শমিকা মাইতিঃ- স্বাধীনতার পর থেকে মোট ১৬টি বিধানসভা ভোটের মধ্যে ১১ বার যে কেন্দ্র দখলে রাখতে পেরেছে কংগ্রেস, সেই রায়গঞ্জেও এবার ভোটের সুইং বিজেপির ঘরে। গত বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্ত পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে দিয়েছিলেন তৃণমূলের পূর্ণেন্দু দে-কে। ২০২১-এ তৃতীয় বার এই কেন্দ্র থেকে কংগ্রেসের হয়ে লড়ছেন মোহিতবাবু। কিন্তু মাঝের পাঁচ বছরে গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গিয়েছে। কংগ্রেসের ভোটের বড় একটা অংশ এখন বিজেপির ঝুলিতে। অন্তত ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে এই কেন্দ্রে বিজেপির প্রথম আর কংগ্রেসের চতুর্থ স্থান সেই ইঙ্গিতই করছে।
আরও পড়ুন, মমতার বিরুদ্ধে FIR, 'কেন্দ্রীয় বাহিনী ঘেরাও' মন্তব্য়ের জেরে অভিযোগ দায়ের কোচবিহারে
লোকসভা ভোটের সেই হাওয়া এখনও তারা ধরে রেখেছে বলে আত্মবিশ্বাসী এই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী কৃষ্ণ কল্যাণী। এদিকে, তৃণমূলের প্রার্থী কানাইয়ালাল আগরওয়ালকে নিয়ে দলীয় স্তরে ক্ষোভ রয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে খবর। প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর ইসলামপুরের বাসিন্দা তথা বিধায়ক কানাইয়ালালকে ‘বহিরাগত’ তকমা দিয়ে স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরা বিক্ষোভও দেখিয়েছিলেন। উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত রায়গঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্র। রায়গঞ্জ পুরসভা ও রায়গঞ্জ ব্লকের পাঁচটি পঞ্চায়েত এলাকা নিয়ে গঠিত এই কেন্দ্রে ১৭ এপ্রিল পঞ্চম দফায় ভোটগ্রহণ হবে।
বিধানসভা ভোটের হিসাব ধরলে সেই ১৯৫১ সাল থেকে এই আসনে শক্ত হাত কংগ্রেসের। মাঝে চার বার সিপিআই(এম) প্রার্থী জিতেছেন। কিন্তু ১৯৯৬ সাল থেকে ২০১৬ পর্যন্ত টানা এই আসনে কংগ্রেস জিতেছে। ২০১১ সালে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে থাকার কারণে তৃণমূল এই আসনে প্রার্থী দেয়নি। কংগ্রেস প্রার্থী মোহিত সেনগুপ্ত সেবার ৬২৮৬৪ ভোটে জেতেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সমাজবাদী পার্টির কিরণময় নন্দ। বিজেপির শচীন্দ্রনাথ দাস মাত্র ৩,০৫৩টি ভোট পেয়েছিলেন সেবার। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস ও তৃণমূল পৃথক হয়ে লড়ে। বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্ত ৮৭৯৮৩টি ভোট পেয়ে হারিয়ে দেন তৃণমূল প্রার্থী পূর্ণেন্দু দে-কে (৩৬৭৩৬)। বিজেপি-র ভোট বেড়ে হয় ১২৯৬১। তখনও বিজেপি তিন নম্বরে।
কিন্তু এর পরেই কংগ্রেসের নিচুতলার বহু কর্মী-সমর্থক তৃণমূলে যোগ দেন। সাবেক কংগ্রেস ভোটারদের আর একটা অংশ চলে যায় বিজেপিতে । ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়, প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সিদের লড়া রায়গঞ্জ লোকসভা আসনে চার নম্বরে চলে যায় কংগ্রেস। বিজেপি প্রার্থী দেবশ্রী চৌধুরী যেখানে ৪০.০৮ শতাংশ ভোট পান, সেখানে কংগ্রেস প্রার্থী দীপা দাশমুন্সি মাত্র ৬.৫৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন রায়গঞ্জে। এর মধ্যে রায়গঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্র থেকে মাত্র ৯৭৫৫টি ভোট পান কংগ্রেসের দীপাদেবী। প্রায় ৭৮ হাজার ভোট হারিয়ে কংগ্রেস যেখানে চার নম্বরে চলে যায়, সেখানে বিজেপি প্রায় ৭১,০০০ ভোট বাড়িয়ে এক নম্বরে উঠে আসে রায়গঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে। দৃশ্যতই বোঝা যাচ্ছে, কংগ্রেসের ভোট বিজেপির ঝুলিতে গিয়েছিল লোকসভা ভোটে। স্থানীয় কংগ্রেস নেতৃত্বের দাবি, বামেদের সঙ্গে জোটের কারণে ২০১৯-এর ভোটের সমীকরণ এবার কাজ করবে না। যদিও রাজনীতির কারবারিদের মতে, রাজ্যের আর পাঁচটা জায়গার মতো এই কেন্দ্রেও ভোট হচ্ছে বিজেপি আর তৃণমূলের মধ্যে। স্থানীয় কংগ্রেস বিধায়কের জনপ্রিয়তা উড়ে গিয়েছে মেরুকরণের ভোটে।