সিঙ্গুরের ভোটই বোঝাচ্ছে এবারের নির্বাচনে তৃণমূলের বিপদ আছে

লোকসভা ভোটে সিঙ্গুরে এগিয়ে ছিলেন বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়। চতুর্থ দফায় ভোটের পর সেখানে জয় নিয়ে আশাবাদী বিজেপি। এই কেন্দ্রে এবার বিজেপির বাজি বিদায়ী বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। তৃণমূলের টিকিট না পেয়ে নব্বই ছুঁইছুঁই নেতা শিবির বদলান।

শমিকা মাইতি: গত লোকসভা ভোটে সিঙ্গুর বিধানসভা কেন্দ্রে এগিয়ে ছিলেন বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়।  সেই সিঙ্গুরে চতুর্থ দফায় ভোট হয়ে যাওয়ার পর জয় নিয়ে আশাবাদী বিজেপি নেতৃত্ব। এই কেন্দ্রে এবার বিজেপির হয়ে লড়ছেন বিদায়ী বিধায়ক তথা কৃষি জমি রক্ষা আন্দোলনের নেতা রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। তৃণমূলের টিকিট না পেয়ে নব্বই ছুঁইছুঁই এই নেতা বিজেপিতে যোগ দেন ঠিক ভোটের আগে।  বিজেপি তাঁর উপরেই ভরসা রেখে প্রার্থী করেছে সিঙ্গুরে। অন্য দিকে, এই কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী বেচারাম মান্না রবীন্দ্রনাথবাবুর ভাবশিষ্য। ছাত্র ও তাঁর মাস্টারমশাই একে অপরের বিরুদ্ধে মন্তব্য করেননি প্রচারপর্বে। কারণ তার দরকার পড়েনি। সিঙ্গুরে এবারের ভোটে ইস্যু একটাই- সেটা হল সর্বনেশে জমি আন্দোলন কী ভাবে তাদের পায়ে কুঠারাঘাত করেছে। নন্দীগ্রামের পর রাজ্যের অন্যতম হেভিওয়েট এই কেন্দ্রে লড়াইয়ের মুখ গুরু-শিষ্য নয়, বরং মোদী বনাম মমতা, সিঙ্গুর বনাম সানন্দ। 

২০০৬ সালে টাটাদের ছোট গাড়ি ন্যানোর কারখানার জন্য হুগলির সিঙ্গুরে ৯৯৭ একর জমি অধিগ্রহণ করেছিল বামফ্রন্ট সরকার। এর মধ্যে ৩০০ একরের মতো জমিতে অধিগ্রহণে সায় দেয়নি চাষিরা। অনিচ্ছুক চাষিদের জমি ফেরানোর দাবিতে তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আন্দোলন শুরু করেন। তীব্র বিরোধিতার মুখে পড়ে শেষমেশ টাটা কারখানা গুটিয়ে চলে যায় গুজরাতের সানন্দে।   ন্যানো উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলেও ওই কারখানায় এখন ছোট যাত্রিবাহী গাড়ি তৈরি করছে টাটা। দুই শিফটে কাজ করছে প্রায় সাড়ে চার হাজার কর্মী। অনুসারী শিল্প হিসাবে আরও ৩০টি কারখানা গড়ে উঠেছে আশপাশে। সেখানেও দু'হাজারের বেশি কর্মী। সবচেয়ে বড় কথা, সানন্দে টাটা মোটরসের টানে গুজরাটে পরবর্তী কালে এসেছে ফোর্ড ইন্ডিয়া, মারুতি সুজুকি, হোন্ডা। আর সিঙ্গুরে সেখানে পড়ে রয়েছে ধূ ধূ জমি।

Latest Videos

সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রাম আন্দোলনের উপর ভর করেই এই রাজ্যে বামেদের সরিয়ে ক্ষমতার তখ্‌তে বসেছিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কারখানার জন্য নেওয়া ওই জমিতে চাষাবাদ করা যাবে কি না, তা না দেখেই তড়িঘড়ি সিঙ্গুর আইন এনে জমি ফেরানোর সিদ্ধান্ত নেন মমতা। আর চালু করেন চাল-গম-ভাতার সিঙ্গুর প্যাকেজ। এদিকে, জমি নিয়ে মামলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। ২০১৬ সালে সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয়, সিঙ্গুরের জমি ইচ্ছুক-অনিচ্ছুক নির্বিশেষে চাষিদের ফিরিয়ে দিতে হবে। এক ধাপ এগিয়ে ওই জমি চাষযোগ্য করে কৃষকদের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলেন মমতা। নিজে হাতে সর্ষে বীজ ছড়িয়ে ওই জমিতে চাষের সূচনাও করেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু এখনও সম্পূর্ণ ভাবে চাষাবাদের যোগ্য হয়নি সেই জমি।  চাষিরা এই নিয়ে বারবার অভিযোগ করার পরেও হাত গুটিয়ে বসে থাকে মমতার সরকার। চাষিদের বক্তব্য যে ২২৬ একর জমিতে কারখানার কাজে হাত পড়েনি, সেখানেই কেবলমাত্র চাষ করা যাচ্ছে। বাকি জমি নিষ্ফলা হয়ে গিয়েছে।  
২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ফের সিঙ্গুর থেকে তৃণমূলের  প্রার্থী হন রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। ৪৯ শতাংশ ভোট পেয়ে জিতে যান তিনি। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বামপ্রার্থী রবীন দেব। তিনি ৩৯ শতাংশ ভোট পান। বিজেপির সৌরিন পাত্র ৭ শতাংশ ভোট পেয়ে ছিলেন তিন নম্বরে।

২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে আচমকাই সেই রাজনৈতিক সমীকরণ বদলে যায়। হুগলির বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায় ৪৭ শতাংশ ভোট পান সিঙ্গুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে। তৃণমূলের বিদায়ী সাংসদ  রত্না দে নাগ সিঙ্গুর থেকে পেয়েছিলেন ৪২ শতাংশ ভোট। আর বামেদের ভোট কমে গিয়ে দাঁড়ায় মাত্র ৯ শতাংশে। ভোটের ফল বেরনোর পরেই নড়েচড়ে বসেন তৃণমূল নেতৃত্ব। এলাকায় জনসংযোগের জন্য নানারকম কর্মসূচি নেয় তারা। কিন্তু স্থানীয় লোকজন ততদিনে ক্ষেপে দিয়েছে। সিঙ্গুরের এক চাষি বলেন ‘ না হল শিল্প, না হচ্ছে চাষাবাদ। আমরা খাব কী। ভিক্ষার টাকা চাই না। আমরা এখানে কারখানা চাই।’

"

২০২১ সালে বিধানসভা ভোটের প্রাক্কালে সিঙ্গুর ইস্যু নিয়ে বিরোধীরা সরব হওয়ার পর ওখানে অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক তৈরি করার কথা ঘোষণা করেছেন মমতা। বিরোধীরা তাতে আরও রেগে গিয়েছে। বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের দাবি, ‘এতদিন পরে মমতার চৈতন্য হয়েছে যে ওই মাটি আর চাষের উপযুক্ত নেই। তাই অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রি করার কথা বলে মানুষকে ধন্দে ফেলছে তৃণমূলের সরকার।’ হুগলির বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘সিঙ্গুর শিল্প চেয়েছিল। উনি তা হতে দেননি। এক সময় সিঙ্গুরে সর্ষে বীজ ছড়িয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এখন তার ঝাঁঝ ভালভাবেই টের পাচ্ছেন।’ লকেটের আশ্বাস, বিজেপি ক্ষমতায় এলে সিঙ্গুরে শিল্প করে দেখিয়ে দেবে।
আশায় মরতে চায় না চাষা। আশায় বাঁচতে চায়।

Share this article
click me!

Latest Videos

লুকিয়ে আছে জঙ্গলে, যে কোন মুহূর্তে লোকালয়ে ঢুকতে পারে বাঘ! Tiger spotted in Kultali | Bangla News
বাংলাদেশ ইস্যুতে চুপ কেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী? দেখুন কী বলছেন সুকান্ত মজুমদার
Bangla News Live : মোদীকে চরম হুঁশিয়ারি দিলেন সারজিস আলম | PM Modi | Sarjis Alam
Mamata Banerjee Live: অ্যালেন পার্কে ক্রিসমাস ফেস্টিভ্যালের উদ্বোধনে মমতা, দেখুন সরাসরি
ব্যবসায় অশান্তি! সম্পর্ক তলানিতে, এমন কাণ্ড ঘটবে কেউ বুঝতেই পারেনি | Hooghly News Today