বাংলায় মাটি কার পক্ষে , ভোটশেয়ার বাড়াতে গেরুয়া ঝুঁকছে লালের দিকে

  • বাংলায় বরাবর দ্বিমুখী ভোট হয়ে আসছে
  •  বাংলায় বিজেপি কী পারবে লোকসভা ভোটের চেয়েও তার ভোটশেয়ার বাড়াতে
  • বাংলার মাটি কার পক্ষে থাকল, জানা যাবে ২ মে
  • মধ্যবিত্ত শিক্ষিত বাঙালির  বড় অংশ সমর্থন করছে বামেদের  নতুন প্রজন্মকে

Asianet News Bangla | Published : Apr 17, 2021 12:27 PM IST

শামিকা মাইতি: থেকেও নেই। না থেকেও আছে। ২০২১-এর পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা ভোটের মানচিত্রে বামেদের গুরুত্বটা অনেকটা এরকম। বামেদের ভোট  ঝুলিতে যাওয়ার জন্যই ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে ৪০ শতাংশ  পার করে ফেলেছিল বিজেপি। ৪২টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে তৃণমূল যেখানে ২২টা পায়, বিজেপির সেখানে ২টো থেকে বেড়ে ১৮টা হয় আর বামেদের ঝুলিতে শূন্য।  বামেদের সেই রক্তক্ষরণ অব্যাহত থাকবে কি না, তার উপরে অনেকটাই নির্ভর করছে ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে বিজেপির জয়যাত্রা।

আরও পড়ুন-আহত বিজেপি প্রার্থী রাজু বন্দ্যোপাাধ্যায়, চলন্ত গাড়িতে দুঃসাহসিক বাইক-হামলা...

 


 
বাংলায় বরাবর দ্বিমুখী ভোট হয়ে আসছে। সত্তরের দশক থেকে একবিংশ শতাব্দীর সূচনা পর্যন্ত লড়াইটা ছিল বামদল আর কংগ্রেসের মধ্যে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল তৈরি করার পর লড়াইটা বাম আর তৃণমূলের মধ্যে হয়ে যায়। কিন্তু ২০১৯ সালে রাজনৈতিক সেই সমীকরণ অনেকটাই বদলে যায় বিজেপির শক্তিবৃদ্ধিতে। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে এই রাজ্যে বামেরা পেয়েছিল ২৯.৯ শতাংশ ভোট, যেখানে বিজেপি পেয়েছিল ১৭ শতাংশ। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে দেখা যায় বামেরা ২৫.৬১ শতাংশ ভোট পেয়েছে যেখানে বিজেপি মাত্র ১০.১৬ শতাংশ। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে সেই বিজেপির ভোট একলাফে বেড়ে হয় ৪০.৫ শতাংশ, যেখানে বামেদের কমে দাঁড়ায় ৭.৫ শতাংশ। এইখানে আর একটা জিনিস লক্ষ্যণীয়, সেটা হল লোকসভা ভোটের থেকে বিধানসভা ভোটে সবসময়ই ভোটশেয়ার কমেছে বিজেপির। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে যেখানে তারা ১৭ শতাংশ পেয়েছিল, বিধানসভা ভোটে সেখানে কমে হয়ে যায় ১০.১৬ শতাংশ। এই প্রবণতা শুধু পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে নয়, অন্যান্য রাজ্যেও দেখা গিয়েছে। যেমন ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটে ঝাড়খণ্ডে বিজেপি ৫১.৫ শতাংশ ভোট পেলেও কয়েক মাস পর অক্টোবর-নভেম্বরে সেখানে যখন বিধানসভা ভোট হয় দেখা যায় বিজেপির ভোট কমে গিয়ে হয়েছে ৩৩.৪ শতাংশ। একই ভাবে মহারাষ্ট্রে লোকসভা ভোটে বিজেপি যেখানে ২৭.৭ শতাংশ ভোট পেয়েছিল বিধানসভা ভোটে সেটা কমে হয় ২৫.৮ শতাংশ ভোট। হরিয়ানাতে বিজেপির লোকসভার ৫৭.৯ শতাংশ ভোট কমে বিধানসভা নির্বাচনে হয় ৩৬.৫ শতাংশ, দিল্লিতে ৫৬.৭ শতাংশ থেকে ৩৮.৫ শতাংশ। 

 

 

এই প্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠছে বাংলায় বিজেপি কী পারবে লোকসভা ভোটের চেয়েও তার ভোটশেয়ার বাড়াতে, যেখানে অন্য রাজ্যে উল্টোছবিটাই আমরা দেখছি। 
উত্তর হল, এর অনেকটাই নির্ভর করছে বামেরা কী ভাবে ভোটের তাস খেলতে পারল তার উপরে। বামেরা এই সত্যিটা জানে বলে, চিরাচরিত অনেক ধ্যানধারণাকে পিছনে ফেলে ঝাঁপিয়ে পড়েছে এবারের ভোটযুদ্ধে। একদিকে ডানপন্থী কংগ্রেস ও সংখ্যালঘুদের দল আইএসএফ-এর সঙ্গে হাত মিলিয়েছে তারা। অন্যদিকে, এক ঝাঁক তরুণ মুখ তুলে এনেছে ভোটের সারিতে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল নন্দীগ্রাম আসনের মীনাক্ষি মুখোপাধ্যায়, জামুড়িয়ার ঐশি ঘোষ, সিঙ্গুরে সৃজন ভট্টাচার্য, বালিতে দীপ্সিতা ধর, ঝাড়গ্রামে মধুজা সেন রায়, কসবায় শতরূপ  ঘোষ প্রমুখ। ফেসবুকের দেওয়াল থেকে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে মধ্যবিত্ত শিক্ষিত বাঙালির একটা বড় অংশ সমর্থন করছে বামেদের এই নতুন প্রজন্মকে। সেই হাওয়া ভোটবাক্স পর্যন্ত পৌঁছলে বিজেপির দুশ্চিন্তার যথেষ্ট কারণ আছে। তবে কিনা, ভোট ফেসবুকে হয় না। ভোট হয় মাটিতে। বাংলার মাটি কার পক্ষে থাকল, জানা যাবে ২ মে।  

Share this article
click me!