লিজা ঠিক করে এতদিন যখন পরীক্ষা দিয়েছেন তখন শেষ পরীক্ষাও তিনি দেবেন। তাই তাঁর জন্য হাসপাতালেই পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। তার ফলে তিনদিনের ছেলেকে কোলে নিয়ে হাসপাতালের বেডে বসেই পরীক্ষা দেন তিনি।
এতদিন রাজ্যে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা চলছিল। এই পরীক্ষাকে ছাত্রজীবনের দ্বিতীয় বড় পরীক্ষা হিসেবে ধরা হয়। আজই ছিল উচ্চ মাধ্যমিকের শেষ পরীক্ষা। এদিকে শেষ পরীক্ষা দেওয়ার দু'দিন আগেই পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। কিন্তু, তা বলে তিনি পরীক্ষা দেবেন না এটা কখনও হয়! তাই সন্তানকে কোলে নিয়ে হাসপাতালের বেডে বসেই পরীক্ষা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। তাঁর এই মনের জোর দেখে খুশি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও। ঘটনাটি মালদহের চাঁচলের।
আজ ছিল উচ্চ মাধ্যমিকের রাষ্ট্রবিজ্ঞান পরীক্ষা। আর পরীক্ষার্থীর নাম লিজা পারভিন। হরিশ্চন্দ্রপুর ১ ব্লকের তুলসিহাটা উচ্চ বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থী তিনি। গর্ভবতী অবস্থাতেই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। কিন্তু, পরীক্ষা পুরোপুরি শেষ হওয়ার আগেই তাঁর প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয়ে যাবে তা তিনি ভাবতেই পারেননি। সোমবার দুপুরে আচমকাই তাঁর প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয়। এরপর তাঁকে চাঁচলের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে সেখানেই পুত্র সন্তানের জন্ম দেন তিনি। তবে পরীক্ষা দিতে মনবল হারাননি লিজা।
আরও পড়ুন- মাধ্যমিকের প্রথম দিনেই সন্তান প্রসব, কোলে মেয়ে নিয়ে পরীক্ষা দিলেন সদ্য মা
লিজা ঠিক করেন এতদিন যখন পরীক্ষা দিয়েছেন তখন শেষ পরীক্ষাও তিনি দেবেন। তাই হাসপাতালেই তিনি পরীক্ষা দেবেন বলে ঠিক করেন। আর সেই মতো তাঁর জন্য হাসপাতালেই পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। তার ফলে তিনদিনের ছেলেকে কোলে নিয়ে হাসপাতালের বেডে বসেই পরীক্ষা দেন তিনি। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁর পরীক্ষার সমস্ত রকম ব্যবস্থা করে। পুলিশি পাহারায় ও বিদ্যালয়ের একজন পরিদর্শকের তত্ত্বাবধানে নির্বিঘ্নে পরীক্ষা দেন লিজা। আর তাঁর এই মনোবল দেখে খুশি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন- ফের কী রাজ্যে মাথাচাড়া দিচ্ছে মাওবাদ? একের পর এক মাওবাদী পোস্টারে বাড়ছে আশঙ্কা
এ প্রসঙ্গে বিদ্যালয় পরিদর্শক নুরুল ইসলাম জানান, বিদ্যালয় এর তরফ থেকে পরিদর্শক হিসেবে তাঁকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। আর সেখানে লিজার পরীক্ষা দেওয়ার জন্য সমস্ত রকম ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে। বুধবার পুলিশি পাহারায় এবং বিদ্যালয় পরিদর্শক এর তত্ত্বাবধানে নির্বিঘ্নে পরীক্ষা দিতে দেখা যায় তাঁকে। বিদ্যালয় থেকে অবশ্যই সমস্ত রকম পরীক্ষার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে কিন্তু তাঁর মনোবলের জেরেই এই পরীক্ষা দিতে পারছেন তিনি। যা সত্যিই অত্যন্ত প্রশংসনীয়। এই রকম পরিস্থিতিতে নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে হাসপাতালের বেডে বসে পরীক্ষা দেওয়া ততটা সহজ বিষয় নয়, বলেই জানালেন তিনি।
আরও পড়ুন-অবশেষে এল বৃষ্টির পূর্বাভাস, কিন্তু তারজন্য এখনও অপেক্ষা করতে হবে দক্ষিণবঙ্গবাসীকে
তবে এই ঘটনা এই প্রথম নয়। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রেও একাধিকবার দেখা গিয়েছে। বহু পরীক্ষার্থী মা হওয়ার পর হাসপাতালের বেডে বসে পরীক্ষা দিয়েছিল। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুর ও মালদহের হরিশচন্দ্রপুরে এই ধরনের ঘটনা সামনে এসেছিল। একই ভাবে সন্তানের জন্মের পর হাসপাতালে সদ্যোজাতকে কোলে নিয়ে পরীক্ষা দিয়েছিল মায়েরা। যা একেবারেই সহজ কাজ নয়!