এবং পয়েন্ট তুলতে। কখনও সাবালেঙ্কা সফল হয়েছেন তো কখনও আবার কিজ়। প্রথম সার্ভিসের ক্ষেত্রে সাবালেঙ্কাকে আর পাঁচটা দিনের মতো ধারাবাহিক দেখায়নি। আর সেই সুযোগকেই কাজে লাগাতে চেয়েছেন কিজ়।
ফাইনালের মতো ম্যাচে, সাবালেঙ্কার চারটি ডাবল ফল্টও সুবিধা করে দেয় কিজ়কে। অন্যদিকে, কিজ় ‘এস’সার্ভিস অনেক বেশি করেছেন। প্রথম সার্ভিসে বেশি পয়েন্টও জিতেছেন। অন্যদিকে, ব্রেক পয়েন্ট বেশি কাজে লাগিয়েছেন। তাই এই সবকিছুই পার্থক্য গড়ে দিয়েছে শেষপর্যন্ত।
অবশ্য প্রথম সেট হারের পর, দ্বিতীয় সেট ৬-২ ব্যবধানে জিতে সমতা ফিরিয়ে এনেছিলেন সাবালেঙ্কা। ফলে, তৈরি হয়েছিল তাঁর হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা। আর তৃতীয় সেটে কার্যত, সমানে সমানে এগোচ্ছিল লড়াই। কিন্তু আসল সময়ে একাধিক ভুল করে বসেন বেলারুশের এই খেলোয়াড়টি।
ফাইনালের হাইভোল্টেজ মুহূর্ত তখন। তৃতীয় সেট ৫-৫ হওয়ার পর নিজের সার্ভিস ধরে রেখে কিজ় ৬-৫ ব্যবধানে এগিয়ে যান কিজ। এরপর সার্ভিস পান সাবালেঙ্কা। কিন্তু সেই গেমের প্রথম দুটি সার্ভিসই ঠিকঠাক হয়নি তাঁর জন্য। স্বাভাবিকভাবেই আরও চাপে পড়ে যান তিনটি গ্র্যান্ড স্ল্যামের মালিক। অন্যদিকে, প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যামের গন্ধ পেয়ে যাওয়া কিজ় ছিলেন বেশ সতর্ক।
মাথা ঠান্ডা রেখে ধরে খেলার চেষ্টা করতে থাকেন। আর তারপর সাবালেঙ্কার সার্ভিস ভেঙে বসে পড়লেন সোজা কোর্টে। আনন্দে আত্মহারা কিজ় বুঝতে পারছিলেন না ঠিক কী করবেন। যেন চাপের কাছেই হেরে গেলেন সাবালেঙ্কা। কিন্তু তাতে কিজ়ের কৃতিত্ব কমতে পারেনা একটুও। সাবালেঙ্কা নিজের সেরা খেলাটা খেলতে পারেননি ফাইনালে। স্নায়ুর চাপ তাঁর উপরও কম ছিল না। তবে সেই চাপ সামলে সুযোগ কাজে লাগানোটাও যথেষ্ট কঠিন ছিল।
কিন্তু সেই কঠিন কাজটাই সফলভাবে করেছেন কিজ়। ম্যাচের শেষপর্যন্ত লড়াই করে গেছেন আপ্রাণ। দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করে গেছেন তিনি। দীর্ঘদিনের অলক্ষের প্রস্তুতিই কিজ়কে যেন পৌঁছে দিল নিজের লক্ষ্যে।
আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।