দিন কয়েক আগেই কোভিড ১৯-এর লড়াই-এ পরাস্ত হয়েছিলেন দ্য ফ্লাইং শিখ মিলখা সিং-এর স্ত্রী নির্মল সাইনি কউর। দিনটা ছিল ১৩ জুন, রবিবার। মনে করা গিয়েছিল মিলখা লড়াইটা হয়তো জিতে যাবেন। কিন্তু পারলেন না ভারতের উড়ন্ত শিখ। স্ত্রীর প্রয়াণের সাত দিন পূরণে হওয়ার এক দিন আগেই চলে গেলেন মিলখা। ৯১ বছর বয়সে ১৮ জুন রাত সাড়ে এগারোটায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। সেই সঙ্গে ভারত হারাল অ্যাথলেট দুনিয়ায় তাঁর কিংবদন্তিকে।
চণ্ডীগড়ের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চে ভর্তি করানো হয়েছিল মিলখা সিং-কে। পোস্ট কোভিড ১৯-এর তাঁর শরীরে বেশকিছু সমস্যা তৈরি হয়েছিল। শারীরিক অবস্থা সঙ্কটে হওয়ায় মোহালির ফোর্টিস হাসপাতাল থেকে মিলখাকে চণ্ডীগড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ১৯ মে মিলখা সিং-এর কোভিড ১৯ পরীক্ষার ফল পজিটিভ আসে। এরপর কয়েক দিন পর থেকেই তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় এবং অক্সিজেনের তারতম্য নেমে যাওয়ায় তাঁকে মোহালির ফোর্টিস হাসপাতালের আইসিইউ-তে ভর্তি করানো হয়েছিল। সেখানেই চিকিৎসা চলছিল। এরপর তাকে চণ্ডীগড়ে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চে ভর্তি করানো হয়েছিল। শুক্রবার রাতে ঘড়ির কাঁটা এগারোটা পার হতেই দ্রুত শারীরিক অবস্থার অবনিত হচ্ছিল দ্য ফ্লাইং শিখ-এর। রাত বারোটা নাগাদ মিলখা পুত্র তথা বিশ্বখ্যাত গল্ফার জীব মিলখা সিং এক বিবৃতি জানান যে দেশের অ্যাথলেটের কিংবদন্তি উড়ন্ত শিখ আর নেই।
এই বিবৃতিতে আরও জানানো হয় যে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দ্য ফ্লায়িং শিখ লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন। সহজে মৃত্যু তাঁকে হার মানাতে পারেনি। এমনকী বিবৃতিতে বলা হয়- হয়তো ৫ দিন আগেই প্রয়াত স্ত্রী নির্মলা-কে একা ছেড়ে দিতে ইচ্ছুক ছিলেন না মিলখা, সেই কারণে জীবনসঙ্গীনিকে সঙ্গ দিতে পাড়ি জমালেন অমৃতলোকে। যেমনভাবে নির্মলাকে সারাটা জীবন সঙ্গ দিয়ে এসেছিলেন মিলখা, সেই কর্তব্য পালনেই সত্যি তিনি বিদায় নিলেন।
এছাড়াও বিবৃতিতে জানানো হয়েছে মিলখার কোভিড আক্রান্ত হওয়ার দিন থেকে এতদিনকার চিকিৎসার অগ্রগতির তথ্য। মিলখা সিং-এর প্রয়াণের খবর ছড়িয়ে পড়তেই শোকপ্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি একটি বিবৃতি প্রকাশ করে মিলখা সিং ক্রীড়াবিদ হিসাবে তৈরি করা নজিরের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন এবং সেইসঙ্গে মিলখার পরিবারের সঙ্গে তাঁর যে কথা হয়েছে তাও জানান।
অ্যাথলেট দুনিয়ায় মিলখা সিং-এর হাত ধরেই বিশ্বমঞ্চে এক শক্তি হিসাবে উঠে আসেন মিলখা। এশিয়ান ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড মিটে ৪টি সোনার পদক জয় করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। ১৯৫৮ সালে কার্ডিফে কমনওয়েলথ গেমসেও তিনি সোনা জয় করেন। ১৯৬০ সালে রোম অলিম্পিকে অল্পের জন্য ৪০০ মিটার ফাইনালে পদক হাতছাড়া হয় মিলখার। ৪৫,৭৩ সেকেন্ডে রোমে দৌঁড় শেষ করেছিলেন মিলখা। পরবর্তী ৪০ বছরে ভারতের কোনও অ্যাথলেট ৪০০ মিটারে এই সময়ের রেকর্ডকে ভাঙতে পারেনি। ১৯৯৮ সালে পরমজিৎ সিং প্রথম মিলখার এই রেকর্ড ভাঙেন। তাঁর কৃতিত্বের জন্য পদশ্রী সম্মানেও সম্মানিত হয়েছিলেন মিলখা।