শুভেন্দু ২.০ , নতুন পরিচয়ে অধিকারী পরিবারের ছেলেকে দেখছে নন্দীগ্রাম

  • রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান শুভেন্দু
  • এবার মমতার প্রতিপক্ষ তিনি 
  • কংগ্রেস ঘরনায় বড় হয়েছেন তিনি 
  • স্বাধীনতা আন্দোলনেও যুক্ত ছিল অধিকারী পরিবার 

Asianet News Bangla | Published : Mar 19, 2021 11:52 AM IST / Updated: Mar 19 2021, 09:09 PM IST

সত্যের খাতিরে বলে নিতেই হবে, যে তৃণমূল সুপ্রিমো তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এবারের নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বী, ঐতিহ্যগতভাবে দেখতে গেলে, রাজনৈতিক ইতিহাসের ক্ষেত্রে, তাঁর থেকে সম্ভবত এগিয়েই থাকবেন। মমতা বলতে পারেন, রাজনীতিতে তিনি সেলফ মেড। সে কথায় দ্বিরুক্তি না করা যেতে পারে। কিন্তু শুভেন্দু অধিকারী, যাকে বলে আক্ষরিক অর্থেই রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। 

শুভেন্দু আদতে কংগ্রেসের। যাঁদের কংগ্রেসি ঘরানার রাজনীতিবিদ বলা হয়, তাঁদের মধ্যে বাংলায় অন্যতম মুখ শুভেন্দু অধিকারী। শুভেন্দুর বাবা শিশির অধিকারী কাঁথি পুরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন ২৫ বছর ধরে। অধিকারী পরিবার মেদিনীপুরের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম যোগদানকারী। এবং তাঁরা ধনী পরিবারও বটে। শিশির অধিকারী ছিলেন দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। 

এ হেন শিশিরপুত্র শুভেন্দু নিজে প্রথম ও দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের আমলের সাংসদ। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের এম এ শুভেন্দুর জন্ম ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে। শুভেন্দু তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে ছিলেন জন্মলগ্ন থেকেই। তাঁর নাম মেদিনীপুর ও বাংলার বাইরে ছড়াতে শুরু করেছিল ২০০৭ সাল থেকে। জমি অধিগ্রহণ নিয়ে নন্দীগ্রাম যখন ফুটতে শুরু করে, সেই সময় থেকেই তিনি আন্দোলনের পুরোভাগে। উইকিপিডিয়া তন্নতন্ন করে খুঁজেও মিলবে না, ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির কোন পদে তিনি ছিলেন, কিন্তু সমস্ত রেফারেন্সই দেখিয়ে দেবে, শুভেন্দু ছিলেন ওই কমিটির নেতৃত্বে। এরই মধ্যে অভিযোগ উঠেছিল, নন্দীগ্রামে বাম সরকার তথা সিপিএমের বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য মাওবাদীদের অস্ত্রের জোগানদার ছিলেন এই কংগ্রেসি পরিবারের সন্তান। 

ফলে ২০০৯ সালের লোকসভা ভোটে, নন্দীগ্রাম যে ভোটের অন্যতম ইস্যু, আর বাংলা ছেয়ে যাচ্ছে পরিবর্তনের স্লোগানে, সেবারে, দোর্দণ্ডপ্রতাপ লক্ষ্মণ শেঠকে প্রায় পৌনে দু লক্ষ ভোটে হারাতে শুভেন্দুর কোনও অসুবিধাই হল না। 

নন্দীগ্রামে শুভেন্দুর সাফল্য ও তাঁর বেপরোয়া মনোভাবে যারপরনাই খুশি হয়েছিলেন যিনি, তিনি এখন শুভেন্দুর পতন চান। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুভেন্দুকে জঙ্গল মহলে তৃণমূল কংগ্রেসের পর্যেবক্ষক নিযু্ক্ত করেছিলেন। অর্থাৎ নিজের জেলা পূর্ব মেদিনীপুর ছাড়াও শুভেন্দুর কাছে ছিল পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের সময়ে সাংসদ ছিলেন শুভেন্দু। তাঁকেই নন্দীগ্রামের টিকিট দিয়েছিলেন মমতা। অনায়াস জয়ের পর তমলুকের সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দেন শুভেন্দু। দ্বিতীয় মমতা মন্ত্রিসভার তিনি ছিলেন পরিবহণমন্ত্রী। 

এবার কুরুক্ষেত্র নন্দীগ্রামে। আরও একবার। হিসেবগুলি পাল্টে গিয়েছে কেবল। রাজনীতিতে এরকম হয়, এ কথা যাঁরা বলছেন, তাঁরা শুধু একটা হিসেব মেলাতে পারছেন না। সেটা শুভেন্দুর হিন্দু কার্ড। মাত্র কয়েক বছর আগে, নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময়ে যে শুভেন্দু দুই সম্প্রদায়ের মানুষের চোখের মণি হয়েছিলেন, যাঁকে সামনে রেখে ১৪ মার্চ কোরাণ পাঠ আর গৌরাঙ্গপুজো হয়েছিল এক সঙ্গে, সেই মানুষটির এ হেন বদল নিয়ে এলাকার মানুষ কিঞ্চিৎ দ্বিধাগ্রস্ত। শুভেন্দু, অধিকারী পরিবারের সন্তান, হয়ত এ পরিস্থিতিকেও নিজের অনুকূলে আনতে সমর্থ হবেন। 
 

Share this article
click me!