করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে এমনতিই নাজেহাল মার্কিন মুলুক, এরপর আবার মরার উপর খাঁড়ার ঘা শ্বেতাঙ্গ-কৃষ্ণাঙ্গ দ্বন্দ্ব। কিছুদিন আগেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শ্বেতাঙ্গ পুলিশের হাতে জর্জ ফ্লয়েড নামের এক কৃষ্ণাঙ্গ যুবকের নির্মমভাবে হত্যার ঘটনার জেরে পুরো আমেরিকা জুড়ে এখন চলছে প্রবল বিক্ষোভ ও আন্দোলন।
মিনেসোটা অঙ্গরাজ্য থেকে বিক্ষোভের ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে গোটা দেশজুড়ে। এবার সেই বিক্ষোভের আঁচ গিয়ে পড়েছে হোয়াইট হাউসেও। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরকারি বাসভবন হোয়াইট হাউসের বাইরে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন আন্দোলনকারীরা।হোয়াইট হাউসের বাইরে জড়ো হওয়া বিক্ষোভকারীদের হাতে প্রতিবাদী নানা প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। বিক্ষোভকারীরা স্লোগানও দিচ্ছিলেন। তাঁরা আগুন জ্বেলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এই অবস্থায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সুরক্ষার জন্য তাঁকে হোয়াইট হাউসের আন্ডারগ্রাউন্ড বাঙ্কারে নিয়ে যাওয়া হয়।
এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তার হাতে এক কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমেরিকার শহরে শহরে এখন ছড়িয়ে পড়েছে জনরোষ। বিক্ষোভ থামাতে গত শনিবার ২৫টির বেশি শহরে কারফিউ জারি এবং ১২টি অঙ্গরাজ্যে জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিক্ষোভকারীদের সতর্কও করেছেন। এসব বিধি অমান্য করেই শনি ও রবিবার হাজার হাজার মানুষ রাজপথে নেমে এসে নৃশংস ওই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানান। অনেক জায়গায় লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে।
আরও পড়ুন: সংক্রমণের সংখ্যা ছাড়াল ১ লক্ষ ৯০ হাজার, আক্রান্ত দেশের তালিকায় সপ্তমে উঠে গেল ভারত
এমনই এক আন্দোলনকারীদের দল বিক্ষোভ করতে করতে হোয়াইট হাউসের দিকে এগোতে থাকে। তখনই আমেরিকার সিক্রেট সার্ভিস এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পার্ক পুলিশ তাদের মাঝপথেই আটকে দেয়ার চেষ্টা করে। সূত্রের খবর, হোয়াইট হাউজের বাইরে মানুষের বিক্ষোভ আছড়ে পড়া দেখে রীতিমতো ঘাবড়ে যান ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার সঙ্গীসাথীরা। অবস্থা বেগতিক দেখে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে মাটির তলার বাঙ্গারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তবে মেলানিয়া ট্রাম্প এবং ব্যারন ট্রাম্পকেও তার সঙ্গে সেখানে পাঠানো হয়েছিল কিনা তা এখনও জানা যায়নি।
প্রায় ঘণ্টাখানেক মাটির তলায় ঘাপটি মেরে থাকতে হয় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। বাঙ্কার থেকে তাঁকে ওপরে তোলার পরেও নাকি বেশ আতঙ্কেই ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
জাল নোট ব্যবহারের অভিযোগে টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের হিউস্টনের বাসিন্দা জর্জ ফ্লয়েড (৪৬) নামের এক কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিকে গত সোমবার আটক করে মিনোসোটা অঙ্গরাজ্যের মিনিয়াপোলিস শহরের পুলিশ। আটকের পর পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক চৌভিন ফ্লয়েডের ঘাড় হাঁটু দিয়ে সড়কে চেপে ধরলে তিনি মারা যান। এই ঘটনার ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়লে রোষে ফেটে পড়েন ক্ষুব্ধ জনতা। পরে ডেরেকসহ চার পুলিশ কর্তাকে বরখাস্ত করা হয়। ডেরেককে গ্রেপ্তারের পর তাঁর বিরুদ্ধে হত্যার মামলাও করা হয়েছে।