তাপস দাস, প্রতিনিধি, তিনি রসেবশে থাকা রাজনীতিবিদ। এই তো দোলের সময়ে দিব্যি রাজনৈতিক মতপার্থক্য ভুলে হোলি খেললেন বিরোধী রাজনীতির নায়িকাদের সঙ্গে। তিনি, অর্থাৎ মদন মিত্র সবসময়েই বিন্দাস। ফলে বেহালা পূর্বের বিজেপি প্রার্থী পায়েল সরকার, বেহালা পশ্চিমের বিজেপি প্রার্থী শ্রাবন্তী এবং শ্যামপুরের বিজেপি প্রার্থী তনুশ্রীর সঙ্গে গঙ্গাবক্ষে রঙের মাতনে মদনকে মেতে উঠতে দেখলে কেউই বিশেষ অবাক হন না।
সেদিন তাঁকে দেখলে কেউ বলতে পারত না, কয়েক সপ্তাহ আগে আবার সারদা মামলায় ইডির সামনে হাজিরা দিতে হয়েছিল তাঁকে। আবার একদিন আগেই করোনা ভ্যাক্সিন নিয়ে হাসপাতালে তিনি বিলি করেছেন ‘খেলা হবে’ লেখা মাস্ক।
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় তরঙ্গের মধ্যেই কি CBSE বোর্ড পরীক্ষা, বৈঠকে বসছেন প্রধানমন্ত্রী ...
অথচ মদন কিন্তু সংকটে পড়েছেন বারংবার। ২০১৩ সালের মার্চ মাসে রাজারহাটের বিলাসবহুল ফ্ল্যাট থেকে পাওয়া গিয়েছিল পিয়ালি মুখোপাধ্যায় নামের এক যুবতীর গলায় ফাঁস লাগানো মৃতদেহ। ঘরে কোনও সুইসাইড নোট মেলেনি। পিয়ালি ছিলেন সারদা সংস্থার আইনি পরামর্শদাতা। এবং ছিলেন মদন মিত্রের ঘনিষ্ঠও। সিবিআই সূত্রের খবর অনুসারে মৃত্যুর আগের ১০ দিনে ৭৫ বার মদন মিত্রকে ফোন করেছিলেন পিয়ালি।
পঞ্চম দফার ভোটই নবান্ন দখলের চাবিকাঠি, তৃণমূল নেত্রী মমতার কাছে কতটা কঠিন এই লড়াই .
২০১৪ সালে সারদা চিটফান্ড কেলেংকারি মামলায় মদন মিত্র গ্রেফতার হন। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেফতার করে। ৬ দিন সিবিআই হেফাজতে থাকার পর তাঁকে জেলে পাঠানো হয়। দু বছর পূর্ণ হবার কয়েক মাস বাকি থাকতে, ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর জামিনে মুক্ত হন মদন। এর আগে হেফাজতে থাকাকালীন তাঁকে অসুস্থতার জন্য সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল। অভিযোগ উঠেছিল, অসুস্থতার ভান করে হাসপাতালে থাকছেন তিনি।
২০১৭ সালে নারদা কাণ্ডে তাঁকে জেরা করে ইডি। নারদা স্টিং ভিডিওতে যে নেতাদের হাতে করে টাকা নিতে দেখা গিয়েছিল, মদন মিত্র তাঁদের অন্যতম।
২০১১ সালে মদন মিত্র কামারহাটি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ভোটে দাঁড়ান। জেতেনও। প্রথম মমতা সরকারে তিনি ছিলেন ক্রীড়া ও পরিবহণ, দুই দফতরের মন্ত্রী।
২০১৬ সালের নির্বাচনে ফের কামারহাটি থেকে ভোটে দাঁড়ান তিনি। এবার ৪০০০-এর কিছু বেশি ভোটে হেরে যান সিপিএমের মানস মুখার্জির কাছে।
২০২১ সালে আবার তাঁকে কামারহাটি থেকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। এবার তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির রাজু ব্যানার্জি ও সিপিএমের সায়নদীপ মিত্র।
আজ রাজ্যে প্রথমবার নির্বাচনী প্রচারে রাহুল, ওদিকে শীতলকুচি কাণ্ডের পর কোচবিহারে মমতা ...
রসেবশে থাকা মদনের সম্পত্তি বড় কম নয়। পৌনে তিন কোটি টাকারও বেশি অর্থমূল্যের সম্পত্তির মালিক তিনি। বিভিন্ন ব্যাঙ্ক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তাঁর ও তাঁর স্ত্রীর প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা রয়েছে। মদনের নিজের কোনও গাড়ি নেই, তবে তাঁর স্ত্রীর রয়েছে একটি অ্যাম্বাসাডর ও একটি স্করপিও গাড়ি। মদন মিত্রের কাছে যা সোনারুপো রয়েছে তার দাম প্রায় ৩ লক্ষ টাকা, স্ত্রীর সোনারুপোর দাম সাড়ে ৯ লক্ষ টাকার বেশি।
মাঝে মমতার ব্যাডবুকে পড়েছিলেন মদন। ক্রমে আবার উঠে এসেছেন নির্ভরশীলে তালিকায়। তাঁর উত্থান সোপান একই রকম থাকবে কিনা তা স্থির হবে পঞ্চম দফার ভোটে, ১৭ এপ্রিল।