ভোট পরবর্তী হিংসায় আজও ঘর ছাড়া বিজেপি সমর্থক পরিবারের সদস্যরা। কেউ কেউ জরিমানা দিয়ে তৃণমূলের পতাকা ধরে ঘরে ফিরলেও সাত’শো পরিবার এখনও ঘরে ফিরতে পারেনি। সময়ে ধান ঘরে তুলতে না পাড়ায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে মাঠের ফসল মাঠেই নষ্ট হচ্ছে। হয়তো কোন একদিন বাড়ি ফিরবে তারা। কিন্তু কীভাবে অন্নসংস্থান হবে তা ভেবেই দিশেহারা পরিবারগুলি। এখনও পর্যন্ত বিজেপির ত্রাণ শিবিরেই দিন কাটছে তাঁদের।
নির্বাচনের আগে থেকে বিজেপি – তৃণমূল সংঘর্ষে উত্তপ্ত ছিল বীরভূম জেলা। নির্বাচনের দিন সেই সংঘর্ষ বড় আকার ধারন করে। বেশ কয়েক জায়গায় বিজেপি প্রার্থীদের গাড়ি ভাংচুর করা হয়। মারধর করা হয় বিজেপি কর্মী সমর্থকদের। ২ মে ভোটের ফলাফল বের হওয়ার পর হিংসা বড় আকার ধারণ করে। নানুর বিধানসভা এলাকায় হিংসা সব থেকে বেশি। এছাড়া লাভপুর, ময়ূরেশ্বর, সাঁইথিয়া, বোলপুর বিধানসভা এলাকাতেও হিংসার কারণে ঘর ছাড়া প্রায় সাতশো পরিবারের প্রধান। কেউ কেউ তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করে জরিমানা দিয়ে পতাকা ধরে বাড়ি ফিরলেও অধিকাংশ বিজেপি কর্মী সমর্থকের জরিমানা দেওয়ার সামর্থ্য না থাকায় গ্রামছাড়া হয়ে রয়েছেন। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামছাড়া বিজেপি কর্মী সমর্থকদের অধিকাংশই কৃষিজীবী। তারা জমির ফসল ফেলে প্রাণ বাঁচাতে ঝাড়খণ্ড, মুর্শিদাবাদ, তারাপীঠ এবং জেলার বিভিন্ন প্রান্তে দলীয় কার্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ কেউ রয়েছেন অনেক দূরে আত্মীয়ের বাড়িতে।
পরিবারের পুরুষরা ঘর ছাড়া থাকায় মাঠের ফসল মাঠেই নষ্ট হচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে জমিতে জল জমে নষ্ট হয়ে গিয়েছে বিঘের পর বিঘে জমির ধান। কয়েক কোটি টাকার ফসল নষ্ট হয়েছে বলে বিজেপি নেতৃত্বের দাবি। তাদের এখন আকুতি কোনভাবে ঘরে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হোক। বিজেপির পক্ষ থেকে প্রশাসনের দ্বারস্থ হলেও কোন লাভ হয়নি বলে অভিযোগ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নানুরের নানুরের জনৈক বিজেপি কর্মী বলেন, “গণনার পর দিন থেকে আমি গ্রাম ছাড়া হয়ে রয়েছি। বাড়িতে বৃদ্ধা মা, স্ত্রী ও দুই ছোট ছোট ছেলেমেয়ে রয়েছে। চাষবাসের উপর সংসার চলে। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগে সব জমির ধান নষ্ট হয়ে গেল। বাড়ি ফিরে এখন কি খাব বুঝতে পারছি না”।
জেলা বিজেপি নেতা কালোসোনা মণ্ডল বলেন, “আমরা এর আগেও একটি তালিকা জেলা পুলিশ সুপার এবং জেলা শাসকের কাছে জমা দিয়েছিলাম। তারপরও বহু কর্মী সমর্থক বাড়ির বাইরে রয়েছেন। আবার ঘর ছাড়া কর্মীদের একটি তালিকা জমা দেব। তারপরও প্রশাসন ব্যবস্থা না নিলে নিজেরাই পথে নামব”।
জেলা পুলিশ সুপার নগেন্দ্র ত্রিপাঠি বলেন, “আমাদের কিছু তালিকা দিয়েছিল। তাদের ঘরে ফেরানো হয়েছে। আমাদের হাতে বাকি ঘরছাড়াদের তালিকা দিলে আমরা প্রত্যেকে ঘরে ফেরানোর ব্যবস্থা করব”।