যুদ্ধ মানুষকে কী করে? এই নিয়ে অচিন্ত্য চক্রবর্তীর একটি বিখ্যাত কবিতাও রয়েছে। যুদ্ধ মানে ভিটে-মাটি থেকে উচ্ছেদ হওয়া। আর এখন সেই দশা অভিষেক কুমারের। এক ছবির মতো সুন্দর দেশে নিজের ভিটে-মাটি ছেড়ে স্ত্রী-কন্যা ও পুত্রের হাত ধরে দেশের পথে তিনি।
সব ছিল তাঁর কাছে। বাড়ি-সংসার, প্রবল ঐশ্বর্যশালী ব্যবসা। কিন্তু যুদ্ধের সামনে আপাতত সব ফিকে হয়ে গিয়েছে। এখন বরাত জোরে রক্ষা পাওয়াটাই বড় হয়ে উঠেছে অভিষেকের কাছে। ভারতের ছেলে অভিষেক আপাতত স্ত্রী নাতাশা-কন্যা অঞ্জলি এবং পুত্রকে নিয়ে দেশের পথে। তাঁর মতে, এমন এক পরিস্থিতিতে মা-বাবা-র আশ্রয়কেই যেন পরম এবং নিশ্চিন্তের বলে মনে হচ্ছে। আর সেই কারণে খারকিভে সব ফেলে আপাতত ভারতের পথে তিনি। ১৯৯৫ সালে খারকিভে ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে এসেছিলেন অভিষেক। ইউক্রেন থেকেই পরবর্তীকালে এমটেক করেন। এরপর দেশে ফিরলেও কর্মস্থল হয়ে ওঠে ইউক্রেন। খারকিভে নিজের ব্যবসা খোলেন অভিষেক। খানিকটা প্রতিষ্ঠা পেতেই বিয়ে করেন ইউক্রেনের মেয়ে এবং বান্ধবী নাতাশাকে। এই মুহূর্তে অভিষেক ও নাতাশার দুই সন্তান। বড় মেয়ে অঞ্জলির বয়স ১৮ বছর। সে খারকিভেই মেডিক্যালের ছাত্রী। ছোট ছেলে এখনও অনেকটাই ছোট। ইউক্রেনীয় ভাষায় বাইরে সেভাবে অন্য কোনও ভাষা সে বোঝে না। মেয়ে অঞ্জলি হিন্দি বুঝতে পারলেও ইংরাজি এবং ইউক্রেনিয় ভাষাতেই কথা বলতে স্বচ্ছন্দ। অভিষেকের বাড়ির কাছেই দিন কয়েক আগে একটি রকেট এসে পড়েছিল। এরপর বাড়িতে থাকাটা আর নিরাপদ বলে মনে করেননি তাঁরা। ছেলে-মেয়ে-স্ত্রীর হাত ধরে দেশের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়েন অভিষেক। অনেক কষ্টে ট্রেনে করে এসে পৌঁছান পোল্যান্ডের সীমান্তে। সেখান থেকে গাড়ি নিয়ে আপাতত পোল্যান্ডে বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন অভিষেক। সপরিবারে দেশে ফিরে আসতে আপাতত নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে চলা অপারেশন গঙ্গায় ভরসা রেখেছেন অভিষেক। নম নম করে আপাতত দেশে ফিরে আসা এবং তারপরে ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ-এর রূপরেখা তৈরি করবেন বলে জানিয়েছেন অভিষেক।